২০২৩ সালের পুরো বছরজুড়েই ছিলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির দাপট। দাপ্তরিক কাজসহ নিত্যদিনের নানা কাজে বেশ ভালোভাবেই রাজত্ব করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি। গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে স্কুলের এসাইনমেন্ট সবখানেই জায়গা করে নিয়েছে এআই।
জীবনকে সহজ করে তুললেও এর বিকাশ জনমনে জন্ম দিয়েছে নতুন শঙ্কার। একটি রোবট যখন একাই অনেক কাজ করতে সক্ষম তখন অনেকেই ভাবছেন কর্মক্ষেত্রে মানুষের প্রয়োজন বুঝি ফুরিয়েই এল। তবে চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নানান ক্ষেত্রে এআই এর ব্যবহার যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। জেনে নেওয়া যাক বিদায়ী ২০২৩ সালে কোন ৫ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি আলোচনায় ছিল:
১. চ্যাট জিপিটি
২০২৩ সালের পুরো বছরজুড়ে যেসব এআই প্রযুক্তি বেশি ব্যবহৃত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো চ্যাটজিপিটি। ২০২২ সালের শেষের দিকে আর্বিভাব হলেও ২০২৩-এ সারা বছরই আলোচনায় ছিলো এই প্রযুক্তি। জিপিটি অর্থ হচ্ছে ‘জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইন্ড ট্রান্সফরমার’। চ্যাট জিপিটিতে প্রশ্ন করে নানা ধরণের কঠিন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। মানুষের মতো অনেকটা নির্ভুলভাবেই ওয়েব সাইট তৈরি, কোডিং, গবেষণার কাজ করতে পারে এই প্রযুক্তি। এমনকি লিখতে পারে আর্টিকেল,গল্প, কবিতাও।
২. গুগল
গুগল আগে থেকেই সার্চের ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করে আসছিল। চ্যাটজিপিটি বাজারে আসার পর এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে ‘বার্ড’ নামে নিজস্ব একটি এআই চ্যাটবট প্রকাশ করে গুগল। এর মাধ্যমে ১টি নয় ২টি নয়, বরং ২০টি প্রোগ্রামিং ভাষায় সফটওয়্যার তৈরির কোড লেখা যায়। বলা হচ্ছে, এই বটটি কোন সফটওয়্যারকে ডিবাগ করতেও সক্ষম। অর্থাৎ সফটওয়্যারের কোডে কোন গন্ডগোল থাকলে বার্ড তা নিজেই খুঁজে বের করতে পারবে। বার্ড ছাড়াও গুগলের ‘গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট’ নামক ভার্চুয়াল সহায়ক ব্যবস্থার মাধ্যমে নিত্যদিনের কাজকে সহজ করার প্রযুক্তিতো আছেই। মূলত হ্যান্ডস-ফ্রি ভয়েস কন্ট্রোল এর ফিচার হলো গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট। তবে টেক্সট এর মাধ্যমেও গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার করা যায়।
৩. এআই চালিত বাহন
ইলন মাস্কের এআই চালিত কার টেসলার সাফল্যের পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হয়েছে অনেক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এই ধরণের গাড়ি চালাতে দরকার হবে না কোন ড্রাইভারের। ক্যামেরা সেন্সর সুইটের ভিত্তিতে এই ধরণের বাহন পরিবেশগত এবং ভৌগলিক যে কোন বাধা অতিক্রম করে চলতে পারবে। তবে চালক বিহীন গাড়ি পুরোপুরিভাবে রাস্তায় নামাতে আরও নিরীক্ষা চলছে।
৪. সহকর্মী হিসেবে এআই
২০২৩ সালে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে মানুষের সহকর্মী হিসেবে এআই নির্মিত হিউম্যানয়েড রোবটকে কাজ করতে দেখা গেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণেই ২০২৩ সালের প্রথম ৯ মাসেই প্রযুক্তি খাতে প্রায় আড়াই লাখ কর্মী ছাঁটাই করেছে গুগল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফটের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও মানুষের মতো নির্ভুলভাবে সংবাদ পাঠ করে আলোচনায় এসেছে কয়েকটি হিউম্যানয়েড রোবট। মানুষের চেয়ে নিখুত এবং আর কমসময়ে অধিক কাজ করতে সক্ষম হওয়ায় সহকর্মী হিসেবে এর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
৫. ডিপফেক
জেনারেটিভ এআইয়ের জনপ্রিয়তা নতুন নতুন সম্ভাবনা যেমন সৃষ্টি করেছে তেমনই এই প্রযুক্তির অপব্যবহারও দেখা গেছে ২০২৩ সালে। এমনই একটি সমালোচিত প্রযুক্তির নাম ‘ডিপফেক’। এই প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে নকল ভিডিও। এসব ভিডিওতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন ব্যক্তির মুখের অবয়ব বা কণ্ঠস্বরকে অন্য কারোর সাথে এমনভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় যে অনেকেই বুঝতে পারেন না এটি নকল ভিডিও। তাই বছরজুড়েই ডিপফেক ভিডিও নিয়ে তৈরি হয়েছে আলোচনা–সমালোচনা।