লিটন দাস, তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয় এবং মুশফিকুর রহিমের দারুণ ফিফটিতে জিম্বাবুয়েকে ৩০৪ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের শুরুতে টসে হেরে ব্যাটে নেমে টাইগাররা ২ উইকেটে তোলে ৩০৩ রান।
এই নিয়ে চতুর্থবার জিম্বাবুয়ের মাঠে ওয়ানডেতে ৩০০ রানের গণ্ডি পার করল লাল-সবুজের দল। শুক্রবারের সংগ্রহটি স্বাগতিকের বিপক্ষে তাদের মাটিতে তৃতীয় সর্বাধিক দলীয় রান বাংলাদেশের।
২০০৯ সালে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টিতে বুলাওয়েতে প্রথমবার এই কীর্তি গড়ে বাংলাদেশ। করেছিল ৮ উইকেটে ৩২০ রান। জিম্বাবুয়েতে এখন অবধি সেটাই টাইগারদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ম্যাচটি তারা জিতেছিল ৪৯ রানে। একই সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের দেয়া ৩১৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করে টাইগাররা ৪ উইকেটে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেছিল। গত বছর হারারেতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৩০২ রান করেছিল বাংলাদেশ, পেয়েছিল ৫ উইকেটের জয়।
এদিন তামিম-লিটনের ওপেনিং জুটিতে বড় সংগ্রহের দিকে ছুটতে থাকে সফরকারীরা। চিরাচরিত ছন্দেই নিজেদের মেলে ধরে। তামিম এবং লিটন গড়ে ফেলেন ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি। ছুঁয়েছেন দারুণ এক রেকর্ড।
বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে সবচেয়ে বেশি চারবার শতরানের জুটির রেকর্ড এতদিন ছিল কেবল তামিম ও সৌম্য সরকারের দখলে। সেটি ধরে ফেলেছেন তামিম ও লিটন। তাদের পাশেও এখন উদ্বোধনীতে চারটি শতরান জুটির রেকর্ড।
আরেকটি রেকর্ড থেকে অবশ্য তারা দুধাপ দূরে। ওয়ানডেতে এখন অবধি যেকোনো উইকেটে টাইগারদের হয়ে সবচেয়ে বেশি শতরানের জুটি গড়েছেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। দুই সিনিয়র ছয়বার গড়েছেন এমন কীর্তি।
বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে এদিন ওয়ানডেতে ৮ হাজার রানের ক্লাবে ঢুকে পড়েছেন তামিম। প্রয়োজন ছিল ৫৭ রান। টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক এদিন ক্যারিয়ারের ৫৪তম ফিফটি তুলেছেন। পথে ছুঁয়েছেন কীর্তিটি। ২০০৭-২২ সালের মাঝে খেলে মাইলফলক ছুঁলেন তারকা ওপেনার।
ক্যারিয়ারে ২২৯ ম্যাচে ২২৭ ইনিংসে ৮,০০৫ রান এখন তামিমের। ৭৮.৫৫ স্ট্রাইকরেটে ৩৭.০৬ গড়ে রান করেছেন। পেয়েছেন ১৪টি শতক ও ৫৪টি অর্ধশতক। মাইলফলক ছুঁতে তামিম খেলেছেন ৮৭৭টি চারের মার, আছে ১০০টি ছক্কা।
১১৯ রানের ওপেনিং জুটির পর আউট হন তামিম। ৮৮ বলে ৮ চারে ৬২ রানে সিকান্দার রাজার বলে কাইয়ার হাতে ধরা পড়েন।
দ্বিতীয় উইকেটে দীর্ঘদিন পর ওয়ানডেতে সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে ৫২ রানের জুটি গড়েন লিটন। সেঞ্চুরির কাছাকাছি এসে তিনি দুর্ভাগ্যের শিকার হন। পায়ে টান লাগায় স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ওপেনিং তারকাকে। ৮৯ বলে ৯ চার ও এক ছক্কায় ৮১ রানে থেকে লিটন গেছেন সাজঘরে। পরে আর নামতে পারেননি।
সিকান্দার রাজার করা ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে এক রান নিতে পারলেও খোঁড়াতে থাকেন লিটন। পায়ে ব্যথা অনুভব করে শুয়ে পড়েন টাইগার তারকা। ফিজিও এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে স্ট্রেচারে মাঠ ছাড়তে হয়।
তামিম যখন সাবলীল ব্যাটিংয়ে রানের গতি বাড়ানোর কাজ করছিলেন, ধীরস্থির থেকে আরেক প্রান্ত সামলেছেন লিটন। ৬২ রান করে তামিম আউট হলে খোলস ছাড়তে থাকেন। ফিফটি তুলে নেয়ার পর আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাট করে সেঞ্চুরির আশাই জাগিয়েছিলেন।
কোমরের পেশিতে টান লাগায় লিটনের আগে মাঠ ছেড়েছেন জিম্বাবুয়ের লেগব্রেক বোলার রায়ান বার্ল। শেষ টি-টুয়েন্টিতে নাসুম আহমেদের এক ওভারে ৩৪ রান নেয়া স্বাগতিক তারকা ২১তম ওভারে মাঠ ছাড়েন।
লিটনের ড্রেসিংরুমে ফেরার পর মুশফিককে নিয়ে ঝড়ো ব্যাটিং করতে থাকেন বিজয়। ৪৭ বলে তুলে নেন ফিফটি। হজের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ছুটিতে থাকা মুশফিকও ছন্দ ধরে রেখে মারমুখী ব্যাটিং করে যান।
৪৪তম ওভারের চতুর্থ বলে রিচার্ড এনগারাভার বলে ক্যাচ তুলে দিলেও ওয়েসলি মাধভেরে তা ফেললে ৭১ রানে জীবন পান বিজয়। এরপরও বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। ৬২ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৭৩ রান করে নিয়াউচির বলে মুসাকান্দার তালুবন্দি হন।
মুশফিককে নিয়ে দ্রুত রান তোলায় মনযোগী হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ক্রিজে এসে প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকান। মুশফিক ৪৯ বলে ৫ চারে ৫২ ও রিয়াদ ১২ বলে ৩ চারে ২০ রানে অপরাজিত থাকেন।
শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৯০ রান। জিম্বাবুয়ের পক্ষে একটি করে উইকেট পান সিকান্দার রাজা ও নিয়াউচি।