প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা কর্তৃক চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন দেশের যোগাযোগ খাতের জন্য আরেক মাইলফলক এবং এটি যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই এক্সপ্রেসওয়েটি চট্টগ্রামের বাসিন্দা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগের উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ায় চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এটি চালু হওয়ার ফলে ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া যাবে মাত্র ২০ মিনিটে। এতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রুটের বিমান যাত্রীরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি চট্টগ্রাম শহরের যানজটও কমবে।
যানজটের কারণে জ্বালানি তেলের অপচয়, মানুষের কর্মঘণ্টার অপচয় ও ফ্লাইট মিস হওয়াসহ প্রতি বছর হয় যে ক্ষতি হয়, টাকার অঙ্কে তা নিরূপণ করা যাবে না।
বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রথম দরকার ছিল একটি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই সরকার এ বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েই গত এক যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তৈরি করেছে নতুন এক মাইলফলক।
যোগাযোগব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের মানুষও মেট্রোরেলে চড়ছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে অতিদ্রুত ছুটে চলছে, যা কিছুদিন আগেও ছিল স্বপ্ন। সরকার ওই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছে।
বর্তমান সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টায় ঢাকাসহ আরও বেশ কিছু শহর আধুনিক শহরে রূপ নিয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন তারই ইঙ্গিত বহন করছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেরিন ড্রাইভসহ উন্নত দেশগুলোর মতো সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার নেটওয়ার্কে এসেছে বাংলাদেশ। বর্তমান সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক কল্পগুলোর আওতাধীন যোগাযোগ অবকাঠামোর এ বিশাল প্রকল্পটি ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচলে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, যা রাজধানীসহ অন্যান্য নগরে বসবাসকারী সাধারণ জনগণসহ উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের সার্বিক কার্যক্রমে বহুমাত্রিক পরিবর্তন আনবে।
যানজটের কারণে পূর্বে যে শ্রমঘণ্টা নষ্ট হতো তা অনেকাংশে কমে আসবে। যাত্রী, সাধারণ জনগণ, বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তারা এই প্রকল্প থেকে আগামী দিনগুলোতে বেশ উপকৃত হবেন। কারণ এটি স্থানীয় আন্তসংযোগ জোরদার করার পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচল নিশ্চিত করবে এবং নগরবাসীর উপর ট্রাফিক জ্যামের নেতিবাচক প্রভাব অনেকটাই কমিয়ে আনবে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে সড়ক, রেল, আকাশ ও নৌপথকে সমান গুরুত্ব দিয়ে একটি আন্তর্জাতিকমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ চলছে।
শুধু তা-ই নয়, বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল দিয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সরাসরি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। কক্সবাজারে পৌঁছে গেছে ট্রেন। পর্যটন শিল্পকে মাথায় রেখে তিন উন্নয়নবঞ্চিত পার্বত্য জেলায় যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে সরকার।
পাহাড়ের প্রত্যেককে যোগাযোগ নেটওয়ার্কে আনা হয়েছে। সিঙ্গাপুর-ব্যাংককের আদলে সাজানো হবে কক্সবাজারকে। সমুদ্রের জলে রানওয়ে নির্মাণের গ্রাউন্ড-ব্রেকিংয়ের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।বিশ্বের উপকূলীয় শহরে অবস্থিত সেরা বিমানবন্দরের মধ্যে অন্যতম হবে কক্সবাজার বিমানবন্দর।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশের শুধু যোগাযোগখাতে না, দেশের অর্থনৈতিক পরিমন্ডলেও ব্যাপক অবদান রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে এই উড়াল সড়ক দেশের জন্য নতুন দিগন্তের দুয়ার খুলে দেবে এবং সরকারের যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিশন রয়েছে, সেই লক্ষ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে লং ডিস্টেন্স যে বাণিজ্য, সে ক্ষেত্রে গতি আনতে হবে। আর এই কারণে এই উড়াল সড়ক আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অনেক বড় একটি ভূমিকা পালন করবে। তবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সড়ক, রেল, আকাশ ও নৌপথসহ পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই কেবল আসল ফল মিলবে।
এক্সপ্রেসওয়ের পুরো সুবিধা পাওয়ার জন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এক্সপ্রেসওয়ের সম্পূর্ণ চালু হয়ে গেলে আমাদের যোগাযোগ খাতে যেমন বিপ্লব হবে, তেমনি আমাদের অর্থনৈতিক খাতও সমৃদ্ধ হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)