তারকা উপস্থাপিকা মারিয়া নূর। টিভি, সেলেব্রেটি, রিয়্যালিটি শো, কর্পোরেট থেকে ক্রিকেট উপস্থাপনায় জুড়ি নেই তার। কালেভদ্রে অভিনয়ও করেন মারিয়া নূর। সম্প্রতি জি ফাইভে মুক্তি পাওয়া মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ওয়েব সিরিজ ‘লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান’-এ তিনি শীতল মনোভাবের লরা চরিত্রে অভিনয় করে নজড় কাড়েন দর্শকদের। এ কাজটি নিয়ে মারিয়া নূরের সঙ্গে কথা হয় চ্যানেল আই অনলাইনের…
‘লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান’ মুক্তির পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
লরা চরিত্রে অভিনয় করেছি। বেশিরভাগ সময় আমাকে সাইলেন্ট (নিরব) এক্সপ্রেশনে অভিনয় করতে হয়েছে। দর্শক এই জিনিসটার বেশী প্রশংসা করছেন। এটা আমাকে ভীষণ স্পর্শ করছে। সংলাপ ছাড়া এক্সপ্রেশন দিয়ে যে ফিলটা দেয়ার চেষ্টা ছিল সেটা সবার ভালো লেগেছে; ইমোশনটা হয়তো স্পর্শ করতে পেরেছি বিষয়টা বেশি ভালো লেগেছে।
সাইলেন্ট এক্সপ্রেশনে অভিনয় করা চ্যালেঞ্জিং মনে হয়নি?
মজা করে বললে, আমি নিজেও অনেক চুপচাপ থাকি। আমার জন্য বিষয়টা বরং সহজ হয়েছে। আমার মায়ের চরিত্র করেছেন সাবেরী আলম আপা। তাকে বলেছিলাম, সাইলেন্ট এক্সপ্রেশনে সহজ লাগছে। উনি খুব অবাক হয়েছিলেন। বলছিলেন, ‘সংলাপ সহজ, কিন্তু সাইলেন্ট এক্সপ্রেশন কঠিন কাজ। ফারুকী ভাই তোমাকে এই চরিত্রের জন্য উপযুক্তভাবে নির্বাচন করেছেন।’ আমি অনুভব করছিলাম এমন অবস্থায় থাকলে আমি কি করতাম? সেটাই পোট্রেট করেছি এক্সপ্রেশনে।
বড় আয়োজনের কাজ ‘লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান’। নিশ্চয়ই আপনার প্রত্যাশাও বেশি ছিল। পূরণ হচ্ছে?
প্রত্যাশা মানে বিনিময়ে একটা চাওয়া থাকে। কিন্তু আমার অনেক বেশি চাওয়া ছিল না। যেহেতু এটা খুব ভালো কাজ, চেয়েছিলাম অনেক দর্শক দেখুক। তাছাড়া ফারুকী ভাই চার বছর পর কোনো কাজ করলেন তাও প্রথম ওয়েব সিরিজ ওটিটির জন্য। টিভির বাইরে এখানেও যে ভালো কাজ হচ্ছে, আমাদের সামাজিকতা নিয়ে ইতিবাচক কিছু কথা বলা হচ্ছে; সেগুলো যেন মানুষ দেখে বুঝতে পারে এটাই প্রত্যাশা ছিল। এদিক থেকে আমি প্রত্যাশা ছুঁতে পেরেছি।
কোন বিশেষ কারণে ‘লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান’ কাজটিতে যুক্ত হয়েছিলেন?
প্রথম কারণ হচ্ছে, পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভাই। দ্বিতীয় কারণ, উনি আমাকে যে চরিত্রের বর্ণনা দিয়েছেন সেটা। ‘এখানেই ডটকম’ বিজ্ঞাপন দিয়ে আমি পরিচিতি পেয়েছিলাম। সেটা ছিল ফারুকী ভাইয়ের কাজ। ফারুকী ভাই যখন আমাকে কাজটির কথা বললেন ভয় পেয়েছিলাম, কারণ আমি অভিনয়ে অনিয়মিত। ওটিটির কাজ, আদৌ কতটা পারবো! আরও মনে হচ্ছিল, ফারুকী ভাইয়ের কাজ মানে বিরাট একটা কিছু হবে। ব্যক্তি মারিয়া নূরের সঙ্গে এ চরিত্রের অনেক মিল আছে। এগুলোই হচ্ছে আমার কাজটিতে যুক্ত হওয়ার কারণ।
পর্দার লরা ও বাস্তবের মারিয়া নূরের পার্থক্য কতখানি?
কোনো পার্থক্য নেই বলা যায়। লরার কথা টোন, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা, কোনো লক্ষ থাকলে অর্জন করা যেমন আমিও একদমই এমন।
লরা চরিত্রের জন্য বাড়তি প্রস্তুতি নিয়ে হয়েছিল?
দুর্ভাগ্যবশত আমার জন্য সম্ভব হয়নি। যতটুকু করেছি ফারুকী ভাইয়ের সাহায্যে। ফটোশুটেও আমি থাকতে পারিনি। কারণ ১৫ দিনের মতো হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। হাসপাতাল থেকে ফিরে চারদিন পর শুটিং করি। অসুস্থ হওয়ার আগেই উনি আমাকে ভালোভাবে বুঝিয়েছেন লরার সাথে মারিয়ার অনেক মিল। এটা মাথায় রাখলে সহজ হবে কাজ করা।
পরিচালক হিসেবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী কি অন্যদের চেয়ে আলাদা? যদি তাই হয় তাহলে কেন?
অনেকদিক থেকে আলাদা। ফারুকী ভাই সমাজের বাস্তবচিত্র তার কাজে ফুটিয়ে তোলেন। তাছাড়া তিনি তার শিল্পীদের প্রত্যেকের সাইকোলজিটা ভালো বোঝেন। যাকে যেভাবে ট্রিট করতে হয় সেভাবেই করেন। এই বোঝাপড়াটা অন্যদের মধ্যে দেখিনি। তিনি সবসময় দাঁড়িয়ে থাকেন, মুভিংয়ে থাকেন। তার যে এনার্জি এটা সবার মধ্যে দিয়ে দেন। ভীষণ এনার্জেটিক মানুষ উনি।
ওটিটিতে কাজ করলেন। এ মাধ্যমে এখন বেশি বেশি কাজ হচ্ছে। আপনার মূল্যয়ন কী?
টিভিতে যে বাজেট দেয়া হয় পরিচালক শিল্পী সঠিক পারফর্মেন্স দিতে পারেন না। বাজেট স্বল্পতার কারণে তাড়াহুড়ো করে একদিনেও নাটকের কাজ শেষ হয়। আমি নিজেও ফেইস করেছি। শুনতে খারাপ লাগে, একদিনে কেন নাটক হবে? বাজেট বেশি পেলে পরিচালক শিল্পীরা তাদের মেধার যথাযথ ব্যবহার করতে পারে। ওটিটি আমার কাছে ভালো লাগছে বেশি কারণ দর্শক টাকা দিয়ে দেখছে। বিজ্ঞাপন ছাড়া একটানা দেখছে।
ঈদের আপনার উপস্থাপনায় কয়টি অনুষ্ঠান আসছে?
অভিনয় বা উপস্থাপনা যাই হোক বাছাই করে কাজ করি। চাইনা আমাকে পর্দায় বেশি দেখা যাক। ঈদে অনেকগুলো কাজের অফার এসেছিল। কিন্তু ছোট পরিসরের কাজ মনে হয়েছে তাই করিনি। ছোট পরিসর মানে অতিথিদের নিয়ে বসে একই প্রশ্ন, রিসার্চের কিছু নেই বা ভিন্নতা পাইনি। বেশিরভাগ তারকার ইন্টার্ভিউ নিয়ে ফেলেছি। তাদের আবার ইন্টার্ভিউ নেয়ার জন্য বেশি অ্যাফোর্ড দরকার। এটা কেউ দেয় না। অনুষ্ঠানের সেট নির্মাণেও পরিবর্তন পাইনি। তবে চ্যানেল আইয়ের জন্য রাবেয়া খাতুনের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘লা পেরুজের সুর্যাস্ত’ নামে একটি নাটক করেছি। আরেকটির কথা ছিল কিন্তু করোনার কারণে শুটিং বাতিল হয়েছে। এছাড়া ক্রিকেটে শো নিয়ে একটা ভালো অনুষ্ঠান করবো।
খুব কম অভিনয় করেন। কখনও মনে হয় না অভিনয়ে আরও নিয়মিত হওয়া উচিত?
আমার মনে হতো অভিনয়ে উপস্থাপনার ধরনটা ফুটে উঠতো। অভিনয়ে মারিয়া নূরকে উপস্থাপক হিসেবে আলাদা করা যায় না। তবে ‘লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান’ করার পর সবাই অনেক বেশি বেশি উৎসাহ দিচ্ছেন। এখন অভিনয়ের প্রতি বেশি মোটিভেটেড হচ্ছি। সত্যি বলছি, এতদিন নিজের বেশিরভাগ অভিনয় ভালো লাগতো না। কিন্তু ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান’-এ নিজের অভিনয় নিজের কাছে ভালো লেগেছে। এই কাজ দিয়ে আরও ভালো বুঝেছি, পরিচালক যদি চান তাহলে অবশ্যই শিল্পীর কাছ থেকে ভালো কাজ বের করে আনতে পারেন।