চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

চীন কি পারবে এআই’তে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যথেষ্ট উদ্বেগ হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে। এর ফলে চলতি সপ্তাহে হয়ে যাওয়া জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে একটি এজেন্ডা তৈরি করেছে শীর্ষ নেতারা। এআই এর ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনা করে এই প্রযুক্তিতে চীনের সীমাবদ্ধতা নিশ্চিত করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

আপাতত, যুক্তরাষ্ট্র এআই ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে আছে এবং সম্ভাবনা রয়েছে , চীনে সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানির ওপর বর্তমান বিধিনিষেধ বেইজিংয়ের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে আরও বাধা দিতে পারে।

কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ধরে ফেলতে পারে, কারণ এআই প্রযুক্তি নিখুঁত হতে সময় নেয় কয়েক বছর।

ট্রিভিয়াম চায়নার টেক পলিসি রিসার্চ বিভাগের প্রধান কেন্দ্র শেফার বলেছেন, চীনের ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট কোম্পানির তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। এটি নির্ভর করে আপনি কীভাবে অগ্রগতি পরিমাপ করছেন তার ওপর।

সিলিকন ভ্যালি ফ্যাক্টর
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল সিলিকন ভ্যালি। যেখানে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক উদ্যোক্তা রয়েছে। এটি গুগল, অ্যাপল এবং ইন্টেলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের জন্মস্থান।

হংকং ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক প্যাস্কেল ফাং বলেছেন, এখানকার উদ্ভাবকদের গবেষণাসহ বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করা হয়ে থাকে।

ফাং বলেছেন, সিলিকন ভ্যালির গবেষকরা প্রায়শই পণ্যের কথা মাথায় না রেখে প্রযুক্তির উন্নতি করতে বছরের পর বছর সময় ব্যয় করেন। যেমন, ‘ওপেন এআই’ একটি অলাভজনক কোম্পানি হিসেবে বছরের পর বছর ধরে কাজ করে আসছে। কারণ এটি ট্রান্সফরমার মেশিন লার্নিং মডেল নিয়ে গবেষণা করে আসছিল যা অবশেষে ‘চ্যাট জিপিটি’ তৈরি করে।

তিনি বলেন, অধিকাংশ চীনা কোম্পানিতে এই ধরণের পরিবেশ কখনোই ছিল না। তারা জনপ্রিয়তা যাচাই করার পরেই কোনকিছু নিয়ে কাজ করে। এটি চাইনিজ এআই-এর জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।

মার্কিন বিনিয়োগকারীরাও দেশটির গবেষণাকে সমর্থন করেছে। ২০১৯ সালে, মাইক্রোসফ্ট ওপেন এআই’তে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা জানায়।

মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা বলেছেন, এআই আমাদের সময়ের সবচেয়ে রূপান্তরকারী প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে একটি।

চীনের প্রেক্ষাপট
চীনের একটি বিশাল গ্রাহক শ্রেণী রয়েছে। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশ। প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের বাসস্থান।

রেস ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট ফার্মের অংশীদার এডিথ ইয়ং বলেছেন, চীনের একটি সমৃদ্ধ ইন্টারনেট খাতও রয়েছে। যেমন, দেশের প্রায় সবাই ‘উইচ্যাট’ ব্যবহার করে। এটি বার্তা পাঠানো থেকে শুরু করে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া এবং ট্যাক্স দেয়াসহ সবকিছুর জন্যই ব্যবহার করা হয়।

এর ফলে তাদের কাছে প্রচুর তথ্য রয়েছে যা পণ্যগুলো উন্নত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

চীনের গোপনীয়তা সম্পর্কিত নিয়ম খুবই কম এবং অনেক বেশি তথ্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রায় সব জায়গাতেই ‘সিসিটিভি ফেসিয়াল রিকগনিশন’ রয়েছে। ভেবে দেখুন, এআই মাধ্যমে ছবি বানানোর জন্য এগুলো কতটা কার্যকর হতে পারে।

লি কাই-ফু তার লেখা এআই সুপারপাওয়ারস: চায়না, সিলিকন ভ্যালি এবং নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারে যুক্তি দিয়েছেন, চীনের প্রযুক্তি ক্ষেত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিছিয়ে আছে বলে মনে হচ্ছে তবে চীনে এর বিকাশ হচ্ছে। তারা এমন একটি বিশ্বে বাস করে যেখানে গতি অপরিহার্য, অনুলিপি করা একটি অভ্যাস, এবং প্রতিযোগীরা নতুন বাজার জেতার জন্য উদগ্রীব।

তিনি লিখেছেন, চীনের অনুকরণ করার একটি সমস্যা রয়েছে। তবে এটি উদ্যোক্তাদেরকে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করেছে।

১৯৮০ সাল থেকে চীন তার অর্থনীতিকে প্রসারিত করছে, যা মূলত উৎপাদন এবং প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে নির্মিত। গত দশকে, আমরা চাইনিজ ইন্টারনেট কোম্পানি এবং চীনা ডিজাইনে অনেক উদ্ভাবন দেখেছি।

চীন কি পারবে?
যদিও চীনা প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর অনেক সুবিধা রয়েছে তবে এখানে বেইজিংয়ের প্রভাব এখনও অস্পষ্ট। দেশটির সেন্সরশিপ চীনা এআই চ্যাটবটগুলোর বিকাশকে প্রভাবিত করবে কিনা সে সম্পর্কে প্রশ্ন রয়েছে। তারা কি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্পর্কে সংবেদনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে?

ফাং বলেন, আমি মনে করি না চীনে কেউ প্রথমেই ‘বাইদু’ বা ‘এরনি’কে বিতর্কিত কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে। সংবেদনশীল বিষয়গুলোর ব্যবহার খুব ছোট অংশ৷ এগুলো কেবল মিডিয়ার মনোযোগ আকর্ষণ করে।

সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রযুক্তিতে চীনের সীমাবদ্ধতা তৈরি করার প্রচেষ্টা এআই শিল্পকে বাধা দিতে পারে।

উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার চিপ বা সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের মধ্যে উত্তেজনার পারদ বেড়েই চলেছে।

ফাং জানান, ‘এনভিডিয়া’র মতো মার্কিন কোম্পানিগুলো বর্তমানে এআই চিপ তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে এবং রপ্তানি বিধিনিষেধের কারণে মাত্র কয়েকটি চীনা কোম্পানিই চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।

যদিও এটি ‘কাটিং এজ এআই’ এর মতো চীনের উচ্চ-প্রযুক্তি শিল্পগুলোকে আঘাত করবে। এটি মোবাইল এবং ল্যাপটপের মতো প্রযুক্তির উৎপাদনকে প্রভাবিত করবে না। এর কারণ হলো রপ্তানি বিধিনিষেধ কেবল চীনকে সামরিক ক্ষেত্রে উন্নত এআই তৈরি করতে বাধা দেওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে।

ফাং বলেছেন, এটি কাটিয়ে উঠতে, চীনের নিজস্ব সিলিকন ভ্যালি প্রয়োজন।

এখন কীভাবে চীনের এআই শিল্পের বিকাশ ঘটবে তাই দেখার বিষয়।