বলিউডের ছবিতে আপত্তি নেই, তবে লাভের ১০ শতাংশ চায় শিল্পী সমিতি
শিল্পী সমিতির লিখিত প্রস্তাব
বলিউডের ছবি এলে দেশে মানহীন সিনেমা নির্মাণ বন্ধ হয়ে যাবে: নিপুণ
বাংলাদেশে ‘পাঠান’ মুক্তিকে ঘিরে নতুন করে আলোচনায় চলচ্চিত্র আমদানির বিষয়টি। প্রশ্ন উঠছে, সাফটা চুক্তির আওতায় কলকাতার ছবি আমদানি হলেও কেন বলিউডের ছবি আমদানিতে বাধা?
শুধু পরিবেশক সমিতির নয়, বলিউডের দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পক্ষে সরব সিনেপ্রেমীরাও। বেশিরভাগ মানুষই চাইছেন, বলিউডের সঙ্গে একযোগে বাংলাদেশেও ছবিগুলো মুক্তি পাক! হল মালিকরা বলছেন, দেশের ছবি চাহিদা পূরণ করতে না পারায় তারা বলিউড ছবি চান!
সম্প্রতি সাফটা নীতিমালায় শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ এদেশে মুক্তির তোড়জোড় শুরু করলেও নীতিমালা জটিলতায় মুক্তি ঝুলে আছে। এ ব্যাপারে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন। প্রদর্শক সমিতির সঙ্গে একমত পোষণ করেন পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াতও!
এদিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিও চাইছে, বলিউডের ছবি বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া উচিত। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার বলেন, বলিউডের ছবি আসুক। বুধবার দুপুরে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বাংলাদেশে হলিউডের ছবি চলছে। হলিউডের সঙ্গে একযোগে এদেশে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। ইংরেজি ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাংলা ছবিগুলো চলছে। তাহলে হিন্দি ছবি কেন মুক্তি পাবে না?
নিপুণ বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের এখানে এমন কিছু সিনেমা হচ্ছে যেগুলো সিনেমা, টেলিফিল্ম, নাটক কিছুই না; বলিউডের সিনেমা মুক্তি পেলে এসব মানহীন সিনেমাগুলো নির্মাণ বন্ধ হয়ে যাবে।’
বলিউডের ছবি মুক্তি পেলে কোনো সমস্যা নেই উল্লেখ করে নিপুণ আরও বলেন, আমাদের যেসব ফেস্টিভ্যাল আছে (ঈদ-পূজা, বিশেষ দিবস) এই সময়গুলো যেন বলিউডের ছবি রিলিজ না দেয়; ফেস্টিভ্যালে যেন শুধু দেশি সিনেমা থাকে এটাই চাওয়া। এটা শুধু আমার একার সিদ্ধান্ত নয়, সিদ্ধান্তটা শিল্পী সমিতির।
বলিউডের ছবি বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে ইতোমধ্যে শিল্পী সমিতির সদস্যরা একত্রিত হয়ে একটি মিটিং করেছেন। নিপুণ বলেন, সংশ্লিষ্টদের কাছে একটি লিখিত প্রস্তাবও দিয়েছিলাম, বলিউডের যে ছবিটা মুক্তির পর এদেশে লাভ হবে সেখানকার ১০ পার্সেন্ট শিল্পী সমিতিতে দেবে। সমিতিতে দিলে আমাদের ফান্ড বাড়বে এবং সেই অর্থ শিল্পীদের জন্যই ব্যয় করা হবে। এখনও এই প্রস্তাবের ফিডব্যাক আসিনি।
সিনেমা হলমালিকরাও দ্বিধায় আছেন উল্লেখ করে নিপুণ বলেন, বলিউডের ছবি এলে হলগুলো বাঁচবে। হল মালিকরা দ্বিধায় আছে। লোন নিয়ে বন্ধ হল খুললে বা সংস্কার করলে দুই বছর পর থেকে লোনের টাকা ছবি চালাতে না পারলে কীভাবে খুলবে? আমি মনে করি আগে হল বাঁচাতে হবে তারপর শিল্প বাঁচবে।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রাপ্ত এই অভিনেত্রী মনে করেন, এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, আমাদের অনেক অনেক মেধাবী নির্মাতা এবং টেকনিশিয়ান আছে যে ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। বাইরের ছবি এলে প্রতিযোগিতা বাড়বে। তাই বলিউডের ছবি এলে সবাই লাভবান হবেন।
কিছুদিন আগে বলিউডের ছবি বাংলাদেশে আমদানির পক্ষে সম্মতি জানিয়ে শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ছবির সংখ্যা যেহেতু আমরা বাড়াতে পারিনি, তাই প্রস্তাব আছে সিনেমা হলগুলো বাঁচাতে কিছু ছবি যদি বাইরে থেকে আসে তাহলে এটা বেনিফিট হতে পারে। সরকার সবকিছু করে দেবে না। আমাদের চলচ্চিত্র নিয়ে আমাদেরকেই ভাবতে হবে। আমরা যদি একযোগে যাই এবং একসুরে কথা বলি তাহলে হয়তো সরকার কিছু করবে।
সাফটা চুক্তির আওতায় সম্প্রতি বলিউডের ‘পাঠান’ দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন পরিবেশক ও প্রযোজনা সংস্থা ‘অ্যাকশান কাট এন্টারটেইনমেন্ট’ এর অনন্য মামুন।
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে হয় বৈঠক। যে বৈঠকের পর একাধিক সদস্য চ্যানেল আই অনলাইনকে নিশ্চিত করেন, খুব সহসাই বাংলাদেশে ‘পাঠান’ মুক্তির অনুমতি পাচ্ছেন না! তবে ছবিটি বাংলাদেশে মুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত আশাবাদী প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাশ।
পরিদর্শক সমিতির এই উপদেষ্টা চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন,‘পাঠান’ বাংলাদেশে মুক্তির জন্য আবেদন করেছে অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট এর অনন্য মামুন। শিগগির ‘পাঠান’ মুক্তির সম্ভাবনা আছে কিনা, জানতে চাইলে সুদীপ্ত বলেন, ‘এই মাসে মুক্তি সম্ভব নয়। অনুমতি পেলে ছবিটি এনে সেন্সর করানোর বিষয় আছে। এসব করে আগামি ৩ তারিখ পর্যন্ত লেগে যাবে। আামাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ৩ তারিখ হোক বা ১০ তারিখ হোক- আমরা ছবিটি রিলিজ করেই ছাড়বো। এই ভেরিকেড ভাঙতে চাই।’
ভারতে বিতর্ক শেষে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) মুক্তি পেয়েছে ‘পাঠান’। ছবিটি দেখতে দর্শক উপচে পড়ছে, এমন খবরই দিচ্ছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম। চলচ্চিত্র সমালোচকরাও ছবিটি দেখে দিচ্ছেন ইতিবাচক সাড়া। সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত যশরাজ ফিল্মের এই ছবিতে শাহরুখের বিপরীতে অভিনয় করেছেন দীপিকা পাড়ুকোন। এছাড়াও আছেন জন আব্রাহাম।