বছরের পর বছর লোকসান গুনছে চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি)। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে ২২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারি গত তিনমাসে কোনো কানাকড়ি বেতন পায়নি। এমন অভিযোগ করলেন এফডিসির কর্মচারি লীগের সাধারণ সম্পাদক কলাকুশলী ও কর্মচারী শ্রমিকলীগের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব।
তিনি বলছেন, তিন মাস বেতন না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
চ্যানেল আই অনলাইনকে আহসান হাবিব বলেন, জানুয়ারি থেকে মার্চ কোনো মাসের বেতন পাইনি। ২২৪ জন কর্মচারী প্রত্যেকে মানবেতর দিন কাটাচ্ছি।
কবে বেতন ভাতা হবে এ নিয়ে প্রত্যেক কর্মচারীর মধ্যে অনিশ্চয়তা কাজ করে উল্লেখ তিনি বলেন, বেতন না হওয়ায় চরম বিপাকে এফডিসির তৃতীয় ও চতুর্থশ্রেণীর কর্মচারীরা। তাদের পক্ষে আহসান হাবিব বলেন, বাড়ি ভাড়া আটকে আছে, বাজার নেই, মুদি দোকানে বাকি করে খেতে হচ্ছে।
গত কয়েকমাস ধরে এফডিসি কর্তৃপক্ষ তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বেতনের জন্য অনুদান চাইলেও কোনো লাভ হয়নি। বাধ্য হয় এফডিসির কলাকুশলী ও কর্মচারিরা বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সকাল ১০টায় এমডি বরাবর বেতন ভাতার দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান করবে বলে জানা যায়।
কলাকুশলী ও কর্মচারী শ্রমিকলীগের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত, কিন্তু বেতন আসে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। দুদিন আগে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠিতে জানিয়েছে, নিজস্ব ইনকাম দিয়ে চলতে। এরপর আমরা আরও হতাশ হয়েছি। কারণ এফডিসির আয় নেই।
“নিজস্ব আয়ের উৎস খুঁজে বাস্তবায়ন করে চলার আগেই আমরা হয়তো মারা যাব। তাহলে আমাদের পূর্বের বেতনের কী হবে? না হলে এই অবস্থা চললে কদিনের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মতো এফডিসির স্টাফদেরও রাস্তায় নেমে বেতনের জন্য আন্দোলন করা ছাড়া উপায় থাকবে না।”
আগে এফডিসির নিজস্ব আয় দিয়ে কর্মচারীর বেতন ও উৎসবে ভাতা দেয়া হত। এফডিসির জনযংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়া জানান, ২০১২ সালের পর থেকে মাসিক কর্মচারীদের যে বেতন পরিশোধ করা হয় সেটি এফডিসির আয়ের চেয়ে অনেক বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যোগান নেয়া হতো।
“গত তিনমাস ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা দেওয়া হয়নি। এ কারণে এমডি থেকে ঝাড়ুদার আমরা কেউ বেতন পাচ্ছি না। রমজান মাস চলছে, সামনে ঈদ বোনাস ও বৈশাখী ভাতা আছে। এফডিসির এমডি ও মন্ত্রী মহোদয় জানিয়েছেন শিগগির হবে, কিন্তু কবে হবে সেই তথ্য আমার কাছে নেই।”
এফডিসির সঙ্গে জড়িতদের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কেন এমন শোচনীয় অবস্থা জানতে চাইলে হিমাদ্রি বড়ুয়া বলেন, এফডিসিতে আগের মত শুটিং হয় না বলে আয় নেই। মাঝেমাঝে দু-চারটি বিজ্ঞাপনের শুটিং থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা হয়, যেখানে আগে মাসে ৮০ লাখ থেকে কোটি টাকাও হতো।
“সবমিলিয়ে মাসে বেতন লাগে প্রায় ৮০ লাখ টাকা টাকা। কিন্তু এখন এফডিসিতেই কাজই তো হয় না তাহলে আয় হবে কীভাবে? অথচ আগে এফডিসির আয় প্রয়োজন মিটিয়ে উচ্ছিষ্ট অর্থ সরকারকে দেওয়া হতো। এফডিসিতে নতুন ভবনগুলো চালু হলে হয়তো আবার এখান থেকে আয় বাড়বে।”
এ ব্যাপারে এফডিসির এমডি নুজহাত ইয়াসমিনের সাথে বুধবার বিকেলে মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি উত্তর দেননি।