“গান, অভিনয়, নির্মাণ তিন কারণে দুই বাংলা জুড়ে খ্যাতিমান অঞ্জন দত্ত। তার মতে, অনেক বেশি সংখ্যক দর্শকদের কাছে পৌঁছানোই যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। যৌথ প্রযোজনা যেহেতু দুই দেশের, তাই দুই দেশের অর্ধেক অর্ধেক গল্প ও সমান সংখ্যক দর্শক থাকবে এটা উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়। কিন্তু এটাই হচ্ছে। এটা আসলে টেকনিক্যাল অ্যাসপেক্ট। এটা হওয়ার ফলে দুই দেশের শিল্পী টেকনিশিয়ানরা কাজ পাচ্ছে।”
গেল শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে দ্বাবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে অতিথি হিসেবে হাজির হয়েছিলেন কাঞ্চনজঙ্ঘা, বেলা বোস, রঞ্জনার মতো বহু কালজয়ী গান গেয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জনকারী অঞ্জন দত্ত।
সংগীতশিল্পী পরিচয়ের বাইরে তিনি অভিনেতা, তারপর নির্মাতা। থিয়েটারে নির্দেশনাতেও দক্ষ অঞ্জন। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি অংশ নেন উৎসব আয়োজকদের মাস্টার ক্লাসে। সেখানে দর্শকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিগুলো নিয়ে অঞ্জন দত্ত নিজের তার ব্যক্তিগত মতামত জানান।
অঞ্জন দত্ত বলেন, সবখানের দর্শক পাল্টাচ্ছে। তারা নানান জিনিস দেখতে চাইছে। ফাইনালি যৌথ প্রযোজনার দ্বারা দুই দেশের বেশি সংখ্যক দর্শকদের কাছে যেতে পারাটাই আমার মনে হয় বড় সার্থকতা। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশে থেকে হুমায়ূন আহমেদের গল্পের অর্ধেক নিয়ে আর কলকাতা থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্পের অর্ধেক নিয়ে ঢাকা থেকে চঞ্চল এবং ওপার থেকে স্বস্তিকাকে নেয়া হয় তাহলে সেটা কি ছবি হবে নাকি? যদি বেশি সংখ্যক দর্শকদের কাছে যেতে পারার উদ্দেশ্য নিয়ে যৌথ প্রযোজনায় ছবি করা যায় তাহলে আমার মতো ফেস্টিভ্যালে যাওয়া ফিল্ম মেকারদের বড় উপকার হয়।
কথা প্রসঙ্গে অঞ্জন দত্ত কথা তোলেন সিনেমার ডিসট্রিবিউরদের। সিনেমার পিছিয়ে পড়ার জন্য তিনি ডিস্ট্রিবিউটরদের দায়ী করে বলেন, দুই বাংলায় এখন শিল্প সম্মত বাণিজ্যিক সিনেমার ট্রেন্ড চলছে। কিন্তু ডিস্ট্রিবিউটররা কোথায় যেন এই সিনেমাটাকে এগুতে দিচ্ছে না। অনেকেই ২০২৪-এ এসে যে চিন্তায় চলছে সেই চিন্তায় সিনেমা চলে না। নতুন সাবজেক্ট এবং ডিরেক্টরদের জায়গা দিতে হবে, পৌরাণিক জিনিস সরিয়ে সবরকম ছবি চলার সুযোগ করে দিতে হবে।
“যেমন, অডিয়ান্স কাঁদতে চায়, তাদের একটু কাঁদানো ছবি দেখাই! ২০২৪-এ এসে এতো কাঁদানো ছবি করতে হবে কেন? থ্রিলার গল্প যদি দর্শক পছন্দ করে, তাই বলে সবাই ঝুঁকবে থ্রিলার বানাতে? এমন হলে তো দর্শক বিয়ে বাড়ির গল্প দেখতে পারবে না বা কমেডি গল্প দেখতে পারবে না। এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। যদি না ভাবা হয় তাহলে যারা একটু ভিন্ন ভিন্ন প্যাটার্নে গল্প বলতে চান, তাদের ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।”
মাস্টার ক্লাস শেষে শনিবার সন্ধ্যায় অঞ্জন প্রায় ঘণ্টাখানেক গান গেয়ে শোনান। উৎসবের মূল মিলনায়তনে গিটার হাতে একাই এদিন বেশ কিছু গান করেন অঞ্জন। শ্রোতাপ্রিয় গানের বাইরে নতুন দুটি গান গেয়ে শোনান।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে পর্দা নামে উৎসবের। যে উৎসবে এশিয়ান কম্পিটিশন বিভাগে ছিলো অঞ্জন দত্তের পরিচালিত ছবি ‘চালচিত্র এখন’। এই ছবিতে মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করে উৎসবের সেরা অভিনেতাও পুরস্কার জিতে নিয়েছেন অঞ্জন দত্ত।