দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগে চলে গেলেন জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার-কোচ ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ার। কিংবদন্তির মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল ফুটবলবিশ্ব। জার্মানিতে ডের কাইজার বা ফুটবল সম্রাট আখ্যা পাওয়া বেকেনকে স্মরণ করছেন সতীর্থরা, ফুটবলপ্রেমীরা, সাবেক-বর্তমান ফুটবলাররা, ফিফা, উয়েফাসহ বিভিন্ন সংস্থা। কিংবদন্তির চিরপ্রস্থানে পৃথিবী বদলে গেছে জন্মস্থানের ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের।
বেকেনবাওয়ারের সাবেক সতীর্থ ওলি হোয়েনেস জানিয়েছেন, ‘ক্লাবের মহৎ ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। খেলোয়াড়, কোচ, সভাপতি, ব্যক্তি হিসেবে সহজে ভুলে যাওয়ার মতো নন। কেউই তার জায়গায় পৌঁছাতে পারবেন না।’
জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বার্ন্ড নিউয়েনডর্ফ বলেছেন, ‘আমার দেখা অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। আমরা ফুটবলের অনন্য একজন ব্যক্তিত্বকে হারালাম। ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ার জার্মান ফুটবলে দুর্দান্ত এক উত্তরাধিকার রেখে গেছেন।’
ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বেকেনকে কিংবদন্তি আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘জার্মান এবং বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তি। ডের কাইজার সত্যিই একজন মহৎ ব্যক্তি, ফুটবলের বন্ধু এবং প্রকৃত কিংবদন্তি। আমরা তোমাকে কখনও ভুলবো না প্রিয় ফ্রেঞ্জ।’
জার্মান ফুটবলের ম্যানেজার জুলিয়ান নাগেলসম্যান বলেছেন, ‘আমার কাছে, ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ার জার্মানির ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়। তার সুইপার পজিশন খেলার ধরনই পাল্টে দিয়েছিল। তার অবস্থান এবং বলের সাথে বন্ধুত্ব তাকে ফ্রিম্যানে পরিণত করেছিল।’
উয়েফা সভাপতি আলেকজান্ডার সেফেরিন বলেছেন, ‘ফুটবলের অন্যতম গ্রেট, সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তার অতুলনীয় বহুমুখীতা, ডিফেন্স এবং মিডফিল্ডের মধ্যে সুন্দর পরিবর্তন, অনবদ্য বল নিয়ন্ত্রণ এবং দূরদর্শী শৈলী ফুটবল, খেলার পদ্ধতিকে নতুন রূপ দিয়েছে।’
জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ডিরেক্টর রুডি ভ্যালের দুবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী সম্পর্কে বলেছেন, ‘ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ারকে জানা এবং তার সাথে সময় কাটানো আমার জীবনের সেরা একটি অভিজ্ঞতা। আমাদের সময়ে রোমে তার অধীনে ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ জয় তার অসাধারণ কোচিং ছাড়া সম্ভব ছিল না। জার্মানি মহৎ ব্যক্তিত্বকে হারালো, আমি একজন ভালো বন্ধুকে হারালাম।’
বিবৃতিতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ বলেছে, ‘ফুটবলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ারের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। একজন খেলোয়াড় এবং ম্যানেজার হিসেবে ডের কাইজার ছিলেন মার্জিত এবং প্রভাবশালী। তিনি আজীবন আমাদের স্মরণে থাকবেন।’
বরুসিয়া ডর্টমুন্ড তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেছে, ‘একজন দুর্দান্ত জার্মান ফুটবলারকে বিদায়। শান্তিতে থাকুন, ফ্রেঞ্জ, কাইজারকে আজীবন স্মরণ করা হবে। তার পরিবার এবং ভক্ত-সমর্থকদের সাথে আছি।’
জার্মানি ও বায়ার্নের ফরোয়ার্ড থমাস মুলার বলেছেন, ‘ক্লাবের ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়, অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। শান্তিতে থাকুন, মহারাজ ফ্রেঞ্জ। জার্মান ফুটবলের জন্য আপনি যা করেছেন তা আমরা ভুলব না।’
১৯৭৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খেলার সময় ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে তাকে নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। প্রয়াত ফুটবল সম্রাট বেকেনবাওয়ার সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমার দেখা অন্যতম সেরা একজন খেলোয়াড় বেকেনবাওয়ার।’
১৯৭২ ও ১৯৭৬ সালে ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন বেকেনবাওয়ার। ১৯৬৬, ১৯৬৮, ১৯৭৪ ও ১৯৭৬ সালে জার্মানির বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছেন। ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপ জেতার পর ১৯৯০ সালে ম্যানেজার হিসেবে তার অধীনে বিশ্বকাপ জেতে জার্মানি। জন্মস্থানের ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ তাকে সম্মান করে ‘অনারারি প্রেসিডেন্ট’ পদে ভূষিত করেছিল।