রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বাংলাদেশে তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের সুরক্ষা ও সহায়তার জন্য আবারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কঠোর মানবিক যুক্তি উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণ মিলিয়ে মোট ১৩.৫ লাখ মানুষের সহায়তায় ৮৫২.৪ মিলিয়ন ডলার সহায়তার আবেদন জানানো হয়েছে।
বুধবার ১৩ মার্চ বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের জন্য ২০২৪ যৌথ পরিকল্পনা বা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) ঘোষণা করা হয়। এতে জাতিসংঘ ও সহযোগী সংস্থাসমূহের কাছে এই আবেদন জানানো হয়।
বাংলাদেশ উদারভাবে আশ্রয় দিয়েছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী, যাদের বেশির ভাগই মিয়ানমারে থেকে পালিয়ে এসেছিলেন সাত বছর আগে।
কর্ম-পরিকল্পনাটি ও আনুসাঙ্গিক অর্থ চাহিদা আজ জেনেভায় দাতাদের সামনে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক এমি পোপ।
মিয়ানমারে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের এই সময়ে বাংলাদেশের সাথে সংহতি এবং শরণার্থীদের সুরক্ষা আগের যেকোন সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি।
যৌথ কর্মপরিকল্পনায় যুক্ত থাকছে ১১৭টি সংস্থা, যার প্রায় অর্ধেক বাংলাদেশী। এর লক্ষ্য কক্সবাজার ও ভাসান চরে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ও ৩ লাখ ৪৬ হাজার স্থানীয় জনগণকে খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ পানি, সুরক্ষা পরিষেবা, শিক্ষা, জীবিকামূলক কাজের সুযোগ এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে সহায়তা করা।
আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রায় ৯৫ শতাংশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল। এই শরণার্থী জনগোষ্ঠীর ৭৫ শতাংশেরও বেশি নারী ও শিশু। তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন টেকসই সহায়তা। পুরো শরণার্থী জনগোষ্ঠীর অধিকাংশের বয়স ১৮’র নিচে; যাদের শিক্ষা, দক্ষতা-উন্নয়ন ও জীবিকামমূলক কাজের সুযোগ সীমিত।
এই মানবিক সংকটটি যখন বৈশ্বিক মনযোগ হারিয়ে ফেলেছে, তখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় জনগণ ও দাতব্য সংস্থাগুলোর প্রয়োজন টেকসই সমর্থন।
বিগত বছরগুলোর অপর্যাপ্ত তহবিল মিয়ানমারে সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষদের জীবনে মারাত্মকভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তারা তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে, আর তাদের সমস্যা আরও প্রকট হওয়ার আশংকা রয়েছে।