দরজায় কড়া নাড়ছে পয়লা বৈশাখ। রাত পোহালেই দেশব্যাপী স্বাগত জানানো হবে নববর্ষ-১৪২৪কে। পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলে নতুন বর্ষকে বরণ করে নিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলছে বর্ষবরণের সর্বশেষ প্রস্তুতি। এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মুক্ত চিন্তার বিকাশ হোক’।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের দারুণ ব্যস্ততা। নানারকম ছবি আঁকছেন তারা। কেউবা ডামি তৈরিতে ব্যস্ত। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় লোকজ সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়েই কাজ করছে চারুকলা বিভাগ। এছাড়াও পালকি, লোকজ ঘোড়া, হাতি, প্লাকার্ড, ফেস্টুনসহ বাঘ ও প্যাঁচার ছোট-বড় বিভিন্ন মুখোশ তৈরি করছেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
পয়লা বৈশাখের প্রস্তুতির আয়োজনে দায়িত্বে থাকা চারুকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সুবীর মণ্ডল বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পাওয়ার পর দ্বিতীয় পয়লা বৈশাখ হবে এটা। তাই এবারের আয়োজনটা একটু রমরমা। বরাবরের মতো বাংলা সংস্কৃতির সবকিছুই থাকবে এবারের আয়োজনে। পালকি, লোকজ ঘোড়াসহ নানা ধরনের শিল্পকর্ম পয়লা বৈশাখ ১৪২৫-কে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করে তুলবে বলে আশা করছি।
বর্ষবরণে প্রতিবারের ন্যায় এবারো অনুষ্ঠানের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ১৪ এপ্রিল শনিবার সকাল ৯টায় চারুকলা বিভাগের সামনে থেকে উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশাল মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদের আয়োজনে থাকছে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
যুগ যুগ ধরে বাঙালি সত্ত্বাকে ধারণ ও লালন করার পাশাপাশি সকল অশুভকে দূরে ঠেলে মঙ্গল কামনায় এই শোভাযাত্রাটি বের হবে বলে জানান বিভাগের শিক্ষকেরা।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঙালির ঐতিহ্য, আবহমান গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে তৈরি করা হয়েছে লোকজ ঘোড়া, হাতি, বাঘ, অচিন পাখি, সম্পান ও টেপা পুতুলের বিভিন্ন মোটিফ। এর সঙ্গে অশুভ শক্তিকে দূর করে নিজেদের এবং দেশের মঙ্গলের জন্য মোটিফ হিসেবে থাকছে জাতীয় ফুল শাপলা।
প্রস্তুতি সম্পর্কে চারুকলা বিভাগের সভাপতি ময়েজউদ্দিন বলেন, চারুকলা বিভাগের আয়োজনেই প্রত্যেক বছর শোভাযাত্রা হয়ে থাকে। শোভাযাত্রার জন্য প্রত্যেক বছর সমসাময়িক ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে একটা থিম করে থাকি। এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মুক্ত চিন্তার বিকাশ হোক’। কয়েকদিন যাবৎ দেখেছেন বাংলার সমস্ত মানুষ একসাথে, একযোগে কোটা সংস্কারের আন্দোলন করেছে। তাদের দাবির মাধ্যমে চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছে। এই ঘটনার সাথেও প্রতিপাদ্যের সামঞ্জস্যতা রয়েছে।
শোভাযাত্রার আকর্ষণ হিসেবে থাকা বিভিন্ন মোটিফের তাৎপর্য বর্ণনা করতে গিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের এ সভাপতি বলেন, নতুন প্রজন্মের অনেকেরই হয়তো এই ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় নেই। মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমেই মোটিফগুলো আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরি।
ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে সারা বিশ্বে আমরা অনন্য উচ্চতা লাভ করেছি। বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলার সাথে বাঘের গর্জনের সংশ্লিষ্টতা রযেছে। তাছাড়া বাঘ আমাদের জাতীয় পশু।
অচিন পাখি লোকজ সংস্কৃতির অংশ যেটা আমরা লালনের লোক গানেও পেয়ে থাকি। মিয়ানমারের সাথে আমাদের সমুদ্র বিজয় হয়েছে। বিজয়ের প্রতীকের অংশ হিসেবে সমুদ্রের সাম্পান রাখা হয়েছে। ঘোড়াকে গতির প্রতীক হিসেবে রাখা হয়েছে। আজকের তরুণ সমাজ যেনো সেই গতিকে বহন করে নিয়ে যায়।
অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি চলছে। আশা করছি সবাইকে সুন্দর একটি অনুষ্ঠান উপহার দিতে পারবো।’
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর সিকদার মো. জুলকার নাইন বলেন, পয়লা বৈশাখের উৎসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশিও আশেপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটতে পারে সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তৎপর থাকবে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে।