চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ছাত্রলীগের সম্মেলন ঘিরে পদপ্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন আগামী ২৪ ডিসেম্বর। এর আগে ৮ ও ৯ ডিসেম্বর দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে দলের হাইকমান্ডের কাছে তদবির করছেন ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা, চলছে জোর লবিং। মধুর ক্যান্টিনে চলছে রাজনৈতিক তরজা।

আগামী ৩০তম সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্ব গঠনে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আশা দেখছেন শতাধিক পদপ্রত্যাশী। তারা ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের চার নেতা এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য প্রভাবশালী নেতার কাছে ধরনা দিচ্ছেন। তাদের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে চান প্রার্থীরা। তবে এ নিয়ে কাঁদা-ছোঁড়াছোড়িরও অভিযোগ রয়েছে পদপ্রার্থীদের মধ্যে।

ভাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে সম্মেলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নতুন নেতৃত্ব বাছাই করার কথা ছাত্রলীগের। কিন্তু আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে সংগঠনের সর্বোচ্চ অভিভাবক মনে করে সংগঠনটি। ছাত্রলীগের সম্মেলন হলেও তিনিই মূলত শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাই করে থাকেন।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, এতদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক কার্যক্রম ছিল ছাত্রলীগ নেতাদের। এখন পদপ্রত্যাশীদের চলাফেরা দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের দিকে বেশি দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার যোগাযোগ করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে যাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ভালো, রয়েছে ক্লিন ইমেজ, পরিবারের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই; অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী তারাই আগামীর নেতৃত্বে আসবে। এছাড়াও যারা শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় এবং মানবিক কাজ করে আলোচনায় আসতে পেরেছেন, এমন ছাত্রনেতারাও এগিয়ে থাকবেন।

গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চল থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ, খুলনা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগ। তবে এবারের সম্মেলনে বয়সের কারণে শীর্ষ পদপ্রার্থীদের একটি বিরাট অংশ ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৭ বছরের বেশি কেউ পদপ্রার্থী হতে পারেন না। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের পদপ্রার্থীদের বয়সসীমা ১ বছর বাড়িয়ে ২৮ বছর করেছিলেন। এ বছর বয়সীমা বাড়ানো হবে কীনা তা এখনও জানা যায়নি।

৩০তম সম্মেলনে শীর্ষ নেতা হবার দৌড়ে যারা এগিয়ে আছেন, তারা হলেন:

উত্তরবঙ্গ থেকে যারা এগিয়ে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহসিন হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী। প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু, উপ ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি রাকিবুল হাসান রাকিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ডাকসু সদস্য রফিকুল ইসলাম সবুজ তালুকদার।

খুলনা বিভাগ
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাবেক সভাপতি বরিকুল ইসলাম বাধন ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন।

চট্টগ্রাম বিভাগ
কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মাহমুদুল হাসান তুষার, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল, সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দীন, পাঠাগার বিষয়ক উপ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন।

বরিশাল বিভাগ
এই বিভাগ থেকে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান), সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন, সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান, আইন বিষয়ক উপ সম্পাদক বেনজির আহমেদ, কর্মসংস্থান বিষয়ক উপ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়, সাবেক ডাকসু সদস্য মাহমুদুল হাসান।

ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ থেকে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, উপ তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রাশিদ শাহরিয়ার উদয়, মুকতাকিম গণি ভূঁইয়া।

সিলেট
সিলেট বিভাগ থেকে এগিয়ে আছেন জগন্নাথ হল ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাবেক জিএস কাজল দাস, ছাত্রলীগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান।

ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা নরসিংদী থেকে এগিয়ে আছেন অমর একুশে হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের উপ তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এহসান উল্লাহ্ পিয়াল। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক বিভাগ ফরিদপুর থেকে আলোচনায় আছেন আইন বিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক শাহেদ খান ও সহ-সভাপতি রাকিব হোসেন।

এছাড়া আলোচনায় আছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন,-ধর্ম সম্পাদক তুহিন রেজা, পরিবেশ সম্পাদক শামীম পারভেজ, সহ সভাপতি সোহান খান। এর বাইরেও আলোচনায় আছেন সহসভাপতি, যুগ্ম-সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও উপসম্পাদক পদের জন্য শতাধিক নেতা। এরা আলোচনায় থাকলেও ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী (২৭) বেশিরভাগের বয়স নেই।

নারীদের মধ্যে যারা এগিয়ে
ছাত্রলীগের নারী সদস্যদের মধ্যে এগিয়ে আছেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি, ডাকসু সদস্য ও সুফিয়া কামাল হলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তিলোত্তমা শিকদার ও ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও কুয়েত মৈত্রী হলের সাবেক সভাপতি ফরিদা পারভীন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্য ও প্রতিটি জেলা থেকে নির্বাচিত ২৫ জন কাউন্সিলর প্রতিনিধি হিসাবে গণ্য হবেন। এই কাউন্সিলররা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদ (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) নির্বাচিত করেন। ২০১১ সালে ২৭তম এবং ২০১৫ সালে ২৮তম সম্মেলনের মাধ্যমে গঠনতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী সংগঠনটির শীর্ষ দুই পদে নির্বাচন করা হয়। তবে এসব কমিটিতে পদপ্রার্থী ছিল হাতেগোনা। সংগঠনটির তৎকালীন নেতৃত্বের অভিযোগ, এসব সম্মেলনে সাবেক নেতৃত্বদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাউন্সিল করা হতো। এতে নিজেদের প্রার্থীরাই নেতা নির্বাচিত হতো। এই অভিযোগটি আমলে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর ২০১৮ সালে ২৯তম সম্মেলনে সিন্ডিকেটের প্রভাব ভেঙে নিজেই নেতৃত্ব গঠন করেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের পর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ মেয়াদ শেষ করার আগেই ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তারা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এরপর সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান যথাক্রমে আল নাহিয়ান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। তিন মাস ভারপ্রাপ্ত থাকার পর ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের ভারমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মেয়াদকাল দুই বছর। আর মেয়াদকালের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন করার নিয়ম থাকলেও তা করতে পারেননি আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টচার্যের কমিটি।