করোনাকালে তখন বিপর্যস্ত পুরো পৃথিবী। অন্য সবকিছুর মতো থমকে গিয়েছিল বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন। ফুটবলেও লেগেছিল সেই হাওয়া, কম-বেশি সব ক্লাবেই লেগেছিল আর্থিক মন্দার ছোঁয়া। সেই আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার যুক্তি দাঁড় করিয়ে ইউরোপের অভিজাত তথা এলিট ক্লাবগুলোকে নিয়ে একটি আলাদা টুর্নামেন্ট আয়োজনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। ফুটবলের বিদ্রোহী তকমা পাওয়া এখনো মাঠে না গড়ানো আসরের নামকরণ হয় ‘ইউরোপিয়ান সুপার লিগ’।
আর্থিক লাভের আশায় জায়ান্ট ক্লাবগুলোকে নিয়েই তৈরি হয়েছে সুপার লিগের পরিকল্পনা। এমন আসর আয়োজনের তাই কঠোর সমালোচনা করেছেন ইতালি জাতীয় ফুটবল দলের কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তি সুপার লিগ আয়োজনের। ইতালীয় এক টিভি চ্যানেলে নিজের ক্ষোভের কথা খোলামেলাভাবেই বলেন।
‘আমরা সত্যিই আমাদের পুরানো এবং ভালো ঐতিহ্য হারাচ্ছি। মনে হচ্ছে শুধুমাত্র শক্তিশালী লোকেরাই নিয়ম লিখতে পারে এবং তারা তাদের নিজস্ব ফুটবল ধারণা চাপিয়ে দিতে চায়। তারা বুঝতে পারে না যে যতক্ষণ না একটি বল এবং দুই দিকেই লক্ষ্য আছে, মানুষ তাদের পছন্দের ঐতিহ্যগত ফুটবলকে বেছে নেবে।’
‘মানুষ এখনও স্বপ্ন তৈরির সুযোগ পেতে চায়। আমরা শক্তিশালী দৈত্যাকার দলটিকে ছোট দলের কাছে হারতে দেখার আশা হারাতে পারি না। আমরা সেই বিস্ময়কর অনুভূতি হারাতে পারি না।’
এই আসরকে যদিও ‘বিদ্রোহী লিগ’ আখ্যা দিয়ে বিরোধিতা শুরু করে ইউরোপিয়ান ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা উয়েফা। পরবর্তীতে বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফাও এতে শামিল হয়। বড় দলগুলো এ টুর্নামেন্টে নাম লেখালে ঐক্য, সমতা আর বন্ধনের নামে যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আয়োজন করা হয়, তার মর্যাদা কমে যাবে বলে তিন বছর আগে বলেছিলেন উয়েফা প্রধান অ্যালেক্সান্ডার সেফারিন। সুপার লিগ বন্ধে সব উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন।
সুপার লিগ নিয়ে ২০২১ সালের এপ্রিলে শুরু হয়েছিল আলোচনা। তখন খবর ছড়িয়েছিল- ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের আর্সেনাল, চেলসি, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং টটেনহ্যামসহ ১২টি দল সুপার লিগে যোগ দেবে। ঘটনায় অন্যান্য ইউরোপীয় লিগ, এমনকি সরকারের দিক থেকে ব্যাপক ক্ষোভ এবং নিন্দা জানানো হয়। ফিফা ও উয়েফার পক্ষ থেকে দেয়া হয় কড়া সতর্কতা। ফলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সুপার লিগের পরিকল্পনা ভেঙে যায়।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোসহ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, ইন্টার মিলান এবং এসি মিলানকে উয়েফা জরিমানা করেছিল। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া চলাকালীন রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা এবং জুভেন্টাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ স্থগিত করা হয়েছিল। জুভেন্টাস জুলাই মাসে প্রকল্পটি থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দেয়। যদিও ইউরোপিয়ান সুপার লিগ চালুর সম্ভাবনা পুরোপুরি বাতিল হয়নি। রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা উদ্যোগটি এগিয়ে নিতে আগ্রহী।
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর ইউরোপের সর্বোচ্চ আদালত ইউরোপিয়ান সুপার লিগে যোগদানের জন্য ক্লাবগুলোকে নিষিদ্ধ করা বেআইনি ছিল বলে রায়ও দেয়। এতে উয়েফা ও ফিফার গভর্নিং বডিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল ওঠে। আদালত এটিও বলেছেন, এর মানে এই নয় যে সুপার লিগ প্রকল্পের মতো প্রতিযোগিতাকে অবশ্যই অনুমোদন দিতে হবে।