কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন বুধবার। শুধু কুমিল্লাতেই নয়, নানা কারণে এরই মধ্যে জাতীয় রাজনীতিতেও বড় একটা জায়গা করে নিয়েছে তা। বিশেষ করে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্বে আসার পর এটাই প্রথম নির্বাচন। তাই কুসিক নির্বাচনকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য এক বিরাট পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই পরীক্ষায় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন পাস করতে পারবে কি-না? সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরেকটু দূরে তাকিয়ে বলতে চাইছেন, এই নির্বাচনের কেমন হবে; তার ছাপ পড়বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। আবার সরাসরি না বললেও দেশের বিরোধীদলগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে কুসিক নির্বাচনকে। যার ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে আগামী নির্বাচনগুলোতে তাদের অংশগ্রহণ থাকবে কিনা?
যদিও এরই মধ্যে দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে টানা নির্বাচন বর্জন করে আসছে। কে এম নূরুল হুদা কমিশনের অধীনে অনেকগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। সেই ধারাবাহিকতায় কুসিক নির্বাচনেও অংশ নেয়নি তারা। যদিও বিএনপির অনেক নেতাকর্মী স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে এসব নির্বাচনে অংশ নিতে দেখা গেছে। যেমন নিচ্ছেন বর্তমান মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কু।
আমরা এরই মধ্যে জেনেছি, কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিচ্ছেন ৫ জন প্রার্থী, ৯টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের বিপরীতে লড়ছেন ৩৬ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী। এছাড়াও ২৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১০৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাকি দুটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুইজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। ১০৫টি ভোট কেন্দ্রে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সবগুলো কেন্দ্রেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে।
ভোটের প্রচার থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত নির্বাচনকেন্দ্রীক কোনো সহিংসতা না ঘটলেও ৮৯টি কেন্দ্রকে ঝুঁকি পূর্ণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তারপরও কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে; অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে নির্বাচন হবে। ক্ষমতাসীন দলকে অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়া হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। সবগুলো ভোটকেন্দ্রের সারিতে একটি করে সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি প্রতিটি বুথেও ১টি করে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে।
প্রধান নির্বাচন কাজী হাবিবুল আউয়াল বারবার বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, নিরপেক্ষ হবে। দেশবাসীর মতো আমাদেরও প্রত্যাশা তিনি নিজের কথা রাখবেন। শুধু কথায় নয়, সুন্দর ও বিতর্কমুক্ত একটি নির্বাচন জাতিকে উপহার দিয়ে সিইসি হিসেবে কাজেও তার প্রমাণ রাখবেন।
আমরা মনে করি, কুসিক নির্বাচন হবে দেশের মানুষের কাছে নতুন এক উদাহরণ। দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হোক তা। যার মাধ্যমে জয় হবে গণতন্ত্রের- সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।