
‘এই জাড়োত আলু গরুও খায়না। আলু নিয়া এখন হামরা বিপদতোই আছি বাপু। আলু ১০, করি বাহে! বীজ কিনা, লাগানো, পরিচর্যা, উঠানো মিলিয়া হামার কেজি পইছে ১৫/১৭ টাকা। এখন বেচেছি ৮/৯ টাকা। খুব বিপদতই আছি বাপু।’
এভাবেই বলে গেলেন আলু চাষী রফিকুল ইসলাম। দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল একজন প্রান্তিক কৃষক। পূণর্ভবা নদী সংলগ্ন আড়াই বিঘা জমি আছে তার। আলু সহ নানান সবজি আবাদ করেন তিনি। এবার দেড় বিঘা জমিতে আলু আবাদ করে বিপাকেই পড়েছেন রফিকুল ইসলাম।
উত্তরের শস্যভান্ডার খ্যাত এ জেলায় এবার আগাম আলু বাজারে তুলে প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন না কৃষক। বর্তমানে বাজারে ১৮/২০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হলেও ওই আলু কৃষকের কাছে পাইকাররা নিচ্ছেন ৮/১০ টাকা কেজি দরে।
প্রতিকেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে ১৫/১৭ টাকা।

আলু বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় এবার উৎপাদন খরচও বেড়েছে। সেইসঙ্গে পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে আলু এনে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
অন্যদিকে, দাম কম পাওয়ায় হিমাগার থেকে গত বছরের আলুও বের করেননি অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী। নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় ধরে হিমাগারে আলু রাখায় লোকসান হচ্ছে তাদের।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দিনাজপুরে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৬৪ হেক্টর জমিতে। তবে উৎপাদন হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে আলু উৎপাদন হলেও ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা।
জেলায় হিমাগারের সংখ্যা ১৩টি। সবগুলো হিমাগার মিলিয়ে আলু ধারণক্ষমতা ১ লাখ ১৬ হাজার ১০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ আলু বীজের এবং বাকিগুলো খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী উৎপাদন এবং আলুর বহুমুখী ব্যবহার সম্ভব হলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হতেন।
প্রতিবছর একটু লাভের জন্য আলু চাষ করে এবার লোকসান খাচ্ছি উল্লেখ করে পুরিয়া গ্রামের আদর্শ কৃষক মতিউর রহমান বলেন, ‘প্রতি বছর মোটামুটি লাভ থাকলেও এবার অবস্থা করুন। আলু নিয়ে এবার আমরা বিপদেই আছি। সরকারের সহায়তা ছাড়া কৃষকের মরণদশা। সার, কীটনাশক, ডিজেল, বীজ এবং শ্রমিক বাজারের মূল্য বেশি। কিন্তু উৎপাদিত পণ্যের দাম নাই। এভাবে কৃষক কিভাবে বাঁচবে ভাই? ’