
সাউথ এশিয়ার দলগুলোর বিপক্ষে নিয়মিত খেলার সুযোগ পেলেও যেকোনো পর্যায়ের ফুটবলে প্রথমবারের মতো ইউরোপের কোন দেশের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবল দল। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ২৬তম স্থানে থাকা রাশিয়া ১৪০তম স্থানের বাংলাদেশকে দুর্বলতার জায়গাগুলো বেশ দেখিয়ে ছেড়েছে।
ম্যাচ শেষে অবশ্য কঠিন বাস্তবতাটা বুঝতে পারছে স্বাগতিকরা, ৩-০ গোলের হার ফুটিয়ে তুলেছে শক্তির পার্থক্য। প্রতিপক্ষ ফুটবলারদের উচ্চতা নয়, বরং লং পাসে বাংলাদেশের দুর্বলতা মাঠে প্রকাশ পেয়েছে। মাঝে মধ্যে আক্রমণে উঠলেও ভুল পাস এবং বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সম্ভাবনা নষ্ট করেছে টিম টাইগ্রেস। রাশিয়ার ছোট ছোট পাসের সঙ্গেও তাদের পেরে উঠতে কষ্ট করতে হয়েছে।
ম্যাচের পর বাস্তবতাকে মোটেও এড়িয়ে যাননি লাল-সবুজের দলের কোচ গোলাম রব্বানি ছোটন। সঙ্গে বললেন, রাশিয়াকে দুই গোল উপহার দেয়া হয়েছে।
প্রথমার্ধে নিজেদের ভুলে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে টিম টাইগ্রেস। ষষ্ঠ মিনিটে প্রায় মাঝমাঠ থেকে ভিসলিসা আভদিয়েনকোর লম্বা পাসে বক্সে বল নিয়ন্ত্রণে নেন এলেনা গোলিক, ডান পায়ে লক্ষ্যভেদ করে রাশিয়াকে লিড এনে দেন অধিনায়ক। স্বাগতিক দলের অর্পিতা বিশ্বাস এবং জয়নব বিবি রিতা পুরোপুরিভাবে এলেনাকে মার্কিং করতে ব্যর্থ হন।

অর্পিতার অমার্জনীয় ভুলে ৪৫ মিনিটে আবারও গোল পায় রাশিয়ার মেয়েরা। গোল কিক থেকে ভুল পাসে বল পান আনা সাখারোভা। তার পাসে বল নিজের গণ্ডির ভেতর থাকা সত্ত্বেও অর্পিতা ক্লিয়ার করতে পারেননি। সুযোগ কাজে লাগিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে ভুল করেননি এলেনা গোলিক।
প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের বক্সের ভেতর মার্কিং করতে ব্যর্থ হওয়া নিয়ে ছোটনের দিকে প্রশ্ন যায়। পরিকল্পনা মাঠে বাস্তবায়ন করতে না পারার কথা তিনি স্বীকারও করে নেন।
‘ম্যাচের শুরুতে মার্কিংয়েরই পরিকল্পনা ছিল। ৪০ গজ দূর থেকে যে লং কিক করেছে, সেখানে তিনজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার মিস্টেক করেছে। রাশিয়ার অধিনায়ককে যদি মার্ক করতো, আর ডিফেন্ডাররা একধাপ পেছনে যেত, তাহলে ভালো হতো। এ সময় তারা ভুল করেছে।’
লম্বা পাসে খেলার কৌশল ব্যাকফায়ার করেছে এমন কথা অবশ্য মানতে নারাজ টাইগ্রেস কোচ, ‘মেয়েরা রাশিয়ার সাথে খেলতে যাচ্ছে এই চাপ নিয়েই প্রথমে খেলা শুরু করেছে। তাদেরকে হাফ টাইমের সময় যেটা বলা হয়েছে সেটা পেরেছে। তারা অনেকটাই সেখান (চাপ) থেকে সরে এসে খেলার চেষ্টা করে।’
‘মেয়েরা প্রথমে আসলে শুরু করেছিল খুব বাজেভাবেই। কিন্তু আস্তে আস্তে তারা খেলায় ফেরে। যতো সময় গড়িয়েছে, ততটাই উন্নতির চেষ্টা করেছে।’
‘আমি যেটা আগেই বলেছি, ইউরোপিয়ান টিমের সাথে প্রথম খেলতে যাচ্ছি। মেয়েরা অনেককিছুই শিখতে পারবে, অভিজ্ঞতা হবে। রাশিয়া শারীরিকভাবে আমাদের চেয়ে এগিয়ে। টেকনিক্যালিও তারা অনেক ভালো। মনে করি এটাই আমাদের আজকের খেলায় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’
রাশিয়ার সঙ্গে পিছিয়ে থাকার কারণ ব্যাখ্যায় শারীরিকভাবে তাদের সঙ্গে পেরে না ওঠার বিষয়টি সামনে আনেন ছোটন। মেয়েরা প্রথম থেকেই ইউরোপিয়ান দলের সঙ্গে কীভাবে খেলবে তা নিয়ে দ্বিধায় ছিল, এমনও বললেন ছোটন। রাশিয়ার সঙ্গে সমানতালে লড়তে না পারা নিয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন।
‘ফুটবলাররা এক-দেড় বছর ধরে ক্যাম্পে আছে। তারা অনেকটাই উন্নতি করেছে। তারা যদি আরও পাঁচ বছর আগে আসতো, অবশ্যই মনে করি এদের সাথে সমানতালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতো। আমরা তো সব জায়গায় তাদের চেয়ে পিছিয়ে আছি, এটা সত্যি।’
বয়সভিত্তিক আসরে র্যাঙ্কিংয়ে ১১৪ ধাপ এগিয়ে থাকা দলের কাছে পরাজয়ের পরও ইতিবাচক মানসিকতা ধারণ করছেন বাংলাদেশ কোচ। অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি সামনের ম্যাচের কৌশলে পরিবর্তনের কথাও বললেন।
‘মনে করি রাশিয়ার সঙ্গে খেলা বিশাল একটা অভিজ্ঞতা। ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস বাড়ার জন্য এটি সহায়ক হবে। আমাদের সামনে এএফসির যে ম্যাচগুলো আছে, সাফের যে ম্যাচগুলো আছে, এসবের আগে তারা আরও আত্মবিশ্বাসী থাকবে।’
‘সামনের ম্যাচে একই কৌশল থাকবে না। মাঠে নামার আগ পর্যন্ত রাশিয়া আমাদের অচেনা প্রতিপক্ষ ছিল। কৌশল সেভাবেই সাজানো হয়েছিল। খেলা ১৫ মিনিট দেখার পর আগের ফর্মেশনে ফিরে এসেছি। আমরা যখন আরেকটা ম্যাচ খেলতে যাবো, ফর্মেশন ও কৌশলে পরিবর্তন থাকবে।’