‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির কথা মনে পড়ে? পুলিশী অ্যাকশন ধাঁচের ওই ছবিটি ২০১৭ সালে ঢাকার চলচ্চিত্র অঙ্গনে হইচই ফেলে দিয়েছিল। ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য বানিয়ে সানী সানোয়ার সব মহলের দর্শকের কাছে বাহবা কুড়িয়েছিলেন। অর্জন করেছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার, পরে তিনি নিজেই নির্মাতা হন।
বাংলাদেশ পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের পুলিশ সুপার হয়েও ‘প্যাশন’-এর জায়গা থেকে ফিল্ম মেকার হয়েছেন তিনি। নির্দেশনা দেন ‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবির। এর দ্বিতীয় পার্ট ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ মুক্তি পেতে যাচ্ছে ১৩ জানুয়ারি। ইতোমধ্যে টিজার ও ট্রেলার দিয়ে সমালোচকদের নজর কেড়েছে।
‘ব্ল্যাক ওয়ার’ হবে গণ-সচেতনার ছবি, সেইসঙ্গে উঠে আসবে সক্ষমতার গল্প। পরিচালক সানী সানোয়ার বলেন, ‘মিশন এক্সট্রিম’ করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার ঠিক পরে মুক্তি দিয়েছিলাম। তখন বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী সেভাবে বড় আয়োজনের ছবিগুলো মুক্তি পায়নি। ওই সময় যে সাড়া পেয়েছিলাম সেটা আমার প্রত্যাশার তুলনায় কম ছিল। কিন্তু আশা করছি ‘ব্ল্যাক ওয়ার’-এ দর্শকের প্রত্যাশা এবং আমাদের প্রত্যাশা দুটোরই প্রতিফলন ঘটবে।
‘ব্ল্যাক ওয়ার’ ছবিটিও পুলিশি অভিযানের ঘটনা নিয়ে নির্মিত। মুক্তির আগে রাজধানীর নিকেতনের অফিসে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ নিয়ে আড্ডায় বেশকিছু বিষয়ে কথা বলেন সানী সানোয়ার। পুলিশের এই গল্প নিয়ে একাধিকবার সিনেমা নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কপ থ্রিলার গল্পের ছবিগুলো জনপ্রিয়। বাংলাদেশে এ ধরনের গল্পের ছবি তৈরির ক্ষেত্রে ইক্যুপমেন্টের যথেষ্ট অভাব আছে। ‘মিশন এক্সট্রিম’-এ যত ধরনের পুলিশি ইক্যুপমেন্ট দেখা গেছে কোনোটিই পুলিশের কাছ থেকে নেওয়া হয়নি। প্রতিটি জিনিসই বিদেশ ও দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে সংগ্রহ করেছি।

জঙ্গিবাদ দমন ও পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের চৌকশ এই কর্মকতা বলেন, এ ধরনের গল্প নিয়ে ছবি করতে হলে গবেষণা করতে হবে, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান থাকতে হবে। পুলিশের সরঞ্জাম ও সাহায্য যে মাস্ট লাগবে ব্যক্তিগতভাবে এটা আমি সমর্থন করি না। উদাহরণ হচ্ছে ‘মিশন এক্সট্রিম’ এবং ‘ব্ল্যাক ওয়ার’। এই দুটো ছবি বানাতে গিয়ে আমি পুলিশের সহযোগিতা নেইনি। দু-একটি দৃশ্যর জন্য খুব সামান্য সহযোগিতা নিয়েছি।
”টিভি বা ওটিটিতে এসব কনসেপ্ট নিয়ে যারা কাজ করছে ব্যক্তিগতভাবে আমি তাদের সবসময় সাপোর্ট দিচ্ছি। আগে এই কনসেপ্ট নিয়ে ছবি বানালে যেসব ভুলভ্রান্তি থাকতো এখন অনেকটা কমে গেছে। অস্ত্র যানবাহন বা অনেককিছু আমাদের সিনেমা থেকে দেখে অনেকের ‘মেক সেন্স’ তৈরি হচ্ছে।”
২৫ তম বিসিএস-এ পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরী করেও কেন ফিল্ম মেকিং-এ আগ্রহ হলেন? উত্তরে সানী সানোয়ার খুশি হয়ে বললেন, স্টুডেন্ট লাইফ থেকে প্রচুর সিনেমা দেখতাম। পুলিশে আসার পর ফিল্ম লাভার হিসেবে বিভিন্ন দেশে পুলিশ কেন্দ্রিক সিনেমা দেখে রোমাঞ্চকর অনুভূতি হতো। তখন মনে হতো, কেন আমাদের দেশে এসব নিয়ে সিনেমা হচ্ছে না?
সিনেমা নিয়ে আগে থেকে ঝোঁক ও সম্মুখ ধারণা থাকায় সেই সঙ্গে পুলিশে কাজ করে অনেক অভিজ্ঞতা থাকায় ব্যক্তিগতভাবে সিনেমা নির্মাণে আসি, বলছিলেন সানী সানোয়ার।
‘সিনেমায় আমি পুলিশের গল্পগুলো এন্টারটেইনিংভাবে দর্শকদের কাছে তুলে ধরি। বাংলাদেশ পুলিশ কিংবা সরকারের কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নয়, পুরোপুরি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই কাজটি করি। যদি কোনো সময় মনে করি সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজন, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে আমি চেয়ে থাকি। কখনও সহযোগিতা পাই, আবার কখনও পাইনা। আমার উদ্দেশ্য একটাই সেটা পরিষ্কার, আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি গুড মুভি নির্মাণ করতে চাই।’
পুলিশে চাকরী করে সমান্তরালভাবে সিনেমা নির্মাণের সুযোগ থাকে? সানী সানোয়ার বলেন, অবশ্যই আছে। সরকারী বিধিমালায় একজন কর্মজীবী অন্য সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন। তিনি যদি চাকরির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেন, সেটা ওয়েলকামিং ওয়েতে দেখা হয়। এটা আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট। ছোটবেলা থেকে লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ লেখার পর সেই অভিজ্ঞতা থেকে ফিল্ম নিয়ে কাজ করাটাই খুব আরামদায়ক মনে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়, ভবিষ্যতে অনেক ভালো কিছু করার সুযোগ আছে বলেই বিধায় ফিল্ম নির্মাণ করছি।
এই ভাবনা থেকেই ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এ যুক্ত হয়েছিলেন সানী সানোয়ার। তার কথা, প্রথম ছবিতেই মিরাকল ঘটে যায়। দীপঙ্কর দীপন পরিচালক হিসেবে পরিচিতি পায়। আমার পরিচিতির পাশাপাশি অর্জিত হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার। তবে সুখের পাশাপাশি মিশ্র অনুভূতি তৈরি হয়েছে সানী সানোয়ারের। তিনি বললেন, একজন নিউ ফিল্ম মেকারকে স্ট্রাগলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। শিল্প হিসেবে ঘোষণা থাকলেও শিল্পের সুযোগসুবিধা এখনও সবখানে বিরাজমান নয়। নানা রকম সীমাবদ্ধতা ফেইস করতে হয়। আসলে নতুনদের কাছে এখন ফিল্ম মেকিং যতটা পেশা, তার বেশী নেশা!
পুলিশের বীরত্বগাঁথা গল্পের বাইরে অন্য কোনো সিনেমা নির্মাণ করবেন কিনা জানতে চাইলে সানী সানোয়ার বলেন, ব্যক্তিগতভাবে সাইন্স ফিকশন মুভি আমার খুবই পছন্দ করি। যার মধ্যে দেশপ্রেম থাকবে। আগামীতে ‘চোরের গ্রাম’ নামে একটি ছবি নির্মাণ করবো, যেখানে পুলিশের অভিযান নিয়ে কিছু আসবে না। পুলিশের অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করেছিলাম, এখন আমি ধীরে ধীরে সিনেমার গল্পে অন্যান্য শাখাতে কাজ শুরু করবো।
জানুয়ারিতেই দুই বাংলার জনপ্রিয় একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য ওয়েব কনটেন্ট নির্মাণ করতে যাচ্ছেন বলে জানালেন সানী সানোয়ার। কিছুটা বিধিনেষেধ থাকায় অন রেকর্ড তিনি এই ওয়েব কনটেন্ট নিয়ে কিছু জানাতে রাজি হননি। পরের কাজ প্রসঙ্গে জানালেন, এরপরেই সুপারস্টার শাকিব খানকে নিয়ে ‘শের খান’ ছবি বানাবেন।
তিনি বলেন, ”শের খান’ নিয়ে আমাদের স্বপ্ন অনেক বড়। এখন প্রি-প্রডাকশন চলছে। সফলভাবে সিনেমা নির্মাণ করতে হলে টেকনিক্যালি অনেক উন্নত হতে হয়। একটি স্ট্রং টিম নিবেদিত হয়ে এতে কাজ করছে। শাকিব খান খুবই অভিজ্ঞ একজন মানুষ। আমার গল্প এবং শাকিব খানের বুদ্ধি অভিজ্ঞতা সবকিছুর সংযোজন এই শের খান-এ পড়বে। আমি বিশ্বাস করি, ২০২৩ সালের অন্যতম একটি ইমপ্যাক্টফুল সিনেমা হবে ‘শের খান।”