১৭৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। মাত্র ৩২ রানেই ৬ উইকেট খুইয়ে লজ্জাজনক হার হয়ে দাঁড়ায় কেবল সময়ের ব্যাপার। ধ্বংসস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়ে বাইশ গজে ঝড় তোলেন রিশাদ হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। তাদের ঝড় সামলে ২৮ রানের জয়ে ২-১ ব্যবধানে টি-টুয়েন্টি সিরিজ জিতল শ্রীলঙ্কা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা লঙ্কানরা ৭ উইকেটে তোলে ১৭৪ রান। জবাবে বাংলাদেশ ১৯.৪ ওভারে ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায়।
ডাচ বাংলা ব্যাংক বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজ ২০২৪ জয়ের অভিযানে রান তাড়ায় ধাক্কা খায় লাল-সবুজের দল । ইনিংসের প্রথম বলেই অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের একটি অন সাইডের বল খেলার চেষ্টা করেন লিটন কুমার দাস। তবে ব্যাটে-বলে সেটি না হলে জোরাল আবেদন করেন ম্যাথুজ। আম্পায়ার তাতে সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় শ্রীলঙ্কা। তবে আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যান লিটন।
তৃতীয় ওভারের প্রথম বলটি করে পায়ের সমস্যা নিয়ে মাঠ ছাড়েন ম্যাথুজ। তার অসম্পন্ন ওভার করতে আসেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। ধনাঞ্জয়ার প্রথম বলেই অফ স্টাম্পের দিকে সরে গিয়ে তুলে মারতে উপরে ক্যাচ তোলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার লিটন। ১১ বলে ৭ রান করে উইকেট ছুড়ে এলেন ডানহাতি ব্যাটার। তাতে দলীয় ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপরই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধস নামে। টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উইকেট তুলে নেন লঙ্কান পেসার নুয়ান থুশারা। তাতে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অষ্টম টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নেমে প্রথমবার হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেয়ে যান ২৯ বর্ষী লঙ্কান পেসার। শান্ত ও তাওহীদের স্টাম্প উপড়ে ফেলার পর মাহমুদউল্লাহকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পান এ পেসার। শ্রীলঙ্কার পঞ্চম বোলার হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন থুশারা।
নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে নেমে সৌম্য সরকারকে বোল্ড করেন থুশারা। ১০ বলে ১১ রান আসে সৌম্যের ব্যাট থেকে। পরে জাকের আলী অনিক ৪ রানে ভানিডু হাসারাঙ্গার বলে এলবিডব্লিউ হন।
তবে শেষ দিকে বোলার হয়ে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন স্পিনার রিশাদ হোসেন। মারকুটে ব্যাটিংয়ে হারের ব্যবধান কমান তিনি। গড়েছেন নতুন এক রেকর্ডও। আট বা এর পরে নেমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ফিফটি রিশাদের। প্রথমটি ছিল আফিফ হোসেনের।
বিনুরা ফার্নান্ডোকে টেনে মিডউইকেট দিয়ে ইনিংসের সপ্তম ছক্কাটি মেরেছেন রিশাদ। ওই শটেই ২৫ বলে তিনি তুলে নেন ফিফটি। এ ছক্কা দিয়ে এক ইনিংসে কোনো বাংলাদেশি ব্যাটারের সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডও হয়েছে রিশাদের। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে জাকের আলীর গড়া সর্বোচ্চ ৬ ছক্কার রেকর্ডটিও এই ম্যাচে ভেঙে দিয়েছেন রিশাদ। ৩০ বলে ৭ ছক্কায় ৫৩ রানের ইনিংস খেলে ড্রেসিংরুমে ফেরেন। মহেশ থিকশানার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সামারাবিক্রমার তালুবন্দি হন।
এরপর শরিফুলের উইকেট তুলে নিয়ে পঞ্চম উইকেটের দেখা পান ম্যাচসেরা থুশারা।
রিশাদের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে ঝড় তোলা তাসকিন আউট হন ২১ বলে ৩১ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার দারুণ ক্যাচে শেষ হয় আউট হলে ১৪৬ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
লঙ্কানদের পক্ষে থুশারা ৪ ওভারে ২০ রানে পান ৫ উইকেট। হাসারাঙ্গা দুটি উইকেট পকেটে পুরেন।
এর আগে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে তাসকিন লঙ্কানদের প্রথম উইকেট তুলে নেন। স্ট্রোক খেলতে গিয়ে ৮ রান করা ধনঞ্জয়া মিডউইকেটে সৌম্য সরকারের তালুবন্দি হন। অতিথিদের দলীয় স্কোর তখন ১৮।
অষ্টম ওভারে রিশাদ হোসেনের হাতে বল দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় বলে ম্যাচের প্রথম ছক্কাটি মারেন কুশল মেন্ডিস। তবে রিশাদের ওপর চড়াও হলেও ভুল করেন কামিন্দু মেন্ডিস। সামনে এসে তুলে মারলেও নিয়ন্ত্রণে ছিল না কামিন্দুর। তালুবন্দি করেন শরীফুল। তাতে ২৭ বলে ৩৪ রানে আউট হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন কামিন্দু।
এরপর দলীয় ১১১ রানের মাথায় ব্রেক থ্রু এনে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গা আপার কাট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন আরেক টাইগার পেসার শরিফুল ইসলামের হাতে। এক চার ও এক ছয়ে ১৩ বলে রান করেন টপ অর্ডার এই ব্যাটার।
৩ রানের বেশি করতে পারেননি চারিথ আসালাঙ্কা। মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ডিপ থার্ড ম্যাচে শরিফুলের হাতে ধরা পড়েন। তবে অন্য প্রান্ত থেকে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে থাকেন কুশল মেন্ডিস। তবে সেঞ্চুরির দেখা না পেলেও আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে নিজের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর পেয়ে যান লঙ্কানদের উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
১৭তম ওভারে তাসকিনের একটি শর্ট ডেলিভারি খেলতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন ২৯ বর্ষী কুশল। ৫৫ বলে ৮৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে। দারুণ এই ইনিংস ৬টি করে চার ও ছক্কা মারেন লঙ্কান তারকা।
এরপর দলীয় ১৫২ রানে রিশাদ হোসেনের বলে ৭ বলে ১০ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। ৯ বলে ১৯ রান দাসুন শানাকাকে লিটন দাস রান আউট করলে ৭ উইকেটে ১৭৪ রানের সংগ্রহ পায় লঙ্কানরা।
বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন ও রিশাদ ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান শরিফুল ও মোস্তাফিজ।