কক্সবাজারের উখিয়া থেকে দেশি-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্রসহ ডিজিএফআই এর কর্মকর্তা হত্যা মামলার পলাতক আসামী মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা’র ওলামা বডি ও টর্চার সেলের প্রধান ওসমান প্রকাশ সালমান মুরব্বী ও তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
আজ (২৭ অক্টোবর) শুক্রবার দুপুরে র্যাব ১৫ এর মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবু সালাম চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের দেওয়া তথ্যে উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মধুরছড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন পাহাড়ে আরসার গোপন টর্চার সেলের সন্ধান পায় র্যাব। সেখান থেকে টর্চার সেলের সদস্য মোঃ ইউনুসকে (২৪) গ্রেপ্তার করে তারা।
ওই সময় টর্চার সেল থেকে ১টি নাইন এম এম বিদেশী পিস্তল, ৪ রাউন্ড গুলি, ৪টি একনলা বন্দুক, ২টি এলজি, ৫ রাউন্ড ১২ বোর কার্তুজ এবং টর্চার সেলের সরঞ্জামাদি ১টি কুড়াল, ৩টি বিভিন্ন সাইজের প্লাস, ১টি কাঠের লাঠি, ১টি স্টিলের লাঠি, ১টি করাত, ১টি নাম চাকু, ১টি লোহার রড, ১টি লোহার দা, ১টি হ্যাংগিং হুক, ১টি সিসর, ৪টি তালা, ৩টি বড় লোহার পেরেক, ২টি লোহার শিকল, ১টি রশি, ১টি কুপি বাতি এবং সুইসহ সুতার ১টি বান্ডিল উদ্ধার করা হয়। ধৃত আরসা কমান্ডার সালমান মুরব্বী থাইংখালী শরনার্থী ক্যাম্পের ব্লক ডি/৪ এর মৃত নুরুজ্জামানের ছেলে। আর আরসা সদস্য ইউনুছ কুতুপালং ক্যাম্পের ব্লক ৫ এর সৈয়দ হোসেনের ছেলে।
আরসার ওলামা বডির প্রধান সালমান মুরব্বী ২০১৭ সালে সপরিবারে অবৈধপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে থাইংখালীর শরণার্থী ক্যাম্প-১৩ এর ব্লক-ডি/৪ এ বসবাস শুরু করেন। পরে ২০১৮ সালে তিনি আরসার ওলামা কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য ও কমান্ডার মৌলভী মোস্তাক আহম্মদ এবং মৌলভী আবু রায়হান এর মাধ্যমে সন্ত্রাসী সংগঠনটিতে যোগদান করেন। এরপর তিনি অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। একপর্যায়ে তিনি ১৩ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক জিম্মাদার, হেড জিম্মাদার এবং ক্যাম্পের আরসার ওলামা বডির প্রধান হিসেবে কাজ শুরু করেন।
তার মাধ্যমেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওলামা বডির অন্যান্য সদস্যদের জন্য নির্ধারিত টাকা আসতো বলে জানা যায়। তিনি আরসা প্রধান এবং আরসার সেকেন্ড ইন কমান্ডের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন। তিনি আরসার শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত ছিলেন। এসব গ্রুপসমূহের মাধ্যমে শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাকে শরণার্থী শিবিরে আরসার কার্যক্রম সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করতেন। ক্যাম্পে খুন, হামলা, ও নাশকতা এবং অপহরণ সহ সকল ধরনের অপরাধী কাজ করতে আরসা প্রধান আতাউল্লাহর অনুমতি নিতেন সালমান মুরব্বী। ২০১৯ সালের শেষের দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে ও ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড় ও গহীন জঙ্গলে টর্চার সেল কাচারী স্থাপন করে সংগঠনটি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়েছে, এই টর্চার সেলে নিয়ে সাধারন রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি প্রত্যাবসনে আগ্রহীদের বিচারের নামে নির্যাতন চালানো হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্প’কে কয়েকটি জোনে বিভক্ত করে সালমান মুরব্বীর নেতৃত্বে আরসার কমান্ডাররা সাধারন রোহিঙ্গাদের সেলে নিয়ে নির্যাতন করে। এছাড়া স্থানীয়দের অপহরণ করে টর্চার সেলে আটকে রেখে নির্যাতনের মাধ্যমে বড় অংকের মুক্তিপণ আদায়ের জন্যও ব্যবহার করা হয় ওই টর্চার সেল।
র্যাব ১৫ এর মুখপাত্র মোঃ আবু সালাম চৌধুরী বলেন, ধৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ঠ আইনে মামলা দায়ের করে উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। চলতি বছর এই পর্যন্ত আরসার মোট ৭৩ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।