প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে ভারত সফরে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনাকে বরণ করে নিতে ইতোমধ্যে প্রস্তুত দিল্লি। বিশ্ব রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক সংকটের সময় শেখ হাসিনার এই সফরকে অন্য যেকোন সময়ের সফরের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে ভারত।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তাচুক্তি নিয়ে ঢাকার প্রত্যাশা থাকলেও কুসিয়ারাসহ ৬টি নদীর পানি বণ্টন চুক্তি, জ্বালানী সহযোগিতা, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সীমান্ত সুরক্ষা ও মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এই সফরে দু’দেশের বিরাজমান সম্পর্ককে আরও উন্নত ও সর্বোচ্চ আদর্শ পর্যায়ে নিয়ে যাবে বলেও তার প্রত্যাশা।
সাবেক কূটনীতিক পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন, বাংলাদেশের ক্ষমতা পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা না থাকলেও শেখ হাসিনার সরকারের সাথে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে ভারত। অর্থনীতির কঠিন সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, এই যাত্রা অপ্রতিরোধ্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মন্তব্য উল্লেখযোগ্য। ভারত সফরের প্রাক্কালে একটি বার্তা সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের ‘পরীক্ষিত বন্ধু’। দেশটি প্রয়োজনের সময়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে, প্রথমে ১৯৭১ সালে এবং পরবর্তী সময়েও। আমরা আমাদের ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় তাদের অবদান সবসময় মনে রাখি এবং এর পাশাপাশি ১৯৭৫ সালে, যখন আমি আমার পরিবারের সকল সদস্যকে হারিয়েছিলাম। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, তিনি আমাদের ভারতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তাছাড়া, আপনি দেখুন, এই দুটি দেশ, আমরা নিকট প্রতিবেশী, ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং আমি সবসময় আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে বন্ধুত্বকে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিই।
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তাদের নাগরিকদের উন্নতির জন্য হওয়া উচিত। কোভিড-১৯ এর সময়কালেও ভারতীয় নেতৃত্ব তাদের ইতিবাচক অভিপ্রায় দেখিয়েছিল, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
আমরাও মনে করি, দু’দেশের জনগণের স্বার্থেই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছানো উচিৎ। কারণ, দু’দেশের সম্পর্ক শুধু সরকারের সাথে সরকারের নয়। বরং এই দু’দেশের সম্পর্ক জনগণের সাথে জনগণের। সেই বিষয় বিবেচনায় বাংলাদেশের সাথে অমীমাংসিত বিষয়গুলো মীমাংসা করার জন্য ভারতকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট, পানিবণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত হত্যাসহ নানা ইস্যুতে ভারতকে এগিয়ে আসতে হবে। ভারত এগিয়ে আসবে বলেও আমাদের প্রত্যাশা। কেননা এ ইস্যুগুলোর মীমাংসা হলে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতও লাভবান হবে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দু’দেশের জনগণের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ-ভারতের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হোক।