চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

প্রয়াত সুরকার সুবল দাস এবং ‘এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না’ গানের গল্প

KSRM

চলচ্চিত্রের অসংখ্য জনপ্রিয় ও মিষ্টি গানের সুরকার সুবল দাস। ২০০৫ সালের ১৬ আগস্ট প্রখ্যাত এই সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক প্রয়াত হন। তার সুরের অসংখ্য জনপ্রিয় গানের ভীড়ে একটি বিখ্যাত প্রাণবন্ত গান ‘এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না।’ কিংবদন্তী শিল্পী রুনা লায়লার কণ্ঠে গাওয়া এই গানটি এখন পর্যন্ত একবিন্দু শ্রেষ্ঠত্ব হারায়নি। রুনা লায়লা এখনও কোনো মঞ্চে উঠলেই এই গানটি গাওয়ার অনুরোধ আসবেই।

এই গানটি এফ কবির চৌধুরী পরিচালিত ‘নরম গরম’ ছবিতে ব্যবহ্নত হয় আশির দশকে। গানটির গীতিকার প্রয়াত বিখ্যাত সাংবাদিক ও কাহিনীকার আহমেদ জামান চৌধুরী। ‘নরম গরম’ ছবিতে গানটিতে লিপ করেন আশির দশকের জনপ্রিয় নায়িকা অঞ্জু ঘোষ। চলচ্চিত্রের গানের বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন বৃষ্টি নিয়ে এ যাবৎ যত গান রচিত হয়েছে তার মধ্যে সুরেলা ও ছন্দময়ের এই গানটি সবচেয়ে বেশি শ্রুতিমধুর এবং জনপ্রিয়। অবশ্য ইউটিউবে গেলে সে প্রমাণও পাওয়া যায়। এই গানের শ্রোতার সংখ্যা লক্ষ লক্ষ।

Bkash July

সিনেমার স্বর্ণযুগে অঞ্জু ঘোষ ও ওয়াসিম অভিনীত ‘নরম গরম’ ছবিটি মুক্তি লাভ করে ১৯৮৪ সালে। ‘নরম গরম’ ছবিটি সেসময় দারুণ ব্যবসা সফলও হয়। ছবিটি ব্যবসা সফল হওয়ার পেছনে এই শ্রুতিমধুর সুরের গানটিও বড় ভূমিকা রাখে। সে বছর এই ছবিটি মুক্তি লাভের পরপরই দর্শক- শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরতে থাকে এই গানটি। এখনও গানটি আগের মতোই। প্রায় ৪০ বছরে জৌলুস হারায়নি। সিনেমার সিকোয়েন্স অনুযায়ী অবাধ্য জমিদার পুত্রের (ওয়াসিম) মন জয় করতে স্ত্রী (অঞ্জু ঘোষ) এই গানটি নেচে-গেয়ে শোনান। বৃষ্টিভেজা নাচের দৃশ্যে নায়িকার লিপে (অঞ্জু ঘোষ) এই গানটি সেসময় সর্বত্র এক অন্যরকম অনুরণন তোলে।

নরম গরম ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন আগে এই গানটি টু ট্র্যাকে রুনা লায়লার কণ্ঠে রেকর্ড করা হয় মগবাজারে খান আতার শ্রুতি স্টুডিওতে। গানটির রিহার্সেল আর ফাইনাল টেক নিতে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। এই গানে মিউজিশিয়ান হিসেবে যন্ত্রসঙ্গত করেন মো. নুরুল হক (বেনজু), মিলন ভট্টাচার্য (তবলা), সাদেক আলী (ঢোল), কাজী হাবলু (কঙ্গো), সেলিম হায়দার (গিটার), কী-বোর্ড (নাদিম হায়দার), পিয়ারু খান (রিদম ড্রাম)। এই গানটির প্রিলিউড (সূচনা পর্ব) এবং ইন্টারলিউড (বিরতি পর্ব) পর্বে মো. নুরুল হক আমেরিকান বেনজুতে যে অনবদ্য সুর তোলেন তা গানটি শ্রুতিমধুর করতে বড় এক ভূমিকা রাখে।

Reneta June

রাজশাহীর মানুষ মো. নুরুল হক এখনও সঙ্গীত নিবেদিত প্রাণ। বেশ কয়েকটি সিনেমার সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। তবে বর্তমানে সুরকার হিসেবেই নিজেকে বেশি মনোযোগী রেখেছেন। প্রখ্যাত সুরকার সুবল দাসের সাথে তিনি প্রায় চলচ্চিত্রের একহাজার মতো গানে যন্ত্রসঙ্গত করেছেন বলে জানান। তিনি মূলত সন্তর, বেনজু, মেন্ডোলিন বাদক। ‘এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না’ গানটিতে তিনি আমেরিকান বেনজু বাজিয়েছিলেন।

সুবল দাসের নির্দেশনায় গানটির প্রিলিউড (সূচনা পর্ব) এবং ইন্টারলিউড (বিরতি পর্ব) পর্বে পিসটি সাজিয়েছিলেন তিনিই। এই জনপ্রিয় গানটির রেকর্ডিং-এর স্মৃতি মনে করে তিনি বলেন, তখন সিনেমার গানের স্বর্ণযুগ। সুরকার, শিল্পী, গীতিকার, মিউজিশিয়ান কারো দম ফেলার সময় নেই। দিনরাত রিহার্সেল আর রিহার্সেল। প্রতিদিনই একাধিক গানের রেকর্ডিং থাকে। ঠিক এরকম এক মুহূর্তেই এই গানটির রেকর্ডিং করা হয়। মো. নুরুল হক বলেন, ‘সুবল দা এই গানটির সুর শোনানোর পর শ্রুতি স্টুডিওতে আমরা একটানা তিন ঘণ্টা রিহার্সেল করি। এরপর শিল্পী রুনা লায়লা আসেন। গানটি ফাইনালি টেক করা হয়। ঐ সময়ই আমরা বলতে থাকি এই গানটি সুপার হিট করবে। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর হাটে-মাঠে-ঘাটে এই গানটি শুনতে থাকি। নরম গরম ছবিটিও দুর্দান্ত ব্যবসা সফল হয়।’

নুরুল হক আরও বলেন, ‘এই গানটির ৪০ বছর পূরণ হবে অচিরেই। কিন্তু গানটির জনপ্রিয়তা, কদর কিছুই কমেনি। এখনও এই গানটি আগের মতোই সজীব। রুনা আপা মঞ্চে উঠলে এই গানটি গাওয়ার অনুরোধ আসবেই। ভালো লাগে যে এই গানটি আমাদের হাতে তৈরি। এই গানটির ইতিহাসের অংশ আমিও। গত ১৬ আগস্ট আমাদের প্রিয় সঙ্গীতগুরু সুবল দাসের মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। দাদা চলে গেলেও এই গানগুলোই তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে ভীষণরকম।’

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

I Screen Ami k Tumi
Labaid
Bellow Post-Green View