ভোজন রসিক বাঙালির পরিচয় তারা মাছে ভাতে বাঙালি। তবে যদি বাঙালি খাবারে কিছুটা মোগল-নবাবী ছোঁয়া পেতে চান তাহলে পুরান ঢাকার কোন বিকল্প নেই। অনেক প্রাচীন ঐতিহ্যের ইতিহাস বহন করছে পুরান ঢাকা। তবে পুরান ঢাকা সবচেয়ে বিখ্যাত তার খাবারের জন্য। এমনই একটি বিখ্যাত খাবার `বাকরখানি’। সকালের এক কাপ চায়ের সাথে বাকরখানি না থাকলে যেন দিন শুরু হয় না। তবে এই বাকরখানির পিছনেও রয়েছে এক প্রেমের ইতিহাস।
নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁর দত্তক ছেলে জমিদার আগা বাকির খাঁর নামে এই রুটির নাম হয়েছে বাকরখানি। বাকরখানির সাথে জড়িয়ে আছে জমিদার আগা বাকির খাঁর প্রেমের ইতিহাস। কথিত আছে মুর্শিদাবাদের নর্তকি খনি বেগমের সঙ্গে বাকির যাঁর গভীর প্রেম ছিল। তার আবিষ্কৃত ও প্রিয় খাদ্য বিশেষভাবে তৈরি রুটির নাম তার প্রেম কাহিনীর উপর ভিত্তি করেই নামকরণ করা হয়েছিল বাকের খনি রুটি। পরবর্তী সময়ে এই নাম কিছুটা অপভ্রংশ হয়ে বাকরখানি নাম ধারণ করে।
পুরান ঢাকাবাসীর বাকরখানির চাহিদা মেটাতে রুটি তৈরি হতে শুরু হয় ভোর থেকে। বিশেষ প্রক্রিয়ায় তন্দুরে কয়লা গরম করে রুটিগুলো তৈরি করা হয়। তেল, ময়দা, পানি, লবণ দিয়ে তৈরি বাকরখানি খেতে হয় মুচমুচে। বিভিন্ন ধরনের বাখরখানির মধ্যে পনির, ঘি, নোনতা, চিনি, ঝুড়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
রুটি তৈরি বিষয়ে রুটি বিক্রেতা দেলওয়ার হোসেন বলেন,`আমরা প্রথমে তেল, লবণ আর পানি দিয়ে ময়দা গুলাই তারপর অনেক গুলো ভাগ করে গুল্লি কাটি। তারপর রুটি বেলে আমরা তন্দুরে রুটি লাগাই। তারপর মচমচা হলে বের করি রুটি।
পুরান ঢাকার অনেকের বাসায় সকালের নাস্তার টেবিলে থাকে বাকরখানি।
এমনই অনেক বছর থেকে বাকরখানি কিনতে আসা হায়াতুল নাবি বলেন, গত ১০ বছর ধরে আমি আমার মালিকের জন্য বাকরখানি নিয়ে যাই প্রতি সপ্তাহে। আমরা চায়ের সাথে বাকরখানি খেতে বেশি পছন্দ করি।
যুগ পরিবর্তন হলেও বাকরখানির চাহিদায় এখনও কমতি আসেনি। বরং চাহিদা বেড়েছে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে।
বাকরখানির কারিগর আলমগীর বলেন, ‘আমি ১৮ বছর ধরে বাকরখানি বানাই। এই বাকরখানি বানিয়েই সংসার চালাই। যখন ছুটিতে বাড়ি যাই মহাজন বাকরখানি দিয়ে দেয়, সেইটা নিয়ে যাই। কিন্তু এখন বাকরখানি শুধু পুরান ঢাকার মানুষ খায়না গ্রামের অনেক মানুষও খায়।’
কথিত আছে বাকরখানির জন্ম ১৮শ শতকে এবং ঢাকাতে প্রথম বাকরখানি তৈরি হয় লালবাগে। শুধু পুরান ঢাকাতেই নয় বাকরখানির দোকান চোখে পড়বে রাজধানী জুড়ে, যেখানে বাখারখানি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে। তবে বিশেষ অর্ডারে গুণতে হবে প্রতি পিস বাকরখানির জন্য ১০ থেকে ২০ টাকা।