লাকী আখান্দ বেঁচে থাকতে যথাযথ সম্মান পাননি বলে অনেকে অভিযোগ করেন। মৃত্যুর পরও তিনি উপযুক্ত শ্রদ্ধা পাচ্ছেন না বলে কষ্ট আছে সংগীত অঙ্গনের অনেকের।
তার বলছেন, লাকীর গান গেয়ে বিখ্যাত হয়েছেন এমন শিল্পীরাও তাকে সম্মান জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে/মনে পড়ছে তোমায়, আমায় ডেকো না/ফেরানো যাবে না, যেখানে সীমান্ত তোমার/সেখানে বসন্ত আমার- এমন অনেক গানের স্রষ্টা লাকী আখান্দ। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও সংগীতের প্রিয় ব্যক্তিত্ব। অনেক কণ্ঠশিল্পীই তার লেখা ও সুর করা গান গেয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
গত ২১ এপ্রিল সন্ধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন লাকী আখান্দ। কেউ কেউ তার মরদেহ দেখতে এলেও অনেকেই ছিলেন অনুপস্থিত। পরদিন তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর আনা হলেও সংগীতের সুপরিচিতরাসহ বর্তমান প্রজন্মের তেমন কাউকে দেখা যায়নি।
সর্বশেষ সোমবার ছিল তার কুলখানি। সেখানেও সংগীতের বেশিরভাগ মানুষকেই পাওয়া যায়নি। এ অবস্থা দেখে রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম।
শুধু তিনিই নন, সংগীতে লাকী আখান্দের বড় অবদান থাকার পরও তাকে শ্রদ্ধা জানানোতে কৃপণতায় সবসময় লাকী আখান্দের পাশে থাকা সংগীতজনরা হতাশ হয়েছেন।
চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে তারা রীতিমত ক্ষোভ জানিয়েছেন।
শেখ সাদী খান, সংগীত পরিচালক
আশির দশকের ঝড় তোলা সংগীতশিল্পী লাকী। তার লেখা ও সুর করা গান গেয়ে কত শিল্পীই যে বিখ্যাত বনে গেছেন তার কোনো হিসাব নেই।
কিন্তু এখন অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যেন লাকী আখান্দ সংগীতের একদম নগণ্য কেউ। তার মৃত্যুর পর কোনো আয়োজনেই সংগীতের তেমন কাউকে পাওয়া যায়নি।
যারা তার গান গেয়ে বিখ্যাত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই তাকে ভুলে গেছেন। সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধটুকুও উঠে গেছে। বিষয়টি খুব পীড়া দিচ্ছে।
বাপ্পা মজুমদার, সংগীতশিল্পী
অনেক অনেক শিল্পীর কণ্ঠে হৃদয়ছোঁয়া সুর তুলে দিয়েছেন লাকী ভাই। তার মৃত্যুর পর আনুষ্ঠানিকতাগুলোতে অনেকেই আসেননি। একটা কারণ হতে পারে, বিরূপ আবওহাওয়া। আবার এটাও ঠিক ভালোবাসাকেতো আটকে রাখা যায় না।
তিনি সংগীতকে ভালোবেসেছিলেন। কোনো কিছু পাওয়ার আশা করেননি এটা ঠিক। কিন্তু সংগীতের মানুষের তাকে কতটুকু ভালোবেসেছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
তিনি যে গানগুলো উপহার দিয়ে গেছেন তাতে সবার মণিকোঠায় থাকার কথা। আমরা আসলে গুণী মানুষকে শ্রদ্ধা জানাতে কৃপণ হয়ে গেছি। আমাদের মধ্যে শ্রদ্ধা জানানোর চর্চাটা একদমই কমে গেছে।
ফুয়াদ নাসের বাবু, কীবোর্ডিষ্ট, ফিডব্যাক
আমি লাকী ভাইয়ের গান গাইনি। কিন্তু তার গানের সঙ্গে কী-বোর্ড বাজিয়েছি।
তার মতো উদার মানুষ খুব কমই দেখেছি। প্রাণ খুলে তিনি ভালোবেসেছেন সবাইকে। সংগীতকে যে গানগুলো তিনি উপহার দিয়েছেন তাতে তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আমার পর্বতসম।
জীবিত থাকতেও যে সংগীতের সবাই তার খোঁজ খবর নিয়েছেন তা নয়। তিনি মরে যাওয়ার পরও আনুষ্ঠানিকতায় না থাকায় আমি একটু অবাকই হয়েছি।
লাকী ভাইকে জীবিত অথবা মৃত কোনো অবস্থায়ই আমরা সম্মান দিতে পারছি না।
ছবি: সংগৃহীত