স্টারকিড থেকে নায়িকা হওয়া প্রার্থনা ফারদিন দীঘির মিডিয়া যাত্রায় কিছুটা বিঘ্ন হচ্ছে! অনেকদিন ধরে তিনি বিভিন্ন প্রতিবন্ধতার মুখোমুখি হচ্ছিলেন, কিন্তু সেসব কথা কখনো মুখ ফুটে বলেননি। তাই এতদিন এসব প্রকাশ্যেও আসেনি। সবকিছু ‘মানিয়ে চলার চেষ্টা’ আর সহ্য করতে পারলেন না দীঘি!
সোমবার দুপুরে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে পেশাদার কাজ ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ক্ষোভ ও আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ‘চাচ্চু’, ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘এক টাকার বউ’ ছবির সেই ছোট্ট দীঘি। যিনি এখন চিত্রনায়িকা।
দীঘি বললেন, অনেকদিন ধরে অনেককিছু মোকাবিলা করে আসছিলাম। কিন্তু সবকিছুর তো একটা লিমিট থাকে! এসব আর নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারছি না। একটা মানুষ কতদিন এভাবে সহ্য করতে পারে?
শিশুশিল্পী হিসেবে দেশজুড়ে তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন দীঘি। তিনবার অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নায়িকা হিসেবে দীঘির অভিষিক্ত ছবি দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর পরিচালনায় ‘তুমি আছো তুমি নেই’।
দীঘি বলেন, গত তিন বছর ধরে খুব কাছ থেকে উত্থান পতন আসছে যাচ্ছে। সবকিছুই প্রত্যক্ষ করছি। কিন্তু ইদানিং বেশী খারাপ লাগছে তখনই, যখন দেখছি মানুষ আশা দিচ্ছে, হয়ে যাবে বলে কনফার্ম করছে এবং আমাকে দিয়েই হবে বলে তুমুল আগ্রহ দেখিয়ে পরে কমিটমেন্ট রাখছে না।
নিজের পরিশ্রম ও একাগ্রতা দিয়ে আজ এই পর্যন্ত এসেছেন উল্লেখ করে দীঘি বলেন, যারা আমাকে নিয়ে কাজ করেছেন তারা জানেন কাজের প্রতি আমি কতটা নিবেদিত প্রাণ থাকি। গর্ব বা অহংকার করে বলছি না, কিন্তু আমি জানি আমার মধ্যে কতটা শক্তি আছে। ছোটবেলাতে আমি নিজেকে প্রমাণ করেছি। এখনও প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতেও যাবো।
মুঠোফোনের ওপাশ থেকে দীঘি তার ডেডিকেশনের কথা জানিয়ে বলেন, কদিন আগে পায়ের লিগামেন্ট সমস্যা নিয়ে পেইন কিলার খেয়ে চ্যানেল আই এর মিউজিক ভিডিওর শুটিং করেছি ২২ ঘণ্টা। ভাঙা পা নিয়ে এভাবে কাজকে ভালোবাসার মানসিকতা কজনের থাকে? কই, আমি তো চাইলে ফাঁসাতে পারতাম! করিনি। আমি কাজ নিয়ে বরাবরই ডেডিকেটেড, তাহলে আমাকে নিয়ে এমন মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে মশকরার মানে কী?
ক্ষোভ ঝেড়ে দীঘি বলেন, আমাকে যে বা যারা কাজে নেবে না তারা না নিতেই পারেন, ওকে ফাইন! কিন্তু মিথ্যে আশ্বাস দেয় কেন? নেবে না পেশাদারভাবে বলে দেয়ার কার্টেসিটা অনেকেই জানে না। মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমি বোধহয় বেশী কার্টেসি জানি, অথবা কিছুই জানি না। গত একবছর এসব জিনিস বেশী ফেস করতে হচ্ছে। সিনেমা রিলিজ হয়, চুক্তিবদ্ধ হয় এগুলো দেখি আর হাসি! কারণ, এগুলো আমার করার কথা ছিল।
‘আমাকে শেষে নেওয়া হয় না বা আমি করি না এসব নিয়ে আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমার ক্ষোভের জায়গাটা হচ্ছে, তারা কেন মিথ্যে আশ্বাস দেয়? এমনও হয়েছে আমার শিডিউল নিয়েছে কিন্তু পরে আর আমার ফোন ধরেনি। তাহলে শুধু শুধু আমাকে বসিয়ে রাখা হয় কেন? অন্য কাজ ছাড়তে হয়। এই মিথ্যে আশ্বাস জিনিসটা খুবই অপছন্দ করি। অতি সম্প্রতি কয়েকটা ঘটনায় আমি ভীষণভাবে বিরক্ত। আমাকে একটি বারও বলার প্রয়োজন মনে করেনি যে, আমাকে নিয়ে প্রজেক্ট আগাচ্ছে না! আমার ধারণা, আমি চুপচাপ থাকি, সবসময় হাসিখুশি থাকি এই কারণে নিরীহ পেয়ে এসব হয়।’
অনেকদিন ধরে এসব নীরবে সহ্য করেছেন দীঘি। তিনি মনে করেন, এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খোলা উচিত। দীঘি বলেন, এসব একটা সিন্ডিকেট। হাতেগোনা কয়েকজনের বাইরে এই সিন্ডিকেট কাজ করে না। নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট, রিলেশন মেইনটেন্টই তাদের কাছে সবকিছু। সিন্ডিকেটের বাইরে কে ভালো করছে, কার ডেডিকেশন বেশী এগুলো তারা দেখে না। এই সিন্ডিকেট আমার সঙ্গে যা করছে চাই না পরে আবার একই জিনিস ফেইস করি।
কারা সেই সিন্ডিকেট? নাম উল্লেখ না করে দীঘি বললেন, ওটিটি, সিনেমা সবখানে সিন্ডিকেট আছে। এখন যারা রুল করছে তাদের অনেকের স্ট্রং সিন্ডিকেট আছে। তারা ওই জোন থেকে বের হন না। নামগুলো রিভিল করলাম না। আসলে কাজের জন্য কারো কাছে ধর্ণা দিতে হবে সেই ধরনের মেয়ে আমি না। আগামীতে যদি কিছু করতে পারি, আমি আমার নিজের দক্ষতা ও ডেডিকেশন দিয়ে হবো।
দীঘি জানান, নায়িকা হিসেবে তার ক্যারিয়ারের শুরুটা ওতটা মসৃণ ছিল না। তিনি বলেন, আমাকে যেভাবে মিথ্যে আশ্বাস দেয়া হয়, এই অসততা আমি ডিজার্ভ করি না। আর আমার এতো খারাপ দিন আসে নাই যে চেয়ে চেয়ে কাজ নেব। আমি খুব নরমাল লাইফ মেইনটেইন করি। বার বার আশাহত হওয়ায় খারাপ লাগে। এর ফলে একটা বাজে মেন্টালিটি গ্রো করে। একজন ভালো মানুষকে দেখলেও নেতিবাচক মানসিকতা কাজ করবে।