চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বর্ষবরণে দিনভর উৎসবমুখর শিল্পকলা

বৈশাখ এলেই বর্ষ বরণের আনন্দে মেতে ওঠে পুরো জাতি। বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রা, হালখাতা, বৈশাখী গ্রামীণ মেলা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সম্প্রদায়ের পানি খেলা, ফুলবিজু, পাজন সহ নানা আয়োজন ও কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছে নতুন বছরকে। কুসংস্কার আর পুরোনো জীর্ণতাকে পেছনে ফেলে ব্যক্তিগত, ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক, শ্রেণিগত অবস্থানের উর্ধ্বে উঠে বাঙালির শত শত বছরের ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনার লালন ও বার্তা সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার মুলমন্ত্র নিয়েই প্রতিবছরের মতো পালিত হয়ে আসছে দিনটি।

পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রতি বছরের মত এবারও বর্ণাঢ্য আয়োজনে পহেলা বৈশাখ পালন করেছে দেশের সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সকাল থেকেই ছিলো নানা আয়োজন।

সকাল ১০টায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরতেই পরিবেশিত হয় ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ সমবেত সংগীত। নজরুল সংগীত পরিবেশন করেন সুজিত মোস্তফা। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন লাইসা আহমেদ লিসা। বাউল গান পরিবেশন করেন শরীফ সাধু ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী পুতুল। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশু সংগীত দলের পরিবেশনায় ছিলো ‘দাও ধৈর্য্য দাও সৌর্য’ এবং ‘সত্য বল সুপথে চলো’ সমবেত সংগীত। পুঁথিপাঠে ছিলেন পরিমল মজুমদার। একক লোকসংগীতে পরিবেশন করেন সুরবালা রায় (টেপরী মাতাজী)। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বৈশাখী’ আবৃত্তি করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এছাড়াও ছিলো রুপা চক্রবর্তীর আবৃত্তি। পূজা ও পলাশ এর কন্ঠে পরিবেশিত হয় ভাওয়াইয়া এবং বিউটি ও সন্দিপন এর কন্ঠে পরিবেশিত হয় বাউল গান।

একাডেমির প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী এবং একাডেমির কণ্ঠশিল্পী সোহানুর রহমান সোহান, রাফি তালুকদার, সরদার হীরক রাজা, রোকসানা আক্তার রুপসা, আবিদা রহমান সেতু ও সানজিদা মীম লোক সংগীতের মেডলি পরিবেশন করেন।

বাংলা বর্ষবরণকে ঘিরে পার্বত্য জেলাগুলোতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘বৈসাবি’ আনন্দমুখর পরিবেশে পালিত হয়। বর্ষ বরণের এ উৎসবকে চাকমা সম্প্রদায় বিজু, মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাই এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায় ‘বৈসুক’ নামে উদযাপন করে থাকে। পুরনো বছরের বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষ্যে এ বর্ষবরণ উৎসব সেই আদিকাল থেকেই পালিত হয়ে আসছে।

ফিফা চাকমা পরিচালিত ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের পরিবেশনায় পরিবেশিত হয় নৃত্য-‘বৈশাবী’। একাডেমির নৃত্যশিল্পীদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য ‘সহজ মানুষ”। এছাড়াও ছিলো তামান্না রহমানের পরিচালনায় নৃত্য ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির রেপার্টরি যাত্রাদল পরিবেশন করেন যাত্রা ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’ এর অংশবিশেষ।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পর একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী উপস্থিত সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন,“আমাদের দেশে চলছে নানা ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার। আর এ সকল ষড়যন্ত্র ও অপ্রপচার আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ এ পৌঁছাতে যে উদ্যোগ, যে অগ্রযাত্রা, যে স্বপ্ন সংগ্রাম আমরা করছি তা বিধ্বস্ত করার জন্য নানা রকম ষড়যন্ত্র চলছে কিন্তু আমাদের বিশ্বাস আমাদের সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে আমাদের শিল্পীরা সকল সংকট, সকল ষড়যন্ত্র ধূলিসাৎ করে দিবে।”

আলোচনার পর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে ৫ দিনব্যাপী আলপনা অংকন কর্মশালার সনদপত্র প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন। পরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় দেশ বরেণ্য চারুশিল্পীদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আলপনা বিষয়ক আর্টক্যাম্প থেকে সৃজিত চিত্রকর্ম, আলপনা ও পটচিত্র নিয়ে শুরু হওয়া ৫ দিনব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন একাডেমির মহাপরিচালক। জাতীয় চিত্রশালা গ্যালারিতে ১লা বৈশাখ – ৫ বৈশাখ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী।