অমিত সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বছর। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০২৩ সাল ছিলো বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য বেশ সন্তোষজনক একটি বছর। বক্স অফিসে যেমন ইতিহাস করেছে, তেমনি বেশকিছু ছবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সাড়া ফেলেছে! নতুন বছরে দেশীয় সিনেমা আরও বেশি ঘুরে দাঁড়াবে, সেই প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছেন সংশ্লিষ্ট সবাই।
২০২৪ সালে মুক্তির প্রতীক্ষায় আছে বেশ কিছু মান সম্মত ও বড় বাজেটের সিনেমা। সেগুলো দিয়ে সিনেমা হল হয়ে উঠতে পারে রমরমা! একনজরে দেখে নেয়া যাক ২০২৪ সালে মুক্তি প্রতীক্ষিত সিনেমাগুলো-
দরদ: সুপারস্টার শাকিব খানের ‘দরদ’ মুক্তি পাবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। অনন্য মামুন পরিচালিত এ ছবি গেল বছর শেষদিকে যখন নির্মাণ শুরু হয়, তখন থেকে আলোচনার তুঙ্গে। এতে শাকিবের বিপরীতে থাকছেন বলিউডের সোনাল চৌহান। বাংলাদেশ থেকে নির্মিতব্য প্রথম কোনো সর্বভারতীয় ছবি বলা হচ্ছে এটিকে। শুটিং শেষে বর্তমানে ছবিটি পোস্ট প্রডাকশন চলছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ফেব্রুয়ারিতে এ ছবিটি বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাবে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে দেখা যায়, ইন্দোবাংলা জয়েন্ট ভেঞ্চারে নির্মিত ‘দরদ’ নিয়ে বাঙালি সিনেপ্রেমীদের পাশাপাশি ইন্ডিয়ার দর্শকদের আগ্রহ বেশী।
নূর: রায়হান রাফী পরিচালিত আরেফিন শুভ ও ঐশী অভিনীত ‘নূর’ মুক্তির কথা আছে আসছে ভালোবাসা দিবসে। তবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিরেট রোমান্টিক প্রেমের ছবি ‘নূর’ এ শুভর লুক দেখে আগেই মুগ্ধ হয়েছেন সবাই। গেল বছর ‘মুজিব’ ছবিতে শুভর অভিনয় ও রাফীর ‘সুড়ঙ্গ’র ছবির সাফল্যে ‘নূর’ নিয়ে বেশ আগ্রহী দর্শকরা। নির্মাতা রাফী আগেই জানিয়েছেন, নূর-এ শুভর লুক দেখে দর্শক যা ভাবছেন গল্প ঠিক উল্টো হবে।
কাজল রেখা: মৈমনসিংহ গীতিকার কাজলরেখা অবলম্বনে সরকারী অনুদানে ‘কাজলরেখা’ সিনেমা নির্মাণ করেছেন ‘মনপুরা’ খ্যাত নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম। এটি মূলত ৪০০ বছরের পুরনো গল্প। কাজলরেখার প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ ও নবাগত চিত্রনায়িকা মন্দিরা চক্রবর্তী। বিভিন্ন চরিত্রে রয়েছেন রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা, ইরেশ যাকের, আজাদ আবুল কালাম, খায়রুল বাসার, সাদিয়া আয়মানসহ অনেকে। ‘মনপুরা’র মতো বহুল দর্শক নন্দিত ছবি উপহার দেয়ার কারণে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের এ ছবিটি দেখার জন্য দর্শক ইতোমধ্যে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এরইমধ্যে ছবিটির প্রচারণায় ব্যস্ত নির্মাতা। ফেব্রুয়ারিতে মুক্তির কথা শোনা গেলেও আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেননি গিয়াসউদ্দিন সেলিম।
রাজকুমার: গেল বছর ‘ইন্ডাস্ট্রি হিট’ ‘প্রিয়তমা’ উপহার দেয়ার পর ত্রয়ী জুটি শাকিব খান, আরশাদ আনদান ও হিমেল আশরাফের ছবি ‘রাজকুমার’ মুক্তি পাবে আগামী ঈদুল ফিতরে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অংশের শুটিং শেষের দিকে। চলতি মাসের শেষে এর শুটিং হবে মার্কিন মুলুকে। এতে শাকিবের নায়িকা মার্কিন অভিনেত্রী কোর্টনি কফি। ঘোষণার পর থেকে সিনেপ্রেমীরা ‘প্রিয়তমা’র অভাবনীয় সাফল্যে ভরসা রাখছে ‘রাজকুমার’র প্রতি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, শুটিংয়ের আগে থেকেই নির্মাতা আত্মবিশ্বাস নিয়ে হিমেল জানিয়েছেন, ‘প্রিয়তমা’র চেয়েও বেশি সফল হবে ‘রাজকুমার’।
ওমর: মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ছবি ‘ওমর’ মুক্তি পাবে আগামী ঈদুল ফিতরে। এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ। পরতে পরতে থ্রিলার ও সাসপেন্সে নির্মিত এ ছবিটিও মুক্তির পর আলোচনায় আসতে পারে। মুক্তির আগে এ ছবির গানগুলো নিয়ে বেশ আলোচনা হতে পারে। কারণ, এর আগে প্রজাপতি, তারকাঁটা, সম্রাট, যদি একদিন, সম্রাট বানিয়েছিলেন নির্মাতা রাজ। এসব ছবির মধ্যে তার তিনটি সিনেমা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। পাশাপাশি প্রতিটি ছবির কোনো না কোনো গান ম্যাসিভ ভাবে দর্শক নন্দিত হয়েছে।
তুফান: সুপারস্টার শাকিব খান অভিনীত তুফান মুক্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে চলতি বছর ঈদুল আযহায়। এটি বানাবেন সময়ের আলোচিত নির্মাতা রায়হান রাফী। পুরোপুরি অ্যাকশন ধাঁচের এ ছবিটি ঘোষণা দেয়া হয় গেল ডিসেম্বর। তারপর থেকে শোরগোল পড়ে যায়। বিশেষ করে ‘তুফান’-এ শাকিবের প্রকাশিত লুক ভাইরাল হয়ে যায়। ঘোষণার দিনই শাকিব জানিয়েছেন, এই ছবিটি দিয়ে হয়তো বাংলা সিনেমা শতকোটি ক্লাবে ঢুকতে পারে।
দেয়ালের দেশ: সরকারী অনুদানে মিশুক মনি পরিচালিত ‘দেয়ালের দেশ’-এ অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ ও শবনম বুবলী। গত অক্টোবরে ছবিটি মুক্তির কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আসেনি। তবে চলতি বছর যে কোনো সময় মুক্তি পেতে পারে। আগেই দেয়ালের দেশ’র পোস্টার প্রকাশিত হয়েছে। দেখা যায়, হিমাগারে পাটাতনে বেরিয়ে আছে বুবলীর নিথর শরীর, তার দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে বসে আছেন রাজ। ব্যতিক্রমী এমন পোস্টার নজর কাড়ে।
নেত্রী দ্য লিডার: তারকা দম্পতি অনন্ত জলিল ও বর্ষা অভিনীত নতুন ছবি ‘নেত্রী দ্য লিডার’ চলতি বছর যে কোনো উৎসবে মুক্তি পেতে পারে। ২০২১ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে ঢাকার একটি হোটেল ছবিটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। জানানো হয়, তুরস্কের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হবে এ ছবি। দুবছর ধরে শুটিং-ও শেষ হয়েছে। এটি পরিচালনা করছেন ভারতের দক্ষিণী নির্মাতা উপেন্দ্র মাধব। আরও আছেন ভারতীয় অভিনেতা কবির দোহন সিং, তরুণ অরোরা, প্রদীপ রাওয়াত। এতে বর্ষা একজন রাজনৈতিক নেত্রীর ভূমিকার অভিনয় করছেন, তার দেহরক্ষীর চরিত্র করছেন অনন্ত জলিল।
এসব ছবির বাইরেও মুক্তি পেতে পারে জয়া আহসান অভিনীত নূরুল আলম আতিক পরিচালিত সিনেমা ‘পেয়ারার সুবাস’। জয়ার প্রথম ইরানি সিনেমা ‘ফেরেশতেও রয়েছে’ মুক্তির অপেক্ষায় আছে। নাসির উদ্দিন খান অভিনীত ‘বলী’, ফেরদৌসী মজুমদ অভিনীত ‘আগন্তুক’ নামের দুটি ছবিও এ বছর মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে অমিতাভ রেজার ‘রিক্সা গার্ল’ সিনেমাটিও।
এছাড়া আরিফিন শুভ অভিনীত নীল চক্র, ফুটবল ৭১ ছবিটি আসতে পারে। তবে আফরান নিশো-সিয়ামের নতুন কোন সিনেমা আসবে সেটি এখনো জানা যায়নি, এমনকি কোনো ঘোষণাও দেয়া হয়নি। এই সময়ের তারকা অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত ‘এশা মার্ডার’ সিনেমাটিও আসতে পারে চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে। সানী সানোয়ার পরিচালিত সত্য ঘটনা অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মিত হচ্ছে।
এছাড়া শরিফুল রাজের কবি, পূজা চেরী আদর আজাদের নাকফুল, রোশানের রিভেঞ্জ, ডেড বডি, জামদানী, নিরবের স্পর্শ, ছায়াবৃক্ষ, কয়লা, সাইমনের শেষ বাজি মুক্তির কথা আছে।