গত কিছুদিন ধরেই চীনের সুপার লিগের বিভিন্ন ক্লাবে বিদেশী ফুটবলাররা যাচ্ছেন। ব্যাপারটা যেন এমন, চীনের যে ক্লাবের যাকে পছন্দ, তাকে তারা কিনেই ছাড়বে, টাকা কোনো বিষয় নয়!
চীনা সুপার লিগ শুরু হয় ২০০৪ সালে ১৬টি ক্লাব নিয়ে। এতে ইউরোপ, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকা থেকে খেলোয়াড়রা যাচ্ছেন।
বিশ্ব ফুটবলে এশিয়া অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া। চীন এখনো ফিফা র্যাংকিং এ ৮২ নম্বরে। তারা ২০০২ সালে একবার মাত্র বিশ্বকাপে খেলেছে।
বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিংয়ের ফুটবল-প্রেম চীনা ফুটবলে অর্থের ঝনঝনানিটা অনেক বেশী বাড়িয়ে দিয়েছে আচমকাই। সুপার লিগের জন্য আগামী পাঁচ বছরের টিভি স্বত্ব বিক্রি হয়েছে ৮৩ কোটি পাউন্ডে, পূর্বের অংকের তুলনায় যা কিনা ৩০ গুণ বেশী।
আলোচনা তুঙ্গে চীন কি পারবে ফুটবলের ফুল ফোটাতে। সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েট প্রেসে (এপি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, চীনের রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিং চায় ২০৫০ সালের বিশ্বকাপ ঘরে তুলতে। এজন্যই তারা ফুটবলের মান বাড়ানো প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় ক্রীড়া বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক পাং শাইজিং এপিকে জানিয়েছেন এটা খুবই অভূতপূর্ব ব্যাপার যে চীনের ফুটবল এগিয়ে চলেছে। সামনেই আমরা বিশ্ব শাসন করব।
চীনা ফুটবল কিন্তু শুধুমাত্র তারকা খেলোয়াড় কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে নি। ইতিমধ্যে তারা রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক কোচ ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনি ও ব্রাজিলের সাবেক বস লুইস ফিলিপস স্কলারি ও ইংল্যান্ডের সাবেক বস গোরান এরিকসনকেও ক্লাবে ভিড়িয়েছে।
এপি আরো জানিয়েছে, চীনের মন্ত্রীর সভার বৈঠকে স্কুল ফুটবল, একাডেমী, বয়স ভিত্তিক ফুটবল লিগ, বয়স ভিত্তিক খেলোয়াড় অন্বেষণ, ফুটবল উন্নয়নের সূচী সহ বিভিন্ন প্রদেশে বেশ কিছু খেলার মাঠ করা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ২০২০ সালের মধ্যে।
তেভেজের সাংহাই শিংহুয়াতে যোগ দেওয়ার আগে চাইনিজ সুপার লীগের ক্লাব সাংহাই এসআইপিজি’তে যোগ দিয়েছেন চেলসির ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অস্কার।
আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড এজাকুয়েল লাভেজ্জি সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন হেবেই ফরচুন এ। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে গুয়াংজু এভারগ্রান্ডের ক্লাবে উড়ে এসেছেন জ্যাকসন মার্টিনেজ, চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ব্রাজিলের মিডফিল্ডার পাউলিনহো।
চেলসিতে থাকা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ বিজয়ী মিডফিল্ডার রামিরেস এসেছেন জিংয়াংশু ক্লাবে। শাখতারের এলেক্স তেক্সেরিয়া এসেছেন জিইয়াংশু ক্লাবে।
আর এই লীগে যোগ দিতে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি, ওয়েন রুনি, জ্বাতান ইব্রাহিমোভিচ এবং এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকেও।
সবচেয়ে মজার বিষয় হল কেউই তাদের পুরাতন ক্লাবে অবহেলিত ছিলেন না। এমনকি তাদের বয়সও খুব বেশি নয়। লাভেজ্জি এবং মার্টিনেজ বাদে সবার বয়স ৩০ এর নিচে।
এতদিন বিশ্বখ্যাত ফুটবলারদের তীর্থক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হতো ইংল্যান্ড, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইতালির লীগগুলোকেই। দলবদলের বাজারে অফুরন্ত টাকা উড়িয়ে এসব লীগের ক্লাবগুলোকেই দেখা যেত বিশ্বসেরা সব ফুটবল প্রতিভাকে দলে টেনে নিতে। কিন্তু হঠাৎ করেই ফুটবল বিশ্বে চমক হয়ে আসে চাইনিজ সুপার লীগ। ১২ বছরে পা দিতে না দিতেই দলবদলের বাজারে বর্তমানের অনেক প্রতিভাবান এবং তারকা খেলোয়াড়কে কিনে নিয়েছে চীন।
ফুটবল থেকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা নতুন করে কিছু বলার নাই। ইউরোপের ক্লাব গুলোর হিসাব ও রেভেনিউই বলে দেয় এর সাথে শুধু অর্থনীতি নয় আজকাল রাজনীতিও জড়িত। সুতরাং এশিয়ার উঠতি পরাশক্তি চীনও নিশ্চয়ই এ হিসাবের অংকটা বেশ ভাল ভাবেই কষতে জানে। এমনিতেই চীনের বড় দুটি ক্লাবের মালিক খোদ সরকার।