আসন্ন ঈদযাত্রায় প্রথমবারের মতো ড্রোনের ব্যবহার করা হবে। ড্রোনের সহায়তায় অবস্থা দেখে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারব। আন্তঃজেলা বা দূরপাল্লার কোন গণপরিবহন যদি বাড়তি ভাড়া নেয়। প্রমাণ পাওয়া গেলে ওই গণপরিবহনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
পবিত্র রমজান ও আসন্ন ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে মহাসড়ক/সড়কপথে যাত্রা নির্বিঘ্ন, নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখার লক্ষ্যে হাইওয়ে পুলিশের আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় সভার শুরুতেই অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (অপারেশনস্) শ্যামল কুমার মুখার্জী মহাসড়কে যানজট প্রবণ স্পট নির্ধারণ, আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে মহাসড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সংক্রান্ত আলোচনা, সড়ক দুর্ঘটনারোধ করণীয়, হ্যালো এইচপি অ্যাপস্ সংক্রান্ত আলোচনা ও লাইভ স্ট্রিমিংসহ বডি ওর্ন ক্যামেরা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং হাইওয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ ও হাইওয়ে পুলিশের সকল ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন।
ত্রুটিপূর্ণ কোনো যানবাহন থাকবে না
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বলেন: রাস্তায় যদি কোনো যানবাহন তাৎক্ষণিক অকেজো হয়ে পড়ে, তাহলে সেটি ড্রোনের সহায়তায় সরানো সহজ হবে। ত্রুটিপূর্ণ কোনো যানবাহন যাতে ঈদে সড়কে না নামে, তা নিশ্চিত করতে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা লক্ষ্য করি কিছু লক্কর-ঝক্কর বাস যেগুলো সারা বছর সিরিয়াল পায় না, সেগুলো ঈদের সময় রাস্তায় নেমে পড়ে। এসব আমরাও ধরতে পারি না, পুলিশও বুঝতে পারে না, কোত্থেকে এগুলো রাস্তায় আসে। এগুলো রিজার্ভ হিসেবে চলে। গার্মেন্টস শ্রমিকরা নিয়ে যায়। যে রাস্তায় আমাদের ছোট বাসও চলে না সেখানে দেখি বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাস ঢুকে পড়ে। আমরা এখনো মহাসড়ক থেকে নছিমন, করিমন ও ভটভটি সরাতে পারিনি। এটাও একটা বাধা আমাদের। জনসংখ্যার তুলনায় গণপরিবহন আমাদের অনেক কম। হজের সময় সৌদিতে সরকার বাস ভাড়া করে। আমাদের এখানে ঈদে সে ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই আপনি আরও আগে বা ঈদের পরও যেতে পারেন। আমরা আশ্বস্ত করছি, ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে।
বাড়তি ভাড়ায় স্পটে উপস্থিত থেকে ব্যবস্থা নিব
প্রতি বছরই বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ আসে। প্রমাণও মেলে। কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। এ প্রসঙ্গে রাঙ্গা বলেন, অনেক পরিবহনই ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। যেসব বাস কোম্পানি সুনামের সঙ্গে কাজ করছে, তাদের কোনো বাস যদি ভাড়া বেশি নেয়, তাহলে আমাদের জানাবেন, আমাকে জানাবেন, ব্যবস্থা নেবো। প্রয়োজনে স্পটে উপস্থিত হবো। অভিযোগ পেলেই আমরা সেখানে যাবো। কোন কোন জায়গায় কারা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে, তা আমরা শনাক্ত করব।কোনো গণপরিবহনের বাড়তি ভাড়া নেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে কী ব্যবস্থা নেবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পেলে সেই গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেব। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
অবৈধ পার্কিংয়ের দখলে মহাখালী বাস টার্মিনাল
মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনের সড়কের তিনটি লেনই অবৈধ পার্কিংয়ের দখলে। যার বড় প্রভাব পড়ে সড়ক চলাচলে। তার সমাধান না হলে ঈদ যাত্রায় অনেকটা সময় কেটে যাবে ঢাকাতেই। এ নিয়ে জানতে চাইলে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন: লক বা ব্লক করে রাস্তায় দাঁড়ানোর কোনো অধিকার আমাদের নেই। যারা অবৈধভাবে পার্কিং করবে সড়কে, আর যানচলাচল বিঘ্নিত করবে, তাদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ আইনানুগ পদক্ষেপ নেবে, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে তো সড়কই নেই, সড়ককেই টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন: আমি এখান থেকে বের হয়েই আগে মহাখালী যাবো। দেখি সেখানে কি সমস্যা। আবারো বলছি, যারাই অবৈধ পার্কিং করছে, অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব আমরা।
থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধ করতে হবে
নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, থ্রি হুইলার মহাসড়কের দুর্ঘটনার বড় একটি কারণ, থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য হাইওয়ে পুলিশকে অনুরোধ করছি। হাইওয়ে পুলিশের আধুনিকীকরণে বডি ওর্ন ক্যামেরার ব্যবহার ও ড্রোনের মাধ্যমে যানজট নিরসনের পদক্ষেপকে যুগান্তকারী হিসেবে প্রশংসা করেন তিনি।
মহাসড়কে সকল প্রকার চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর নির্দেশনা
সভায় হাইওয়ে পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. শাহাবুদ্দিন খান মহাসড়কে সকল প্রকার চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি বলেন পণ্য পরিবহনে মালিক-শ্রমিক পক্ষ যেন কোন ভাবেই হয়রানির শিকার না হয় এই বিষয়ে সবাইকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে।ফিটনেস বিহীন গাড়িগুলো যেন মহাসড়কে চলাচল না করে এই বিষয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা চান। এছাড়াও মহাসড়ক নিরাপদ ও যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে এবং অপরাধ দমনে সবাইকে একযোগে কাজ করার জন্য আহবান জানান।তিনি বলেন, মহাসড়কে নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষায় চালকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। চালকদের যথাযথ সচেতনতাই মহাসড়কে যানজট ও দুর্ঘটনা কমিয়ে নিয়ে আসতে পারে।