রাত পোহালেই (শুক্রবার) মুক্তি পাচ্ছে ‘হাওয়া’। দর্শক চাহিদা এমন যে, মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে প্রথম দু’দিনের অগ্রিম টিকেট চেয়েও পাচ্ছে না দর্শক! সাম্প্রতিক বাংলা সিনেমার ইতিহাসে মুক্তির আগে কোনো সিনেমা নিয়ে এমন উত্তেজনা খুব একটা দেখার সৌভাগ্য হয়নি চলতি প্রজন্মের!
ট্রেলার ও গান প্রকাশ করেই মানুষের মুখে মুখে পৌঁছে গেছে ‘হাওয়া’র খবর। সিনেমাটি নিয়ে সাধারণ দর্শক থেকে সিনে-আলোচকরাও মুখিয়ে! সমকালীন মেধাবী নির্মাতা, তারকাদেরও হাওয়ায় গা ভাসাতে দেখা যাচ্ছে। সিনেমার গান হিসেবে হাশিম মাহমুদের লেখা ও সুর করা ‘সাদা সাদা কালা কালা’ তৈরী করেছে মাইলফলক! স্থলে জলে শুনছে মানুষ!
‘হাওয়া’র গানের শ্রোতাপ্রিয়তা, ট্রেলারে দুর্দান্ত আবহ সংগীতের আভাস, ভিজ্যুয়ালে বিশাল ক্যানভাস, চঞ্চল চৌধুরী-নাজিফা তুষি-রাজদের টুকরো অভিনয় ও সংলাপের মুহূর্ত দেখেই চারদিকে বাহবা রব! সিনেমাটি দেখতে এটুকুই যথেষ্ট! তবু আলাদা করে এই ফিচারে ‘হাওয়া’ নিয়ে কিছুটা পূর্বাভাস থাকলো-
মেজবাউর রহমান সুমনের প্রথম সিনেমা
মেজবাউর রহমান সুমন। ছোট পর্দায় নিজের দক্ষতার সর্বোচ্চ প্রমাণ রেখে চলেছেন শুন্য থেকে। নির্মাণ করেছেন তারপরও আঙুরলতা নন্দকে ভালোবাসে, ফেরার কোন পথ নেই থাকে না কোন কালে, মিথ্যা তুমি দশ পিঁপড়া, সুপারম্যান এবং কফি হাউজ এর মতো দারুণ সব টিভি ফিকশন! তবে সিনেমায় তিনি একেবারেই নতুন। ছোট পর্দার প্রিয় নির্মাতা বড় পর্দায় কেমন করলেন, এমন কৌতূহলী দর্শকের সংখ্যাও কম নয়! আবার যারা সুমনের পুরনো ফিকশন দেখেননি, তাদের জন্য চমক হতে পারে ‘হাওয়া’!
চিত্রগ্রহণে ‘মনপুরা’র কামরুল হাসান খসরু
‘হাওয়া’ মুক্তির পর গল্প, অভিনয় ও সংগীতের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি আলোচনা তৈরীর সম্ভাবনা রাখে ‘হাওয়া’র ভিজ্যুয়াল! গভীর সমুদ্রে, বৈরী পরিবেশে সিনেমায় বিশাল ক্যানভাসের দৃশ্য ধারণের অভিজ্ঞতা বাংলা সিনেমায় নতুন! আর এই কাজটি সামলেছেন কামরুল হাসান খসরু। নিভৃতচারী দেশের অসম্ভব এই মেধাবী চিত্রগ্রাহকের ক্যারিশমার সাথে সিনেপ্রেমী দর্শকের পরিচয় কালজয়ী সিনেমা ‘মনপুরা’র মাধ্যমে। নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের মতো ‘মনপুরা’র মধ্য দিয়েই সিনেমায় পা রাখেন চিত্রগ্রাহক খসরু! এরপর তিনি স্বপ্নজাল, দেবী এবং ওয়েব ফিল্ম ‘গুণিন’ এর চিত্রগ্রহণেও নিজস্বতার পরিচয় দেন।
‘হাওয়া’র শব্দ, সংগীত
কতোটা যত্ন নিয়ে এই সিনেমার শব্দ ও সংগীতের কাজ সম্পন্ন হয়েছে- সেটা বেশ ভালো করেই আঁচ পাওয়া গেছে গান ও ট্রেলার প্রকাশের পর পরই। গল্পের সাথে দর্শকের মনস্তাত্ত্বিক যোগাযোগ স্থাপনে এই সিনেমার আবহ সংগীত হতে পারে বিরাট টোটকা! সিনেমাটি যেহেতু সমুদ্রের গল্পে, স্বভাবতই এই সিনেমার শব্দ ও সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে হাওয়া ও জলের অ্যাম্বিয়েন্স! দীর্ঘ দিন ধরে এই সিনেমার মিউজিক নিয়ে কাজ করেছেন সংগীত পরিচালক রাশিদ শরীফ শোয়েব। সিনেমার অন্যান্য অনুসঙ্গের পাশাপাশি যারা আবহ সংগীত নিয়ে আলাদা এক্সপেরিয়েন্স নিতে চান, তাদের জন্য ‘হাওয়া’ হতে পারে বিশেষ কিছু।
রহস্য জিইয়ে আছে ‘হাওয়া’র গল্পে
হাওয়ার গল্প কিসের উপর ভিত্তি করে, এর কাহিনী কী? সেটা এখনও পরিস্কার নয়। ট্রেলার কিংবা নির্মাতার দেয়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে গল্প নিয়ে যতোটুকু ইঙ্গিত আছে, এরবেশি এখনও কেউ ভাবতে বা জানতে পারেননি। নির্মাতা শুধু বলেছেন, এটা এই সময়ের রূপকথা! যে রূপকথার প্রধান উপাদান সমুদ্র, ঢেউ আর একটি ট্রলার। ‘হাওয়া’র ট্রেলারেও দেখা গেলো তেমনটাই। গল্পের রহস্য জানতে হলেও ‘হাওয়া’ দেখা বাঞ্ছনীয়।
অভিনয়ে ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’
চঞ্চল চৌধুরী মানেই সিনেমা হিট। ‘মনপুরা’র পর থেকে এমন একটি মানে দাঁড়িয়ে গেছে। আয়নাবাজি, দেবী তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত! সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া তার অভিনীত ‘পাপ পুণ্য’ ছবিটিও কম সময়ের মধ্যে অনলাইনে মুক্তির পর দেখা হয়েছে প্রায় পৌনে কোটি বার! সিনেমায় এই অভিনেতার দর্শকপ্রিয়তাকে অধিকাংশই ‘সৌভাগ্য’ বলতে চাইলেও অনেকে তার ‘চিত্রনাট্য বাছাই’কেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। ফলে চঞ্চল চৌধুরী যে সিনেমায় অভিনয় করেন, সেই সিনেমার উপর এমনিতেই বিরাট একটা শ্রেণি ভরসা রাখেন চোখ বুজে! তবে ‘হাওয়া’য় শুধু চঞ্চল চৌধুরী নন, আছেন আরও বেশ কয়েকজন দক্ষ অভিনেতা। এই ছবিতে ফ্যাক্টর হতে পারেন অভিনেত্রী নাজিফা তুষি। নতুনভাবে দর্শক তাকে আবিষ্কার করতে পারেন! সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাজিক দেখাতে পারেন শরিফুল রাজ, নাসির উদ্দিন খান, সুমন আনোয়ার সহ অন্যান্যরাও।