মিয়ানমার থেকে আসা সীমান্ত বাণিজ্যের মালামাল বোঝাই একটি কার্গো বোট টেকনাফের স্থল বন্দর থেকে উধাও হওয়ার ঘটনায় ব্যবসায়ীরা মালামালের নিরাপত্তাসহ বেশ কিছু দাবি নিয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে টেকনাফ স্থলবন্দরে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সুত্রে জানা যায় গত বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমার থেকে ৭০০ বস্তা সুপারি ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে সাদ্দাম হোসেন, ফারুক ও শওকত নামের তিন ব্যবসায়ী টেকনাফ স্থলবন্দরে আসে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মালামাল সহ কার্গো বোটটি বন্দরে এন্ট্রি করা হয়। ঐদিন রাতেই মালামালসহ বন্দরের ঘাট থেকে কার্গো বোটটি উধাও হয়ে যায়। পরের দিন নাফ নদী থেকে ৫৭৪ বস্তা সুপারি ও ৮০ বস্তা কপিসহ একটি কার্গো বোট পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বিজিবির সদস্যরা মামলা দিয়ে পণ্যসহ কার্গো বোটটি টেকনাফ শুল্ক গুদামে জমা দেয়।
এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থল বন্দর থেকে মালামালবাহী একটি কার্গো বোট উধাও হওয়ার ঘটনাকে অন্যায় দাবি করে টেকনাফ স্থল বন্দরের ব্যবসায়ী ও আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ধর্মঘটের ডাক দেয়ায় সপ্তাহের প্রথম দিন আজ রোববার মিয়ানমার থেকে আসা টেকনাফ স্থলবন্দরে কোন পণ্যবাহি ট্রলারের মালামাল খালাস হয়নি।
এ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ রোববার বিকেল পর্যন্ত বন্দরে মিয়ানমার থেকে ৩৫ টি মালামাল বোঝাই কার্গো বোট মালামাল খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। ৩৫টি কার্গো টলারে রয়েছে কোটি টাকার পচনশীল পণ্য। ফলে একদিনে সরকার বঞ্চিত হয়েছে ৪ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে।

উদ্ভুত এই পরিস্থিতিতে রোববার বিকেলে স্থলবন্দরে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ স্থলবন্দর কতৃপক্ষের কার্যালয়ে একটি বৈঠক বসে। ব্যবসায়ীরা জানান ৭০০ বস্তা সুপারি ও অন্যান্য পণ্য সহ একটি কার্গো বোট বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দরে এন্ট্রি হয়। ঐদিন রাতে কার্গো বোটটি উধাও হয়ে যায়। পরে বিজিবি নাফ নদী থেকে ঐ কার্গো বোট উদ্ধার করে। তারা অভিযোগ করেন রাতেই ঐ কার্গো বোট থেকে শতাধিক বস্তা সুপারি চুরি হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টেকনাফ স্থলন্দরের ভেতরে খোলা জায়গা খাঁ খাঁ করছে। বন্দরে তেমন কোনো যানবাহন নেই। জেটিগুলো খালি পড়ে থাকলেও নোঙর করে রয়েছে পণ্যভর্তি একাধিক কার্গো ট্রলার ও জাহাজ।
ধর্মঘটের বিষয়টি নিশ্চিত করে টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর জানান,সকাল থেকে কোন পণ্য উঠানামা হয়নি। এ নিয়ে আমাদের একটি বৈঠক হয়েছে। তিনি জানান বন্দরের জেটি ঘাট থেকে মালামাল সহ কার্গো বোট উধাও হওয়ার ঘটনা সত্যিই উদ্বেগ জনক। এ ঘটনায় মিয়ানমারের আকিয়াবের ব্যবসায়ীরা পণ্য রপ্তানিতে শংকা প্রকাশ করছে।
তিনি অভিযোগ করেন বৃহস্পতিবার পণ্য সহ কার্গো বোট উধাও হয়ে গেলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্য উদ্ধারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
পণ্য আমদানি কারক সাদ্দাম হোসেন জানিয়েছেন টেকনাফ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় পণ্য সহ কার্গো বোট উধাও হয়ে গেছে। এমনকি কার্গো বোট থেকে শতাধিক বস্তা সুপারি ও অন্যান্য মালামাল চুরি হয়ে যায়। এতে করে তিনি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
বিকেলে টেকনাফ বন্দর ভবনে বৈঠক শেষে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, টেকনাফ স্থল বন্দর ব্যবহারকারীসহ সকল পক্ষদের নিয়ে সভা হয়েছে। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা চলছে। শীঘ্রই বন্দরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।
বর্তমানে স্থলবন্দরের জেটিতে বেশ কয়েকটি কার্গো ট্রলার ও জাহাজভর্তি মালামাল রয়েছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের দাবি আদায়ের জন্য আজ সারা দিন কাজ বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকেরা। কারণ, মালামাল ওঠানামা না হলে অনেকের ঘরে চুলা জ্বলবে না বলে জানান স্থলবন্দরের শ্রমিক হেফজু রহমান।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আমিন আর পারভেজ বলেন, স্থল বন্দরের অচল অবস্থা দূর করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।