ইংল্যান্ড আসরে শিরোপার অন্যতম দুই দাবিদার ভারত ও নিউজিল্যান্ড। তবে সেমিফাইনালে এক দলকে বিদায় নিতে হবে। কয়েকঘণ্টা পরই ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রথম সেমিতে শিরোপা মঞ্চের টিকিট কাটার পরীক্ষায় নামবে কোহলি ও উইলিয়ামসনের দল।
৯ ম্যাচে ৭ জয়, এক হার ও একটি পরিত্যক্ত ম্যাচের সুবাদে সর্বোচ্চ ১৫ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ভারত। অন্যদিকে লিগপর্বের শেষ তিনটি ম্যাচে হেরে ১১ পয়েন্ট নিয়ে শ্রেয়তর রানরেটের সুযোগে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে চতুর্থ দল হিসেবে সেমির টিকিট পায় নিউজিল্যান্ড।
গত আসরের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ডের সেমিফাইনালে পথ হারিয়ে ফেলার পুরনো অভ্যাস রয়েছে। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ছয় সেমির ছয়টিতেই হেরেছে কিউইরা। সপ্তমবারে এসে ভাগ্য বদলায়। ঘরের মাঠে ২০১৫ বিশ্বকাপে ধারায় পরিবর্তন ঘটিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় তাসমান সাগর পাড়ের দেশটি। তবে ফাইনাল জেতা হয়নি। এবার উইলিয়ামসনদের ব্যাক-টু-ব্যাক ফাইনালের হাতছানি।
অন্যদিকে সেমিফাইনালে ভারতের ফলাফল ফিফটি-ফিফটি। এখন পর্যন্ত ছয়বার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে তিনবার জয় পায় ভারত। পরাজিত হয় সমান তিনবার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাফল্য সংখ্যাটা এগিয়ে নেয়ার পালা দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে দুদলের মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত। ১০৭ বারের সাক্ষাতে টিম ইন্ডিয়ার ৫৫ জয়ের বিপরীতে নিউজিল্যান্ড জিতেছে ৪৫ ম্যাচে। একটি ম্যাচ টাই হয়েছে, ছয়টি পরিত্যক্ত।
তবে বিশ্বকাপের পরিসংখ্যান কিছুটা এগিয়ে রাখছে কিউইদের। বিশ্বমঞ্চে সাতবারের সাক্ষাতে নিউজিল্যান্ডের চার জয়ের বিপরীতে ভারতের জয় তিনটি।
বিশ্বকাপের সেমিতে সবশেষ ২০০৩ সালে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও নিউজিল্যান্ড। সেবার কিউইদের হারায় টিম ইন্ডিয়া। চলতি আসরে লিগপর্বের ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেস্তে গেলেও বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতকে ৬ উইকেটে হারানোর টাটকা স্মৃতি আছে কিউইদের। তাতে ভারতের সমান আত্মবিশ্বাসী হয়েই মাঠে নামবেন টেলর-গাপটিলরা।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে খানিকটা চাপে থাকবে ভারতই। লিগপর্বের শীর্ষ দল হিসেবে সেমিতে জায়গা করে নিয়েছেন রোহিত-কোহলিরা। র্যাঙ্কিংয়ের দুই সেরা ব্যাটসম্যান কোহলি ও রোহিত একাদশে। র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর বোলারও বুমরাহও তাদের দলে। বড় ম্যাচের অভিজ্ঞতায়ও এগিয়ে ভরত। সবমিলিয়ে জয়ের জন্য কোহলিদের উপরই চাপ থাকবে।
নিউজিল্যান্ডের ওপর প্রত্যাশার চাপ কম। কেননা হটফেভারিট হিসেবে টুর্নামেন্ট শুরু করেনি গত আসরের রানার্সআপরা। কিউইদের নিয়ে প্রত্যাশাও কম। ফলে তারা নির্ভারভাবে খেলতে পারবেন।
এই ধরনের নির্ভরতা যেকোনো ভালো দলকে বিপজ্জনক করে তোলে। আর নিউজিল্যান্ড যে ভালো দলের চেয়েও ভালো সেটি নিয়ে কারো প্রশ্ন থাকার কথা নয়। তাদের দলে রয়েছে বিশ্বমানের পেস বোলিং অ্যাটাক। মারকুটে ওপেনার, শক্তিশালী মিডলঅর্ডার ও অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার থাকায় দুর্দান্ত কিছুর স্বপ্ন দেখছে নিউজিল্যান্ড।
যদিও নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স খুব একটা সুখকর নয়। তবে মঙ্গলবারের দিনটি যে তাদের হবে না সেটিও আগাম বলা যাচ্ছে না।
শক্তিশালী টপঅর্ডার ও ভারসাম্যপূর্ণ বোলিং অ্যাটাক ভারতকে ভরসা যোগাচ্ছে অন্যপ্রান্তে। তবে মিডলঅর্ডারে টিম ইন্ডিয়ার অবস্থা নাজুক। এটিকেই টার্গেট করতে পারে নিউজিল্যান্ড। শুরুতেই যদি কিউই পেসাররা ভারতের টপঅর্ডার গুঁড়িয়ে দিতে পারেন, তবে কোহলির দলকে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে।
নজর থাকবে যাদের উপর
জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত): আইসিসির র্যাঙ্কিংয়ের নাম্বার ওয়ান বোলার হিসেবেই ইংল্যান্ডে পা রেখেছিলেন জাসপ্রিত বুমরাহ। পরে ময়দানে আসরজুড়েই নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়ে চলেছেন ভারতীয় পেসার। সময়মতো দলকে ব্রেক-থ্রু এনে দেয়ার পাশাপাশি ডেথ ওভারগুলোতে বেশ কার্যকরী তিনি। বোলিং বৈচিত্র্য, বাউন্স, গতি, সুইং, ইয়র্কার- ব্যাটসম্যানদের নাকাল করার মতো সব ধরনের অস্ত্রই রয়েছেন জাসপ্রিতের ভাণ্ডারে। নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন চলতি আসরে ৮ ম্যাচে ১৭ উইকেট নেয়া পেসার।
কেন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড): আধুনিক ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন কেন উইলিয়ামসন। যেকোনো কন্ডিশনে যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই রান করতে সক্ষম টপঅর্ডারের এ ব্যাটসম্যান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে স্পিন-অ্যাটাকে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামবে ভারত। উইলিয়ামসন স্পিনের বিপক্ষে বরাবরই সফল। ভারতীয় বোলারদের বিপক্ষে হুমকি হয়ে ওঠার সব রসদই আছে আসরে ৮ ম্যাচে ৯৬. ২০ গড়ে ৪৮১ রান করা কিউই অধিনায়কের।
টিম নিউজ
দুজন স্পিনার নাকি একজন স্পিনার খেলাবে ভারত সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে কেদার যাদবকে একাদশে নেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড দলে একটি পরিবর্তন আসবে। লোকি ফার্গুসনকে জায়গা দিতে ছিটকে পড়বেন টিম সাউদি।
সম্ভাব্য একাদশ
ভারত: রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, দিনেশ কার্তিক/রিশভ পান্ট, এমএস ধোনি, কেদার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, ভুবনেশ্বর কুমার, কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চাহাল ও জাসপ্রিত বুমরাহ।
নিউজিল্যান্ড: মার্টিন গাপটিল, কলিন মুনরো/হেনরি নিকোলস, কেন উইলিয়ামসন, রস টেলর, টম ল্যাথাম, জেমস নিশাম, মিচেল স্যান্টেনার, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, ম্যাট হেনরি, লোকি ফার্গুসন ও ট্রেন্ট বোল্ট।
বিজ্ঞাপন