প্রাণীখেকো উদ্ভিদের কথা আমরা কমবেশি জানি। এর কোনোটিতে থাকে বিষে ভরা কাঁটা (আকাসিয়া), কোনোটিতে বিষাক্ত ফল (মানচিনিল), আবার কোনোটায় চিবিয়ে খাওয়ার মতো চোয়াল (ভেনাস ফ্রাইট্র্যাপ)। অর্থাৎ সবগুলোতেই থাকে লক্ষ্যণীয় কোনো অস্ত্র।
পিসোনিয়া গণের অন্তর্ভুক্ত গাছগুলোকে দেখতে সেরকম মোটেই মনে হয় না। কিন্তু হাওয়াই এবং নিউজিল্যান্ড থেকে শুরু করে ভারত পর্যন্ত দেখা মেলা নিরীহদর্শন এই গাছগুলোর রয়েছে মারাত্মক এক রহস্য। গাছগুলোর শেকড়ের মাঝে খোঁজ করে দেখুন; হয়তো পেয়ে যাবেন ছোট ছোট নরম হাড়ের বিশাল ভাণ্ডার!
কারণ দেখতে যতই নিরীহ লাগুক, পিসোনিয়া গাছের আরেক নাম ‘পাখিধরা গাছ’।
এ ধরণের গাছগুলোতে এক ধরণের আঠালো বীজশুঁটি উৎপন্ন হয়, যা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে নিজের আঠার জালে আটকে ফেলে। পাখি যেহেতু পোকা খায়, তাই গাছে আটকে থাকা পোকা খেতে গিয়ে প্রায়ই তারাও আটকে যায় গাছের সঙ্গে।
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
অনেকগুলো বীজ গায়ে একসঙ্গে আটকে গেলে ভারের চোটে পাখিগুলো মাটিতে পড়ে যায়, উড়তে পারে না। সেগুলো তখন মাটিতে পড়ে থেকে খাবারের অভাবেই মারা যায়, যদি না তার আগেই কাঁকড়া বা অন্য কোনো প্রাণী তাদের খেয়ে ফেলে।
কখনো আবার গাছের ডালেই আটকে তাকে ছোট পাখিগুলো। সেখানেই মারা যায়, সেখানেই শুকিয়ে মমি হয়ে যায় তাদের দেহ।
এতদিন ধারণা করা হতো, পিসোনিয়া গাছগুলো হয়তো মৃত পাখির দেহ থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে। অথবা মৃতদেহগুলো সার হিসেবে ব্যবহার হয়। কিন্তু ইউনিভার্সিটি অব ভিক্টোরিয়ার ইকোলজিস্ট অ্যালান বার্গার তার গবেষণায় দেখেন, এই দু’টো ধারণার একটিও ঠিক নয়। গাছগুলো পাখিদের আকৃষ্ট করে বংশবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে, যেন তাদের গায়ে বীজ আটকে পাঠিয়ে দিতে পারে দূরের কোনো এলাকায়।
কিন্তু পাখি যদি উড়তেই না পারে তবে এই কৌশল কী কাজে দেবে? আসলে পাখি হত্যা গাছটির কৌশলের অংশ নয়। শুঁটির গুচ্ছ থেকে গায়ে লেগে যাওয়া বীজের সংখ্যা বেশি হয়ে গেলেই পাখি আটকে যায়। কম পরিমাণে বীজ আটকালে গাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বীজ নিয়ে উড়ে যেতে পারে পাখি।
তাছাড়া পিসোনিয়া গণভুক্ত গাছগুলোর বংশবৃদ্ধির প্রধান পদ্ধতি হলো ভাঙ্গা ডালথেকে নতুন গাছ। বীজ থেকে বংশবৃদ্ধির কৌশলটি শুধু দূরবর্তী স্থানে ছড়িয়ে যাওয়ার জন্য। তাই বংশবৃদ্ধিতে কোনো সমস্যা হয় না গাছগুলোর।