পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকদের বিরোধিতা সত্ত্বেও নতুন করে সড়ক বিভাজন নির্মাণ করতে গিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডে সড়ক বিভাজকে ৫৬৩টি গাছ কেটেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কাটা হবে আরও ৩৭টি গাছ।
এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন এলাকাটির স্থানীয় বাসিন্দারাসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন।
তাদের বক্তব্য: নতুন করে বিভাজন নির্মাণ করতে গাছ কাটার প্রয়োজন ছিল না। গাছ রেখেও বিভাজন তৈরি করা যেতো।
ডিএসসিসি’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে: সড়কের বিভাজন দুই দিক থেকে সমান না হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ একটি বিভাজন করতেই এ কাজ করছে তারা। বাসরুট বর্ধিত করার কারণে সাত মসজিদ সড়কটি বাস চলাচলের একটা নতুন রুট হয়েছে। ঘাটারচর থেকে বসিলা হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত বাস যাতায়াত করবে। বাণিজ্যিভাবে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেটর অথরিটির আওতায় এই বাসগুলো পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো সড়কের যে বিভাজন, তা দুই দিক থেকে সমানভাবে ছিল না। তাই আমরা বিভাজনটি স্থানান্তরের মাধ্যমে সমান করে পূর্ণাঙ্গ একটা বিভাজন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন: দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তো এতদিন কিছু বলেনি। একটা প্রকল্পের কাগজ ধরিয়ে দিয়েছে ঠিকাদারদের হাতে, ওই দিয়ে তারা কাজ করছে। আমরা যাবার পরে তারা দুই একটা গণমাধ্যমে বলেছে, সাত মসজিদ রোডে জ্যাম থাকে!
সাত মসজিদ সড়কে মানুষের পারাপার নিরাপদ করতে নতুন নকশায় বিভাজন তৈরি হচ্ছে জানিয়ে ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ বলেন: আগের বিভাজনটি কিছুটা নিচু হওয়ায় যেখান-সেখান দিয়ে মানুষ রাস্তা পারাপার হতো। এছাড়া এই সড়কে রাস্তা পারাপারের ১০ থেকে ১২টা কাটা (ক্রসিং) ছিল। আমরা সেগুলো বন্ধ করে প্রয়োজনীয় চার থেকে পাঁচটি অংশ রাখবো। যাতে পথচারীরা নিরাপদে পারাপার হতে পারে।
“রাস্তার মাঝখানে সড়ক বিভাজনে দুই রকমের চওড়া। এই চওড়া ঠিক করতে আর কোন উপায় ছিল না এই গাছগুলো কাটা ছাড়া।”
এগুলোকে ‘হাতগড়া গল্প’ উল্লেখ করে বেলার রিজওয়ানা হাসান বলেন: রাস্তায় অনেক জ্যাম, আর এই সব রাস্তা বাদ দিয়ে মানুষ সাত মসজিদ রোড নিয়েই অভিযোগ দিতে গেল!
নতুন করে বিভাজনে গাছ রোপণ করা হবে জানিয়ে ডিএসসিসির এই কর্মকর্তা বলেন: সড়কের উন্নয়ন কাজের কারণে কিছু কিছু গাছ, যেগুলো এলাইনমেন্টের ভেতরে ছিল, সেগুলো কাটা পড়তোই। আর বিভাজনের বাইরের গাছও কাটতে হয়েছে আমাদের। আমরা স্বীকার করি, কিছু কিছু গাছ আমাদের কাটতে হয়েছে। কিন্তু আসন্ন বর্ষা মৌসুমে আমরা ওই বিভাজনে দ্রুত বর্ধনশীল গাছ পুনরায় রোপণ করে দেবো।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন: এখন যদি সৌন্দর্যবর্ধন আর নিরাপত্তার কথা বলে দেশীয় গাছগুলো কেটে যদি বাগান বিলাস লাগায় তাহলে না আপনার তাপ কমাবে, না আপনার দূষণ কমাবে, না আপনাকে ছায়া দিবে, না আপনাকে বাজ পড়লে রক্ষা করবে।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়: ডিএসসিসির বিভিন্ন সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনে ৯ কোটি ৬২ লাখ টাকার একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডেও সড়ক বিভাজকের উন্নয়ন কাজ হচ্ছে।
এর আগে সোমবার ‘সাত মসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন’ কমিটির পক্ষ থেকে গাছ কাটার প্রতিবাদে ডিএসসিসির কাছে স্মারক লিপি জমা দিতে যায় প্রতিনিধিদল। তারা মেয়রের সহকারী একান্ত সচিব নাছিরুল হাসান সজীবের কাছে স্মারক লিপি জমা দেয়। স্মারক লিপি দেয়ার আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে সাত মসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন কমিটির পক্ষ থেকে আন্দোলনের সমন্বয়কারী আমীরুল রাজীব বলেন, ‘গাছগুলো কোনভাবেই সড়ক ও নাগরিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়। গাছ রেখেই সড়ক সম্প্রসারণ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। রাতের আঁধারে গাছগুলো কাটা হয়েছে।
সাত মসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন কমিটির দাবিগুলো হলো– সাত মসজিদ সড়কদ্বীপে গাছ কাটা অবিলম্বে বন্ধ করা এবং কেটে ফেলা গাছগুলোর জায়গায় স্থানীয় প্রজাতির গাছ পুনরায় লাগানো, গাছ রোপণ করে তা আবার কেটে ফেলার রেওয়াজ বন্ধ করা, নগরের বনায়ন, গাছ রক্ষা এবং কাটার প্রয়োজনে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করা ইত্যাদি।
গাছ বাঁচাতে সড়কে পাহারা:
এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলনের কারণে গাছ কাটতে রাতের আঁধারকে বেঁচে নেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগে- গাছের প্রাণ বাঁচাতে সড়কে পাহারা বসিয়েছেন এলাকাবাসী ও পরিবেশবিদরা।
রাতে তাদের এ কর্মসূচি থেকে চলে প্রতিবাদী গান, বক্তৃতা ও পোস্টার লেখা। এলাকাবাসী ও পরিবেশবিদরা জানান, সারারাত তারা পাহারা দেবেন।
ধানমন্ডির সড়ক বিভাজকে গাছ কাটা বন্ধ করতে চিঠি :
গত ৩ মে ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে সড়ক বিভাজকের গাছ কাটা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের সড়কদ্বীপের গাছ নির্বিচারে না কেটে উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে এবং অবশিষ্ট গাছগুলো কাটা বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়।