চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কে এই অমৃত পাল সিং?

আবারও পুলিশের নাগাল থেকে পালিয়ে গেলেন খালিস্তানি সংগঠন ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দে’র প্রধান অমৃতপাল সিং। গত কয়েকদিন ধরে তার খোঁজে পাঞ্জাব জুড়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অমৃতপাল ও তার সঙ্গী পাপাল প্রীত সিংকে নাগালে পেয়েও ধরতে পারলেন না পাঞ্জাব পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হোশিয়ারপুর থেকে গা ঢাকা দেন খলিস্তানি এই নেতা এবং তার সঙ্গী।

জানা যায় একটি সাদা ইনোভা গাড়ি পাঞ্জাবের ফাগওয়াড়া থেকে হোশিয়ারপুর যাচ্ছিল। পুলিশের সন্দেহ হয় গাড়িটিতে অমৃতপাল রয়েছেন। পুলিশ চেকপোস্ট পার হওয়ার পরই গাড়িটি একটি গুরদ্বারে দাড়ায়। আর তখনই সেখান থেকে নেমে পালিয়ে যায় অমৃতপাল ও পাপাল প্রীত। তবে দু’জন সন্দেহভাজনকে অবশ্য আটক করতে পেরেছে পুলিশ। ওই দু’জন ইনোভা গাড়িটির পিছু নিয়েছিল। এরপর পুলিশ স্থানীয় এলাকাগুলোতে তল্লাশি চালায়। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি অমৃতপালের।

এদিকে এক সিসিটিভি ফুটেজে অমৃতপালকে দেখা গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের। সেখানে দেখা যায় অমৃতপালের মাথায় পাগড়ি নেই। তার গায়ে ডেনিম জ্যাকেট, চোখে সানগ্লাস এবং মুখে মাস্ক। তার সঙ্গী পাপলকেও দেখা গিয়েছে ফুটেজে। তার মুখও মাস্কে ঢাকা ছিল ।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, আত্মগোপনে থাকা উগ্র শিখ নেতা অমৃতপাল ক্রমাগত যোগাযোগ রেখে চলেছে পাকিস্তানের সাথে। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এর নির্দেশ মেনে চলছে এই খালিস্তানি নেতা।  সরকারি সূত্রের মতে, তিনি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং বিদেশে অবস্থিত কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। এই খালিস্তানপন্থী শিখ নেতা অমৃতপাল সিংকে গ্রেফতার করতে গিয়ে বারবার বাধার মুখে পড়েছে পুলিশ।

গত মাসেই তার ঘনিষ্ঠ অনুচর লভপ্রীত তুফানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর অমৃতপাল সিং হুমকি দেয় লভপ্রীতকে না ছাড়লে ফল ভাল হবে না। একপর্যায়ে থানা ঘেরাও করে হামলাও করে তার অনুসারীরা। এরপরেই অমৃতপাল সিংকে গ্রেফতারের অভিযান শুরু হয়েছে। অমৃতপাল সিংয়ের বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলাটি অস্ত্র আইনে নথিভুক্ত করা হয় তার সহযোগীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের পর।

তিনি এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ছড়ানো, খুনের চেষ্টা, পুলিশ কর্মীদের ওপর হামলা এবং সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি ফৌজদারী মামলার অধীনে মামলা করা রয়েছে।

পাঞ্জাব পুলিশ তাকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করার পরে সিংকে গ্রেপ্তার করার জন্য রাজ্যব্যাপী নাটকীয় অভিযান তাকে আরও বেশি বিখ্যাত করে তুলেছে। অমৃতপাল ২০২১ সালে লাল কেল্লায় কৃষকদের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

খালিস্তান ও অমৃতপাল

খালিস্তান হলো ভারতের পাঞ্জাবের একটি অঞ্চল। খালিস্তান আন্দোলন হলো একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন যা পাঞ্জাব অঞ্চলে খালিস্তান নামে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিখদের জন্য একটি স্বদেশ তৈরি করতে চায়।

অমৃতপাল একজন উগ্র ভারতীয় খালিস্তান বিচ্ছিন্নতাবাদী, শিখ প্রচারক এবং খালিস্তানি সংগঠন ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দে’ (পাঞ্জাবের উত্তরাধিকারী) সংগঠনের প্রধান নেতা। ৩০ বছর বয়সী এই বিতর্কিত নেতা ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দে’র প্রতিষ্ঠাতা দীপ সিধুর সোচ্চার সমর্থক এবং বেশ কিছু আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল বলে জানা গেছে। সিধুর মৃত্যুর পর অমৃতপাল প্রধান নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি একজন উগ্র মৌলবাদী প্রচারক, খালিস্তান সহানুভূতিশীল এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

অমৃতপাল ১৯৯৩ সালে অমৃতসরের জাল্লুপুর খেরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন এবং ২০১২ সালে দুবাইতে  তার চাচার পরিবহন কোম্পানিতে কাজ করতেন।

টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিং পাঞ্জাবের রাজনীতিবিদ এবং পুলিশের নজরে আসেন মাত্র ছয় মাস আগে যখন তিনি অভিনেতা থেকে ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দে’র প্রধান হন।