জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিপাশা হায়াতের জন্মদিন বুধবার (২৩ মার্চ)। বিশেষ এ দিনে তাকে নিয়ে লিখেছেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। তার লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
আজ তোমার ৫১। আহা! স্বাধীনতার ৫১ বছর, তোমারও ৫১বছর! আজ তুমি আমাদের থেকে দূরে। সেই দূরত্ব মনের না, পথের। এতদূর থেকেও তোমার মুখটা ভেসে উঠল। কত কত স্মৃতি তোমার সাথে আমার। ভালো থেকো তুমি। সাবধানে থেকো।
তোমার জন্মের গল্পটা আমি প্রতিবার লিখি, এই প্রজন্মের জন্য। কেউ মিস করলে বার বার পড়বে তাই। আন্টিকে ধন্যবাদ তোমাকে জন্ম দেবার জন্য। তুমি সত্যি অনেক গুণী একজন শিল্পী। গুণী মা বাবার সুযোগ্য সন্তান তুমি। প্রাউড অফ ইউ!
সহজ কথা যায় না বলা সহজে। সত্যিই তাই। আজকের দিনটা খুব সুন্দর। সকালের সূর্যটাও। কিন্ত ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চের এই দিনটা এমন ছিল না। ১৯৭১ সালের ২২ মার্চ শিরিন হায়াতের কোলে সেন্স হারালেন অসুস্থ আবুল হায়াত। তার নাক দিয়ে তখন রক্ত ঝড়ছে।শরীর থেকে রক্ত চলে যাচ্ছে। এদিকে শিরিন হায়াত মা হতে চলেছেন। ডাক্তার বলেছিলেন, এপ্রিল মাসে তিনি মা হবেন। কিন্ত স্বামীর এই অবস্থায় তখনই তার প্রসব ব্যথা ওঠে। দেশের অবস্থা তখন ভয়াবহ। বাঙালিরা চারিদিকে পাকিস্তানি পতাকা পোড়াচ্ছে।থমথমে অবস্থা। শিরিন হায়াত স্বামীকে ওই ভাবে রেখে চলে গেলেন হলি-ফ্যামিলি হাসপাতালে। সন্তানকে তো জন্ম দিতে হবে। ২৩ মার্চ ভোর সকালে জন্ম হলো ফুটফুটে একটি কন্যা। যেন সৃষ্টিকর্তা নিজের হাতে বানিয়েছেন। যদিও এক মাস আগে হওয়াতে কন্যা আন্ডার ওয়েট।
কন্যার মায়ের খুব অভিমান, কারণ তিনি ভাবছেন মেয়ে হয়েছে বলে হয়তো তার শাশুড়ী তাকে আর তার কন্যাকে দেখতে আসেননি। কিন্ত গল্প অন্য। আবুল হায়াত তখন ডা. রাব্বীর আন্ডারে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। টানা পাঁচ দিন তার সেন্স ছিল না। শরীরে কোন রক্ত নেই। অচেতন তিনি।
সবাই তখন আবুল হায়াতকে নিয়ে ব্যস্ত।২৫ মার্চ আরো ভয়ংকর চারিদিক। হাসপাতালে সব বিদেশী নার্স ডাক্তার।হাসপাতালের বাইরে তোলপাড়। মেশিনগান, কামান ঘিরে রেখেছে চারিদিক। বিকট আওয়াজে খাটের নিচে শিরিন হায়াত ছোট্ট শিশুকে বুকে তুলে প্রার্থনা করতেন, দেখা হবে তো তার স্বামীর সাথে! স্বাধীন হবে তো প্রাণের এই দেশ!
২৭ মার্চ শিরিন হায়াত সব জানতে পারেন। ওই দিন যে ছেলেটি সব তথ্য দিয়েছিল সে পাকবাহিনীর হাতে মারা যায়। ডা. রাব্বীকেও পাকিস্তানীরা গুলি করে মারে। ২৮ মার্চ নৌকা করে দেশে নেয়া হয় আবুল হায়াতকে। ৫ দিন পর তিনি তার কন্যার মুখ দেখেন।
মা বাবার যোগ্য সন্তান। যে মা নিজের জীবন বাজি রেখে স্বামীকে রেখে রিকশা করে হাসপাতালে গিয়েছিল সন্তান জন্ম দিতে। বিপাশা হায়াত। সবাই তাকে আজ চেনেন। চমৎকার একজন আবেগপ্রবণ মানুষ।
যে মানুষ একজন সত্যিকারের মানুষ হিসেবে স্বীকৃত। ভালো আঁকে, অভিনয় করে, খুব ভালো গান গায়। কোন প্যাঁচ নাই। কারোর ধারে নাই, পাছেও নাই। ভালোকে ভালো বলতে কোন দ্বিধা করেনা।
মায়ের মত দারুণ রান্না করে। স্বামী অন্তপ্রাণ। সংসার, ছেলে মেয়ে তার জীবনের প্রথম প্রায়োরিটি। তাদের ভালো মন্দে তার চোখ জলে ভরে যায়। এই মানুষ টার সাথে আমার অনেক সুন্দর স্মৃতি। সুন্দর মুহূর্ত। তা আজ থাক।
শুধু এইটুকু বলি, বিপাশার জন্যই আজ আমি কিছু লেখার সাহস করতে পারি। যদিও কিছুই হয় না। কিন্ত চেষ্টা করি।
আমি কৃতজ্ঞ। শুভ জন্মদিন বিপাশা।আনন্দময় হোক জীবন। অনেক শুভ কামনা তোমার জন্য সবসময়। অভিনন্দন শিরিন হায়াতকে তোমাকে জন্ম দেবার জন্য। সবাইকে নিয়ে সুস্হ থেকো,ভালো থেকো। অনেকদিন বেঁচে থাকো এই সুন্দর পৃথিবীতে। অনেক ভালোবাসি তোমাকে।কতটা তা তুমি নিজেও জানো না। আমিও না। তোমাকে বলার জন্য বা তোমাকে শোনানোর জন্য আমি এই লেখা লিখিনি।
আমার কৃতজ্ঞতার কথা সবার সাথে শেয়ার করতে আমার ভালো লাগে। কাজের জায়গায়, জীবন বোধের ছোট ছোট জায়গায় তোমার কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। সেইদিন গুলি আমার জীবনের গোল্ডেন মোমেন্ট।
তোমার চয়ন আপা সত্যিই ঋণী। “সদা থাকো আনন্দে। সংসারে নির্ভয়ে। আবারও শুভ জন্মদিন বিপাশা। ভালোবাসা আজ তোমার জন্য।