বিগত দুই দশকে ভারতের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক ক্রমেই ভালো হয়েছে। দূর হয়েছে পুরনো তিক্ততা। তবে কানাডায় খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার এর মৃত্যুর জেরে সেই সম্পর্ক অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নিজ্জার হত্যা ইস্যুতে আমেরিকার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে কানাডা।
বুধবার ২০ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সংবাদ হিন্দুস্তান টাইমস এর প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশে গত জুন মাসে হত্যা করা হয়েছিল খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে। এই ঘটনায় মার্কিন গোয়েন্দাদের থেকে কানাডা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে বলে জানিয়েছে সেদেশের সরকারি সূত্র।
দু’দেশ এই ঘটনার তদন্তে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে দাবি করা হয়েছে একটি রিপোর্টে। এছাড়াও কানাডা দাবি করছে, এই হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় এজেন্টের ‘র’ যোগ থাকার প্রমাণ তাদের হাতে এসেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা এখন গোপন রাখা হচ্ছে বলেও দেশটির সরকার জানায়।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দাবি করেছিলেন, খালিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যার ঘটনায় ‘ভারতের সম্ভাব্য যোগের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ’ রয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে নিজ্জারের হত্যার ঘটনাটি ব্রিটেন, আমেরিকার মতো জি-৭ গোষ্ঠীভুক্ত ঘনিষ্ঠ দেশগুলোকে জানিয়েছে কানাডা। কানাডায় নিযুক্ত ভারতের এক কূটনীতিককেও বহিষ্কার করেছে কানাডা সরকার। যার পরিপ্রেক্ষিতে কানাডার এক কূটনীতিককেও দেশ ছাড়তে বলেছে ভারত।
জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘কানাডার নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জারের মৃত্যু নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তদন্ত চালাচ্ছে দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। এই ঘটনায় ভারত সরকারের এজেন্টদের যুক্ত থাকার সম্ভাব্য যোগসূত্রের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত চলছে। কানাডায় আইনের শাসন চলে। আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা এবং আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার।’
এদিকে এই ইস্যুতে ব্রিটেন কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চায়নি সরাসরি। তবে আমেরিকার পক্ষ থেকেও এই ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকশ করা হয়েছে। এই নিয়ে হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো যে অভিযোগগুলো করেছেন তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা কানাডার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। কানাডার তদন্ত এগোচ্ছে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে নিজ্জার হত্যা মামলায় ভারতযোগ নিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের বিরোধীতা করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতির মাধ্যমে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, কানাডার মাটিতে যে ভারত বিরোধী কার্যকলাপ চলছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের। কানাডা সরকারের উচিত সেই সব কার্যকলাপ বন্ধ করা। কানাডায় এমনিতেই হত্যা এবং অন্যান্য সংগঠিত অপরাধ ঘটেই থাকে। এই আবহে কোনও হত্যার সাথে ভারতকে যুক্ত করার প্রচেষ্টা অমূলক। খালিস্তানিদের বাড়বাড়ন্ত থেকে নজর ঘোরাতেই এটা করা হচ্ছে বলেও দাবি করছে দেশটির মন্ত্রণালয়।