‘জাতীয় দলের জন্য আগামীকালের ম্যাচটা হবে ম্যাচ অব দ্য ইয়ার। কয়েকদিন অনুশীলন করে আমরা খেলার জন্য প্রস্তুত। অবশ্যই এটা আমাদের জন্য বড় ম্যাচ। যেভাবেই হোক আমাদের জিততেই হবে।’
মালদ্বীপের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রথম রাউন্ডের হোম ম্যাচের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে দৃপ্ত কণ্ঠে কথাগুলো বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় খেলা মাঠে গড়াবে।
ফিফার পরিবর্তিত নিয়ম অনুযায়ী, অ্যাওয়ে গোলের নিয়ম বহাল নেই। তাই ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক জামাল জয় ছাড়া আরকিছুই ভাবছেন না।
‘হোম গ্রাউন্ডে মালদ্বীপ যখন খেলে, তখন ওরা খুবই শক্তিশালী। বাইরে খেলার ক্ষেত্রে ওদের কিছু দুর্বলতা আছে। ওদের আবহাওয়াটা অন্যরকম ছিল। মাঠে পানি দেয়া ছিল না। রুক্ষ মাঠে খেলতে আমাদের অসুবিধা হচ্ছিল। মূল সমস্যা ছিল, আমরা বল ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। কালকের ব্যাপারে কোনো অজুহাত দেয়া চলবে না। আমাদের জিততে হবে।’
‘এটা আমাদের হোম গ্রাউন্ড। এখানকার সবকিছু পরিচিত। দলে কিংসের ও শেখ রাসেলের খেলোয়াড়রা আছে, যারা এখানে খেলে অভ্যস্ত। আমাদের জন্য বিষয়টা ভালোই। অবশ্যই বড় সুবিধা। দারুণ একটা স্টেডিয়াম। সম্ভবত বাংলাদেশেরই সেরা স্টেডিয়াম।’
গতমাসে এএফসি কাপে গ্রুপপর্বে মালদ্বীপের ক্লাব মাজিয়া এফসির সঙ্গে খেলতে মালেতে গিয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। সেখানে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে পাঁচ ফুটবলারকে কিংস নিষিদ্ধ করে। জাতীয় দলের দরজাও আপাতত তাদের জন্য বন্ধ। তারকা গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো ও নিয়মিত গোল পাওয়া ফরোয়ার্ড শেখ মোরসালিন এই ম্যাচের জন্য টাইগার ডেরায় নেই।
নিষিদ্ধ ফুটবলারদের জায়গায় যারা সুযোগ পেয়েছেন, তাদের নিয়ে অবশ্য বেশ আশাবাদী জামাল। বললেন, ‘আমরা মনে করি যারা এসেছে ভালো করেছে। মিতুল দারুণ খেলেছে। কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ সেভ করেছে। শাকিল ভাই টপ পারফরম্যান্স করেছেন। ফাহিম কয়েকটা সুযোগ পেয়েছিল। সে নিজেও জানে আরও ভালো খেলতে পারে।’
সবশেষ আট ম্যাচের মধ্যে চারটিতে গোল পেয়েছেন মোরসালিন। স্কোর করার সামর্থ্য থাকা খেলোয়াড়টি দলে না থাকলেও তার বদলে সুযোগ পাওয়া ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের উপর ভরসাই রাখছেন জামাল।
‘মোরসালিন যখনই সুযোগ পেয়েছে, গোল করেছে। ফাহিম দুই-একটা গোল করলে আত্মবিশ্বাস পাবে। অবশ্যই পরিসংখ্যান মোরসালিনের পক্ষে আছে। তবে ফাহিমও অন্যতম সেরা পারফর্ম করা খেলোয়াড়। স্কোরের জন্য স্ট্রাইকারদের উপর চাপ তো আছেই। আসলে চাপ সবার উপরই থাকবে।’
মালদ্বীপের দুর্বলতা নিয়ে কাজ করলেও সেই কৌশল সাংবাদিকদের সামনে ফাঁস করতে চাইলেন না লাল-সবুজের দলের অধিনায়ক। কৌশল দেখাতে চান মাঠেই।
ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গোল হজম করা বাংলাদেশ দলের চিরাচরিত অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ম্যাচে ৮৭ মিনিটে হাসান নাজিমের লক্ষ্যভেদে হাভিয়ের ক্যাবরেরার শিষ্যরা হারতে বসেছিল। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে সাদ উদ্দিনের গোলে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে। বিষয়টি নিয়ে জামাল সাবলীল উত্তরই দিলেন।
‘ফিরে আসাটা আমাদের শক্তির জায়গা। গোল হজমটা দুর্ভাগ্য ছিল। তারেক বল বিপদমুক্ত করেছিল। কিন্তু সোহেলের গায়ে বল লেগেছিল। এরপর গোল হয়েছে। মাঠে আমাদের আসল চরিত্র ও শক্তির জায়গা দেখাতে পেরেছি।’
‘সাফে যেভাবে আমরা খেলেছি, তাতে ভালো ছন্দে আছি। এটা রাখতে হবে। যারা ফুটবল চেনে না, তারা বলেছে মালদ্বীপ আমাদের অনেক সামনে আছে। র্যাঙ্কিং দেখে বলে। আমরা জানি, মালদ্বীপের বিপক্ষে কোন স্তরে খেলতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কোচ ক্যাবরেরা জানালেন দলে কোনো ইনজুরি সমস্যা নেই। স্প্যানিশ কোচ বলছেন, ঘরের মাঠে ম্যাচের আগে সবকিছু ইতিবাচকই আছে। কালকের খেলা নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী।
‘তিন দিন হয়ে গেল ঢাকায় আসার, টানা অনুশীলন করছি। মালদ্বীপে প্রবল লড়াইয়ের পর আত্মবিশ্বাসী ও ইতিবাচক মানসিকতার ভেতরে আছে দল। হোম ম্যাচে দর্শকের সামনে ভালো করতে মুখিয়ে আছি। কালকের ম্যাচের জন্য সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।’
‘মালের সঙ্গে এখানকার পিচ আর কন্ডিশনের ফারাক আছে। পরিবেশ ভালো আছে, হোম গ্রাউন্ড, আশা করি আমাদের সাহায্য করবে। আশা করি কাল মাঠ দর্শকে ভরা থাকবে।’
স্কোয়াডে থাকা ডিফেন্ডার শাকিল হোসেন ও হাসান মুরাদ এশিয়ান গেমসে ভালো করায় তাদের প্রশংসা করলেন ক্যাবরেরা। নিয়মিত কয়েকজন ফুটবলারের অনুপস্থিতি নিয়ে খুব একটা ভাবতে নারাজ বাংলাদেশ কোচ।