চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আর্জেন্টিনা-অস্ট্রেলিয়া: কে খেলবে কোন কৌশলে

ফুটবলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হচ্ছে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ও বিভিন্ন পদ্ধতি মেনে এই খেলাটি খেলা সম্ভব। বিষয়টি যেমন নির্ভর করে কোচের উপর, তেমনি খেলোয়াড়রা কৌশলগুলোর সাথে কতটা খাপ খাওয়াতে পারছে, সেটিও অত্যন্ত জরুরি।

দলের সেট-আপ নানা সময় পাল্টে যায় প্রতিপক্ষের জালে বল ঢোকানোর জন্য। এখানে যেমন বিভিন্ন ফরমেশনের দেখা মেলে, একই সাথে দেখা যায় দল কীভাবে ম্যাচের যেকোনো মুহূর্ত বিচার করে সঠিক সিদ্ধান্তটি নেওয়ার ক্ষমতা দেখায়। আর্জেন্টিনা আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কী করতে পারে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়াই বা এই শক্তিশালী দলটির বিরুদ্ধে কতোটা প্রস্তুত ডেনমার্কের বিপক্ষে দারুণ জয়ের পর?

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

বক্স টু বক্স মিডফিল্ডারদের স্কিলের বিষয়টি থাকবে আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রে। বিশেষ করে তাদের মিড আর ফ্রন্ট থ্রি খুবই ক্ষিপ্র, খুবই মেধাবী। মেসি প্রায়ই ফলস নাইন ধরে খেলবেন। এটি প্রতিপক্ষের জন্য বিশাল ঝামেলা। আর উইং অ্যাটাকগুলোও প্রখর করে তুলতে সহায়তা করবেন, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। টাচলাইন থেকে আসা ক্রসগুলো আর্জেন্টিনার জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবে। যদিও ডি মারিয়া আজ খেলবেন কি না তা এখনো জানা যায়নি।

শেষ খবর পাওয়া গেছে, ইনজুরি তাকে ভোগাচ্ছে। আর্জেন্টিনার সেই মানের স্ট্রাইকার রয়েছে যাদের গতি এবং শরীরের ছন্দ ঈর্ষণীয় যা অস্ট্রেলিয়ার জন্য খুবই বেদনাদায়ক হতে পারে। তবে আর্জেন্টিনা ক্ল্যাসিক ৪-৪-২ খেলছে না, এতে সন্দেহ নেই। মিড আর ফ্রন্ট মিলিয়ে এই সিক্স যেমন উপর দিকটায় চাপ দেবে, ঠিক একইভাবে রক্ষণভাগের চারজন হাই প্রেসিং ফুটবল খেললে আর মিড ও ফ্রন্টের অন্তত চারজন ইন্টারসেপ্ট করলে অস্ট্রেলিয়াকে পজেশনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে দেখা যেতে পারে। আর্জেন্টিনার মিডফিল্ড অত্যন্ত পরিশ্রমী।

তারা খুব ছোট জায়গায় যেমন বলের আদান-প্রদান করতে পারেন, ঠিক একইভাবে ফুলব্যাকদের সাপোর্ট-ও করতে জানেন। সাথে তাদের বাড়তি শক্তি হচ্ছে লাইনগুলোতে বল ছাড়া এবং দুর্দান্ত সব কাট ব্যাক করার ক্ষমতা। এইটিন ইয়ার্ডের বাইরে প্রতিটি ইঞ্চি মেসির ফ্রি-কিকের জন্য। তাই ওসব এলাকায় অজিরা যদি ফাউল করে বসে তাহলে কিপারের ঘাম ঝরবে, সন্দেহ নেই।

সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। তাদের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডের কোনো প্রয়োজন নেই। ইউরোপিয়ান ফুটবলে আমরা টিকিটাকার শুরুটা দেখলেও ল্যাটিন আমেরিকার এই অভিজাত দলটি আজকের ম্যাচে টিকিটাকার আশ্রয়-ও নেবে।

ডিফেন্সের বল কন্ট্রোল যেহেতু ভালো আর মিডফিল্ড-স্ট্রাইকারদের যোগাযোগ যেহেতু অসাধারণ, তাই মনে হয় খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ওয়ান-টু-ওয়ান এবং রিসিভিং-এ আর্জেন্টিনাই এগিয়ে থাকবে। এক্ষেত্রে রক্ষণভাগও অনেকটা উঠে খেলে পুরো অ্যাটাকে সহযোগিতা করতে পারে। তখনই আমরা এই ওয়াল পাসগুলো দেখতে পারবো বলে আশা করছি।

অস্ট্রেলিয়া যদি কোনো কারণে ম্যাচে এগিয়ে যায় তাহলে তাদের কৌশল হবে পার্ক দ্য বাস। মানে সবাই মিলে ডিফেন্স-এ। এটাই স্বাভাবিক ছোট দলগুলোর জন্য। তবে অস্ট্রেলিয়া যদি খুব বেশি অ্যাটাকে যেতে চায়, তাহলে হুট করে কাউন্টার অ্যাটাক করে বসতে পারে আর্জেন্টিনা। কারণ তাদের সলিড ডিফেন্স শুধু দৃঢ়ই না, অনেক বেশি গোছানো। যারা খুব দ্রুত ডিপ মিডফিল্ডারকে বল ঠেলে দিলেই উইংগারদের বেশ স্পেস নিয়ে আক্রমণ করতে দেখা যেতে পারে। প্রতিপক্ষ তাদের পিঠ ঘোরানোর আগেই, অর্থাৎ রিসেট হওয়ার আগেই প্রায় তিন থেকে চারজন এমনকী পাঁচজনকেও বল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার হাফে ছুটে যেতে দেখতে পারি আমরা।

অস্ট্রেলিয়া অবশ্য একজন একক অ্যাটাকারকে উপরে রেখে খেলাতে পারে। তবে সেটা খুব একটা কাজে আসবে না। ওভার-ডিফেন্সিভ হলে বেশিক্ষণ প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানো দুষ্কর হয়ে পড়ে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার উইংগারেরা যদি ডিফল্ট ডিফেন্স হয়ে যায়, তাহলে তো চাপ সামলানো আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

কাউন্টার অ্যাটাকটাকেই হয়তো অস্ট্রেলিয়ানরা বেছে নিতে চাইবে। আর আর্জেন্টিনার লক্ষ্যই থাকবে পজেশন ধরে ফেলা শুরুতেই। লং বল গেম কোনো দলই খেলবে না বলে মনে হয়। কারণ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার যেহেতু আপাতদৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে না তাই ওই কৌশলে কোনো দলই যাবে বলে মনে হয় না। আর লং বল গেমে উইংগারদের উপর-ও বেশ চাপ পড়ে যায়, কারণ একইসাথে ডিফেন্স-ও করতে হয় আবার অ্যাটাক-ও সাজিয়ে মুখ্য ভূমিকা রাখতে হয়।

হ্যাঁ, এটি ঠিক আর্জেন্টিনা হাই প্রেসিং ফুটবল খেলবে। সেক্ষেত্রে ওটামেন্ডিকে সাবধানে খেলতে হবে। তার ফাউল করার বিষয়টি অনেকটাই ন্যাচারাল। বড় ধরনের ফাউল করে বসলে বিপদ। প্রতিপক্ষের ডিফেন্সিভ থার্ডে বা আর একটু উপরে আর্জেন্টিনার হাই লাইন আমরা দেখবো। কারণ যতো দ্রুত আর্জেন্টিনা প্রতিপক্ষের পা থেকে বল ছিনিয়ে নেবে ততো বেশি স্কোরিং সম্ভাবনা বাড়বে আর্জেন্টিনার।

কোনো গোল প্রেডিকশনে না গিয়ে বরং সাধারণ ম্যাচ প্রেডিকশনে আর্জেন্টিনাকে অবশ্যই এগিয়ে রাখছি। আর ১২০ মিনিটের ম্যাচে যদি খেলা গড়ায়, তাহলে শেষ দিকটা নাটকীয় হবে বলেই মনে হচ্ছে। তাই দম ধরে সঠিক খেলাটা খেলতে হবে মগজ দিয়ে। দুটি দলই মুখিয়ে আছে আজকের ম্যাচের জন্য। সেরা দলটিই জিতুক, এমনটাই প্রত্যাশা। দর্শক হিসেবে আমরাও মুখিয়ে আছি একটি দারুণ ম্যাচ উপভোগের জন্য।