চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের উপর চাপ বাড়াবে যুক্তরাষ্ট্র

মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত নিতে মিয়ানমারের উপর চাপ বাড়াবে মার্কিন যুুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে বলেও জানান মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি সাইমন হেনশা।

শুক্রবার উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি। এসময় মানবিক সংকটে বাংলাদেশের গ্রহণ করা উদ্যোগের প্রশংসা করেন সাইমন হেনশা।

পরিদর্শন শেষে তিনি জানান: বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে চাপ অব্যাহত রেখেছে তার দেশ। আগামীতে এই চাপ আরও বাড়ানো হবে।

বাংলাদেশের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ছোট একটি দেশের পক্ষে এত মানুষকে আশ্রয় দেয়া নজিরবিহীন। এ সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।

এর আগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে দেশটির সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সকল আমন্ত্রণ বাতিল করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

ওই সময় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিদার নোয়ার্ট রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের উপর চালানো সহিংসতা-নির্যাতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন: নৃশংসতার জন্য কেউ দায়ী হলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা অপরিহার্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলমান সহিংসতা বন্ধে বর্মী জেনারেলদের সঙ্গে কাজ করা ও দীর্ঘকালীন সময়ের জন্য সকল রকম সেনা সরঞ্জামাদি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে চলমান নিষেধাজ্ঞাসহ জবাবদিহিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়।

এর মধ্যে ‘লেহি আইন’ অনুসারে রাখাইন রাজ্যের সামরিক কর্মকাণ্ডে যেসব কর্মকর্তা ও ইউনিট জড়িত তাদের সকলকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাপ্রাপ্ত যেকোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যে তাদের কাছে পাঠানো আমন্ত্রণপত্র বাতিল করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।

৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় এক হাজার মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।