রেফারির শুরুর বাঁশি বাজার পর থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে বসুন্ধরা কিংসকে কোণঠাসা করে ফেলেছিল ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। গোলপোস্টে ঐতিহ্যবাহী দলটির সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কিংসদের মেহেদী হাসান শ্রাবণ। দ্বিতীয়ার্ধে ছন্দ হারানো আকাশী-নীলদের বিপক্ষে চলে স্বাগতিকদের গোল উৎসব। তাতে ৪-০ গোলের জয়ে স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে উঠে গেছে কিংসবাহিনী।
শুক্রবার প্রথম সেমিফাইনালে রহমতগঞ্জকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কেটেছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ১৮ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জে সাদা-কালোদের বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নামবে কিংস।
শীতের বিকেলে কিংস অ্যারেনায় ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে দারুণ সুযোগ পায় আবাহনী। বল নিয়ে প্রায় ৪০ গজ দৌড়ে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নেন ওয়াশিংটন ব্রান্ডাও দস সান্তোস। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের গড়ানো শট গোলরক্ষককে পরাস্ত করলেও অল্পের জন্য পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
তিন মিনিট পর বক্সের কাছ থেকে নেয়া ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জনাথন ফের্নান্দেসের ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিকে বল ফিস্ট করে কিংসদের জাল অক্ষত রাখেন মেহেদী হাসান শ্রাবণ।
বাঁ-প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা মিগেল দামাসেনোর শট দশম মিনিটে ঠেকান পাপ্পু হোসেন। খানিক পর আবাহনী গোলরক্ষক রবসন রবিনহোর শট এক হাতে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। পাল্টা আক্রমণে ১৬ মিনিটে আবারও গোল বঞ্চিত হয় আবাহনী। ক্ষিপ্রগতিতে দৌড়ে যাওয়া ওয়াশিংটনের ডান পায়ের শট ঠেকান শ্রাবণ।
ম্যাচের ২১ মিনিটে অতর্কিত আক্রমণে পাপ্পুকে একা পেয়ে যান শেখ মোরসালিন। আবাহনী গোলরক্ষককে কাটিয়ে নেন প্লেসিং শট। ফাঁকা জালের কাছে শেষ মুহূর্তে পৌঁছে দুর্দান্তভাবে বল ক্লিয়ার করেন জনাথন। নিশ্চিত গোলের সুযোগ বসুন্ধরার হাতছাড়া হয়।
কিংসদের ঘাম ছুটিয়ে একের পর এক আক্রমণ গড়তে থাকে আকাশী-নীল দলটি। ২৫ মিনিটে এমেকার শট শ্রাবণ দারুণভাবে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান। খানিক পর জনাথনের শট শ্রাবণ পা দিয়ে ঠেকান। ফিরতি বলে এমেকার হেড অল্পের জন্য জাল খুঁজে পায়নি।
রাকিব হোসেনের ক্রসে বক্সে হেড নিতে গিয়ে ৩০ মিনিটে সাদ উদ্দিনের সঙ্গে রিয়াদুল হাসান রাফির সংঘর্ষ ঘটে। রাফি চোট পাওয়ায় খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন সাদ উদ্দিন। ৩৮ মিনিটে মিগুয়েলের ক্রসে বল পাওয়া ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ডরিয়েন্টন ফাঁকা পোস্টে জড়াতে ব্যর্থ হন।
প্রতিপক্ষ বক্সে বল নিয়ে ঢুকে যাওয়া রাকিব ৪২ মিনিটে আবাহনী মিডফিল্ডার রবিউল হাসানকে ফাউল করেন। রেফারি পকেট থেকে হলুদ কার্ড বের করে রাকিবকে দেখান। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মোরসালিনের পরিবর্তে রফিকুল ইসলামকে নামান কিংস কোচ অস্কার ব্রুজন।
বিরতির পর পাল্টাতে থাকে ম্যাচের দৃশ্যপট। ৪৮ মিনিটে ভাঙে ডেডলক। মাঝমাঠ থেকে আক্রমণে ওঠা মিডফিল্ডার মোহাম্মাদ সোহেল রানা ডানদিকে থাকা মিগেল দামাসেনোর সঙ্গে বল দেয়া-নেয়া করেন। পরে বক্সে সোহেল বাঁ-পায়ের দুরন্ত শটে কিংসদের এগিয়ে দেন। চলতি মৌসুমে বসুন্ধরায় খেলতে আসার পর এটি সোহেলের প্রথম গোল।
পাঁচ মিনিট পর ঘরের মাঠের দর্শকদের আনন্দের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন ডরিয়েন্টন। মাঝ মাঠ থেকে রবসনের বাড়ানো বল পান দামাসেনো। তার কাছ থেকে বল পেয়ে ক্রস করেন রাকিব। ফাঁকা জাল পেয়ে ডরিয়েন্ট আলতো টোকায় বল জালে জড়িয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন।
কিংস ২-০তে লিড পাওয়ার পর হয়ে ওঠে আরও আগ্রাসী। ৫৫ মিনিটে রাকিবের শট জালের বাইরে না লাগলে বসুন্ধরা তখনই তৃতীয় গোলের দেখা পেত। ৬০ মিনিটে ফরোয়ার্ড রহিম উদ্দিনের জায়গায় এনামুল ইসলাম গাজীকে নামান আবাহনীর কোচ ডিয়েগো আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি।
দ্বিতীয়ার্ধে খেই হারিয়ে ফেলা আবাহনীর হয়ে ৭৩ মিনিটে রয়েলের শট লক্ষ্যভেদ করেনি। পাশের জালে বল জড়ায়। মিনিট দুয়েক পর গোলের সন্ধানে থাকা ঢাকা আবাহনী আনে জোড়া পরিবর্তন। ডিফেন্ডার আলমগীর মোল্লার জায়গায় নামেন ফরোয়ার্ড নাবিন নেওয়াজ জীবন। মেহেদী হাসানের পরিবর্তে মাঠে আসেন রবিউল হাসান।
আবাহনীর শেষ আশাটুকু মাটিতে মিশিয়ে দেন মিগুয়েল দামাসেনো। ৭৭ মিনিটে সাদ উদ্দিনের পাসে বল পেয়ে হেডে বল জড়ান এ ব্রাজিলিয়ান। ৮২ মিনিটে ডরিয়েল্টনের কিক পা দিয়ে ঠেকান পাপ্পু।
শেষদিকে রবসনকে বক্সে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড় বাধা দেয়ায় রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন। এসময় আবাহনীর ফুটবলাররা রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়ান। স্পট কিক থেকে রবসন ৮৯ মিনিটে নিশানাভেদ করে আবাহনীর কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন।