চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বাউল শাহ্ আব্দুল করিমকে কেন এই অবহেলা: শাহ্ নূর জালাল

বাউল সাধক শাহ্ আবদুল করিমের ছেলে শাহ্ নূর জালাল সম্প্রতি ঢাকায় এসেছিলেন। গতকাল শুরু হয়েছে ‘শাহ্ আব্দুল করিম লোক উৎসব ২০১৭’। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেছেন বাবাকে নিয়ে একান্ত কিছু কথা।

চ্যানেল আই অনলাইন : কেমন আছেন?

আল্লাহ খুব ভালো রেখেছেন।

চ্যানেল আই অনলাইন : ঢাকায় কোনো কাজ নিয়ে এসেছেন?

হ্যাঁ, ৩ মার্চ থেকে সুনামগঞ্জে শুরু হবে ‘শাহ্ আব্দুল করিম লোক উৎসব ২০১৭’। এবার যাবতীয় সহযোগিতা করছে ‘প্রাণ পটেটো ক্র্যাকার’। বাবার গান প্রাণের ইউটিউব চ্যানেলে সংরক্ষণ করা হবে। সেই উৎসব নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ও ইউটিউবের স্বত্ব সংক্রান্ত চুক্তি করতেই ঢাকায় আসা।

চ্যানেল আই অনলাইন : ‘শাহ্ আব্দুল করিম লোক উৎসব ২০১৭’ নিয়ে বলুন।

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে উজানধল মাঠে ৩ মার্চ বিকেলে উৎসব শুরু হবে। এদিন বাবার জীবন ও কর্ম নিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আলোচনা করবেন। রাতে হবে গান। প্রথম দিন স্থানীয় শিল্পী ও অতিথিরা গান করবেন। ৪ মার্চ গান করবেন ঢাকার শিল্পীরা।

চ্যানেল আই অনলাইন : ছোটবেলা থেকে বাবাকে কেমন দেখেছেন?

আমার বাবা ছিলেন বন্ধুপ্রিয়। মানুষ ছাড়া থাকতে পারতেন না । মানুষ পেলে খুশি হতেন। বাড়িতে মানুষ না থাকলে আমাদের দিয়ে নৌকা পাঠিয়ে বন্ধুদের নিয়ে আসতেন। অতিথি পেলে খুবই খুশি হতেন। একটু পরেই আবার চিন্তা করতেন, এদের বসতে দেব কোথায়, কী খাওয়াব।

চ্যানেল আই অনলাইন : বাবার সঙ্গে আপনার যে স্মৃতিটা এখন মনে পড়ছে—

আমাদের ওখানে ‘ধলের মেলা’ বলে একটা মেলা হয়। বাবার সঙ্গে ধলের মেলায় গিয়েছি। সেই মেলায় গেলে সবাই ওনাকে জড়িয়ে ধরতেন। আমাকেও আদর করতেন। বাবার ভক্তরা আমাকে মিষ্টি মিঠাই কিনে দিতেন। আবার আমরা গল্প করতে করতে একসঙ্গে ফিরতাম। বাবার সঙ্গে আমার বন্ধুর মতো সম্পর্ক ছিল। আমাকে বাজান, বন্ধু, আব্বা… একেক সময় একেক নামে ডাকতেন। আমি কাছে থাকলেই তিনি খুশি হতেন।

চ্যানেল আই অনলাইন : আপনার বাবা গান লিখে প্রথম কাকে শোনাতেন?

বাড়িতে থাকলে মাকে ডাকতেন। পাশে বসিয়ে খুব উৎফুল্ল হয়ে বলতেন, এই মাত্র একটা গান বেঁধেছি। এরপর মাকে সেই গান শোনাতেন। আমাকে শোনাতেন। ভক্তরা বাড়িতে থাকলে তাদের শোনাতেন।

চ্যানেল আই অনলাইন : বাবা আপনাকে প্রথম শুনিয়েছেন, এমন কোন গানের কথা মনে পড়ছে?

হ্যাঁ, আমার মা মারা যাওয়ার পর বাবা লিখলেন, ‘আর জ্বালা সয় না গো সরলা/ তুমি আমি দুইজন ছিলাম/ এখন আমি একেলা’। গানটা লিখে আমাকে ডাকলেন। বললেন, ‘তোমার মাকে নিয়ে গান লিখেছি।’ গাইতে শুরু করলেন। তখন ওনার চোখের জল গলা বেয়ে পরছিল।

চ্যানেল আই অনলাইন : আপনার মা-বাবার সম্পর্ক কেমন ছিল?

আমার মা খুব সহজ সরল ছিলেন। মায়ের নাম আফতাব উন নেসা। কিন্তু অতি সহজ সরল ছিল বলে বাবা সরলা বলে ডাকতেন। মা বাবাকে অসম্ভব ভক্তি করতেন। বাবাও মাকে খুব ভালোবাসতেন।

চ্যানেল আই অনলাইন : ১৫ ফেব্রুয়ারি ছিল শাহ্ আব্দুল করিমের জন্মদিন। কোন আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। সেভাবে জন্মদিন পালন করা হয়নি। কেন?

এটা খুবই দুঃখজনক। আমার বাবা আমার পরিবারের নয়, দেশের সম্পদ। তার লেখা গান দেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা গেয়ে জনপ্রিয় করছেন। নিজেরাও জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন। অথচ তার জন্মদিন কেউ মনে রাখেনি। আমরা গরীব মানুষ। বেশি কিছু করতে পারি না। দুঃখ লাগে। হাসন রাজার নামে সুমানগঞ্জে তোরণ হয়েছে। রাধারমণের নামে তোরণ হয়েছে জগন্নাথপুরে। কিন্তু শাহ আব্দুল করিমের নামে কোনো তোরণ হয় নাই। তার সমাধিটা অবহেলিত। তার বাড়ি যাওয়ার রাস্তা কাঁচা। বর্ষা হলে তলিয়ে যায়। একজন মানুষ গেলে বসবে, সেই জায়গাও নাই। তার ব্যবহার করা বাদ্যযন্ত্রগুলোর রক্ষাবেক্ষণের ব্যবস্থা নাই। তাকে কেন এই অবহেলা?

চ্যানেল আই অনলাইন : আপনি এখন কী করছেন?

আমি বাবার আদর্শেই চলছি। গান গাই। গান লিখি। ২০০৭ সালে আমার লেখা বাউল গান নিয়ে ‘তুমি আপন ‘ নামে বই বের হয়েছে। আরেকটা বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত। শিগগিরই নতুন বই বের হবে।