বাংলাদশে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ‘বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট’ উপলক্ষে সোমবার দিনব্যাপী কমর্সূচি পালন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় এদিন একাডেমির নন্দনমঞ্চ প্রাঙ্গণে ‘২১ আগস্ট একটি বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ’ শীর্ষক আলোকচিত্র ও পাবলিক আর্ট প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের দিন, সেই ভয়াল দিবস উপলক্ষে সোমবার বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি এবং উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক শিল্পী সৈয়দা মাহবুবা করিম (মিনি করিম)। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর এই স্থাপনাশিল্পের মাধ্যমে ২০০৪ সালের সেই ভয়াবহতার এক অবয়ব তুলে ধরার চেষ্টা করি। শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরীর কিউরেটিংয়ে সেই সময়ের অনেকটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে এতে’।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এই আয়োজনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জেলায় এ ধরনের প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে সেই ভয়াল পরিস্থিতি সবার মাঝে তুলে ধরতে হবে।’
২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় পরবর্তীতে একটি রাজনৈতিক দলের নেতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা রাজাকার ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি তারাই এই হামলাকে সাজানো নাটক বলে উল্লেখ করেছিলো। আগামীতে সারাদেশের ৬৪ জেলায় ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী।
উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ্ব বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলে গেলে বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি হবে। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে তার প্রয়োজন।’
পরে সভাপতির বক্তব্যে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা ভোগ না করতে দিতেই ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড, এবং তার পরবর্তীতে ২১ আগস্ট হামলাও একই সূত্রে গাঁথা। যে জয়ী হয়েছে তাকেও হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে।’
সভ্যতার সংকট তখন হয় যখন জাতি তার অতীত ইতিহাস ভুলে যায়। কোন কোন দল ক্ষমতায় থাকলে গানবাজনা বন্ধ হয়ে যায়। তারা আমাদের গর্বের সংস্কৃতি, সাহিত্য পরিচয় মুছে ফেলতে চায়। অনেকেই আবার সেই দলের হয়ে এখনও অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে লাভ নেই বলেও যুক্ত করেন মহাপরিচালক। সেই ভয়াল দিনে আলোকচিত্রী হিসেবে যারা ছিলেন, সেই ছবির প্রদর্শনী ও ওই দিনের অনুভূতি প্রকাশ করেন আলোকচিত্র সাংবাদিক মীর ফরিদ ও পাবলিক আর্ট প্রদর্শনীর উপর কিউরেটর শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরী।
সবশেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য উপস্থাপন করেন একাডেমির সচিব সালাহ উদ্দিন আহাম্মদ। আলোচনা পর্ব ও উদ্বোধন ঘোষণা শেষে আগত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও মহাপরিচালকসহ সকলে একাডেমির উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা সকলে একাডেমির নন্দনমঞ্চ প্রাঙ্গণে ‘২১ আগস্ট একটি বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ’ শীর্ষক আলোকচিত্র ও পাবলিক আর্ট প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ভয়াবহতার ভেতর জীবন বাজি রেখে সরাসরি ছবি তুলেছেন এবং এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন সে সকল আলোকচিত্র সাংবাদিকগণ হলেন- মীর ফরিদ, হাবিবুর রহমান, জিয়া ইসলাম, রিয়াজ আহমেদ সুমন ও শেখ হাসানসহ অনেকে। প্রর্দশনী ২১-২৩ আগস্ট পর্যন্ত প্রতদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।