ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন হরতাল-অবরোধের প্রথমদিকে ককটেলের ব্যবহার কম ছিল। কিন্তু গত ২ সপ্তাহ ধরে ককটেলের ব্যবহার বাড়ছিল। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ককটেলের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে।
গত ৩০ নভেম্বর রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার মূলহোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ও ঢাকার আশে-পাশের এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, গত ৩০ নভেম্বর বিভাগীয় কমিশনার ও ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার নির্বাচনী আসনগুলোর রিটার্নিং কর্মকর্তা কার্যালয়ের পাশে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেদিন ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। সেদিন দুপুর ৩টার একটু পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসের পাশে ২-৩ টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ঘটনার পর ডিএমপির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর প্রেক্ষিতে এনবিআর অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সন্দেহাতীতভাবে সঠিক ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে আমরা কাজ করি। এরই ধারাবাহিকতায় আশিকুর রহমান পান্না ও পল্টন থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তাররা ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে। রিটার্নিং অফিসার কার্যালয় ছাড়াও এআ দুইজন আরও ৮ টি ঘটনা সংঘটিত করেছে। এছাড়া, রমনার বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন হোসেন রনি ও বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা ১২ টি ঘটনা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। গ্রেপ্তার এই চারজন সর্বমোট ২১ টি ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু মামলা রয়েছে। আরও কোন ঘটনায় জড়িত কি-না এবং তাদের পেছনে কারা রয়েছে তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করবো।
ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ২৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হরতাল-অবরোধে যে নাশকতা কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা হচ্ছে, এর বড় একটি অংশ আমরা এক্সিকিউট করতে দেইনি। তারপরেও কিছু ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন ঘটনার সময় আমরা হাতেনাতে ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। তদন্তে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় যাদের নাম আসছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছি। যাতে কোন নীরিহ ব্যক্তি ভুলের শিকার না হয়, সেজন্য নিশ্চিত না হয়ে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, কম হলেও আমরা কোয়ালিটি অ্যারেস্ট করতে পেরেছি। তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করতে না পারলেও তদন্তে কারও নাম আসলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা যে কোন ভাবে মহানগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা হরতাল-অবরোধ আহ্বান করে তাদের উদ্দেশ্য সর্বসাধারণকে ভীতসন্ত্রস্ত করা। এজন্য তারা এ ধরনের কাজ করছে। তারা গ্রেপ্তারের ভয়ে এসব করার জন্য ভাড়া নেয়, তারা আবার খাবার-টাকার বিনিময়ে কাউকে ভাড়া করে এসব ঘটনা ঘটায়। এছাড়া, দলে একটা অবস্থান করে দেওয়া হবে এ ধরনের আশ্বাসে তাদেরকে দিয়ে নাশকতা করাচ্ছে। গ্রেপ্তার ২ জনের দলীয় পরিচয় পেয়েছি, বাকি দুইজনও দলের কর্মী। তবে পদ আছে কি-না এখনো নিশ্চিত না যোগ করেন তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছদ্মবেশে যাত্রীবেশে যদি কোনও বাসে আগুন দেয় সেটি প্রতিরোধ করা কষ্টসাধ্য ব্যপার। কোন একটি জায়গায় আগুন দিতে সেকেন্ডের ব্যপার। তারপরেও হাতেনাতে তদন্তে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু তারা পরিস্থিতি যে ভয়াভয় রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো তা পারেনি। সাইবার জগত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের বিচরণ। আমাদের সাইবার পেট্রোলিং চলছে। কেউ যদি সাইবার স্পেসে নাশকতার পরিকল্পনা করে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।