চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ছাত্রলীগের সম্মেলনে বয়স ও নারী নেতৃত্ব নিয়ে যা জানা গেল

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ৩০তম সম্মেলনে নতুন নেতৃত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতি, সম্ভব্য ডাকসু নির্বাচন ও বিএনপির নির্বাচন কেন্দ্রিক দেশব্যাপী চলমান রাজনৈতিক আন্দোলন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বয়সে তরুণ এবং নারী নেতৃত্ব নিয়ে সংগঠনের ভেতরে-বাইরে আলোচনা চলছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সব ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ প্রসংশিত। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল স্থাপন করা, প্রতিটি উপজেলায় সরকারি কলেজ স্থাপন করায় নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সমান হয়েছে। এই সরকারের আমলে এসএসসি, এইচএসসি ও অনার্স নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় সমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সমান।

ছাত্রলীগ প্রগতিশীলদের ধার‌‌‌বাহক হলেও সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কখন আসেনি নারী নেতৃত্ব। বাংলাদেশে বড় দুই রাজনৈতিক দলের ছাত্রদের নেতৃত্বে কখনও আসেনি নারী নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই পদেই নারী নেতৃত্বও দেখা গেছে।

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মারুফা আক্তার পপি, তিনি সেসময় প্রসংশিত হন। তখন তাকে সভাপতি পদে নির্বাচিত করার দাবীও উঠে, তবে বিরোধী দলে থাকায় আর হয়ে উঠেনি। এর পর ২৮তম কাউন্সিলে তখনকার সহ-সভাপতি শারমিন সুলতানা লিলি, সাংগঠনিক সম্পাদক আফরিন নুসরাত ও ২৯তম কাউন্সিলে সহ-সভাপতি চৈতালী হালদার আলোচনায় ছিলেন। এবার বর্তমান কাউন্সিল সহ-সভাপতি তিলোত্তমা সিকদার আলোচনায় আছেন। এবারের সম্মেলনেও ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রসংগঠনটি মধ্যে থেকে নারী নেতৃত্ব দাবি উঠেছে।

অন্যদিকে এবারের সম্মেলনে বয়সের কারণে শীর্ষ পদপ্রার্থীদের একটি বিরাট অংশ ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৭ বছরের বেশি কেউ পদপ্রার্থী হতে পারেন না। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের পদপ্রার্থীদের বয়সসীমা ১ বছর বাড়িয়ে ২৮ বছর করেছিলেন। এ বছর বয়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি।

নারী নেতৃত্ব নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভাবনা
ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনে আলোচনায় থাকা ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহসভাপতি তিলোত্তমা শিকদার বলেন, ‘ছাত্রলীগে নারী পুরুষের কোনো ভেদাভেদ নেই, লিঙ্গ সমতায়ন ও সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাবার প্রত্যয়ে ছাত্রলীগ রাজনীতি করে। নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা সরকার সবসময় কাজ করেছেন। নারী নেতৃত্ব নয়, স্ব যোগ্যতায় ছাত্রলীগের নারী সদস্যরা যেকোন ইউনিটে নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা রাখে।’

ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও মুহসীন হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করেছেন। ছাত্রলীগ নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিতে আদর্শিক লড়াই চালিয়ে আসছে। যোগ্যতা সম্পন্ন যে কেউ নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রাখেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘নারীদের ক্ষমতা নিশ্চিতে ছাত্রলীগ যুগ যুগ ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ডাকসুতে সর্বোচ্চ নারী শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। ছাত্রলীগে অনেক যোগ্যতা সম্পন্ন নারী নেতৃত্ব রয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘নারীদের মধ্যে অনেকেই নিজ যোগ্যতায় শীর্ষ নেতৃত্বে আছেন। তবে তৃণমূলে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো জরুরী। ’

পিরোজপুরের স্বরুপকাঠী উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি প্রিয়াংকা প্রভা হালদার বলেন, ‘তৃণমূল বা জেলা উপজেলার কমিটিতে নারীরা উপেক্ষিত রয়ে যায় যোগ্যতা থাকার পরেও। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। অথচ এই পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে অবিকাশিত রয়ে গেছে রাজনীতিতে নারীর অবস্থান। সমাজ ও রাজনীতিতে নারীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে, অধিকার আদায়ে রাজনৈতিক ক্ষমতায় অংশগ্রহণ ছাড়া বিকল্প পথ নেই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘বয়সের সিনিয়ররা রাজনীতি করেন। পাইপলাইনে অনেক মেধাবী সাংগঠনিক নেতৃত্ব থাকার পরেও তারা নেতা হতে পারেন না। অনেক সিনিয়র নেতারা ছাত্রত্ব ধরে রাখতে বছরের পর বছর ফেল করে থাকেন। কারো বিরুদ্ধে হলফনামার মাধ্যমেও বয়স পরিবর্তনের অভিযোগ রয়েছে। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী হিরা সরকার বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে বিধান রয়েছে বয়সের তা যেন নির্ধারিত থাকে। তরুণ নেতৃত্ব গতিশীল ও সাংগঠনিকভাবে চঞ্চল থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।’

বয়স নিয়ে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে যা আছে
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের প্রথম ভাগে প্রাথমিক সদস্যের যোগ্যতায় রয়েছে:

ক) অনূর্ধ্ব ২৭ বছর বয়সী বাংলাদেশের যেকোন বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা বোর্ড কতৃক স্বীকৃত যে কোন যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র বা ছাত্রী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্য হতে পারেন। প্রতি শিক্ষাবর্ষে সদস্যপদ নবায়ন করা বাঞ্ছনীয় ।

খ) সদস্যপদ লাভের জন্য কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্ব স্ব জেলা শাখার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সংসদের নির্ধারিত সদস্যভুক্তির নিয়ম অনুযায়ী শপথপত্রে স্বাক্ষর করে সদস্যপদ গ্রহণ করতে হবে।

গ) যেকোন নিয়মিত ছাত্র (৫ এর ক উপ ধারা অনুযায়ী) ছাত্রলীগের কর্মকর্তা ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য হতে পারে। সরকারি চাকুরীতে নিয়োজিত কোন ছাত্র ছাত্রলীগের কর্মকর্তা হতে পারবে না। চলতি কার্যকালের মধ্যে কারো ছাত্রজীবন ব্যত্যয় দেখা দিলে নির্বাহী সংসদ তার সদস্যপদ বাতিল বা মেয়াদ পর্যন্ত বহাল রাখতে পারে।

ঘ) ছাত্রলীগের স্বার্থে বা সাধারণ ছাত্রসমাজের স্বার্থে কোন সদস্য বা কর্মকর্তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত অথবা কারারুদ্ধ হলে এই বিপর্যয়ের প্রমাণ সাপেক্ষে উক্ত সদস্যের বা কর্মকর্তার সদস্যত্ব বা কর্তৃত্ব দুই বছর পর্যন্ত বহাল থাকতে পারে। বহিষ্কার বা কারারুদ্ধ হবার দিন থেকে এই হিসাব গণনা করা হবে । তবে এই ব্যাপারে নির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে ।

রাজনৈতিক সংগঠনে নারী নেতৃত্বের বিষয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ মারুফা নাবিলা বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি একজন নারী। তবে আওয়ামী লীগের অন্যান্য ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে নারীরা পদে আসতে পারেন না। ব্যাপারটা অনেকটা গ্লাস সিলিংয়ের মতো, যোগ্যতা থাকার পরেও তাদের পদায়ন করা হয় না। বাম ছাত্র সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব নারীদের দেখা যায় । আমরা যদি সামাজিক ও টেকসই উন্নয়নের কথা বলি সেক্ষেত্রে নারীকে পিছিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। একইভাবে নারীর ক্ষমতায়ন যদি চিন্তা করা হয় তবে এসব সংগঠন ও মূলদলে নারীরা অবশ্যই শীর্ষ পদে থেকে সংগঠনকে পরিচালনা করার মতো যোগ্যতা রাখে।

ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য সংগঠনে নারী নেতৃত্বে বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীনেতৃত্বকে সবসময় উদ্বুদ্ধ করেন। নারী বা পুরুষ নয়, যোগ্যতা ও সাংগঠনিক যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্বের মূল্যায়ন হয়ে থাকে।’

ছাত্রলীগের বয়স সীমা বাড়ানো হবে কি না
এবারের সম্মেলনে ছাত্রলীগের বয়সসীমা ছাড় দেয়া হবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বয়সের বিষয় নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি দলীয় সভানেত্রীর ওপর নির্ভর করছে।

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক জানান, বয়সসীমা বৃদ্ধি নিয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্ধারণ করবেন। গত সম্মেলনে বয়স এক বছর বাড়ানো হয়েছিল।