চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

৭০ অনুচ্ছেদ থাকা না থাকায় সমস্যা কী?

সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদ থাকবে, না থাকবে না। এই বিতর্ক দীর্ঘ বছরের। বৈধতার প্রশ্নে শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়ানো এ বিষয়টি নিয়ে  স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি হাইকোর্টও। সেখানে দুই বিচারপতির বিভক্ত রায়ের পর এখন নতুন আরেকটি একক বেঞ্চে সিদ্ধান্তের জন্য পাঠাবেন প্রধান বিচারপতি।

এই অনুচ্ছেদের কারণে একজন সংসদ সদস্য দল থেকে পদত্যাগ বা সংসদে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সংবিধান অনুযায়ী তার সদস্য পদ বাতিল হয়ে যায়।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘দলের কোনও নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হয়ে কোনও ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনও নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’

৭০ অনুচ্ছেদ থাকলে কি কি সমস্যা তৈরি হবে? আর না থাকলেও বা কি সমস্যা? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সেই বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছেন আইন বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন।

চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, এই অনুচ্ছেদের প্রধান সমালোচনা হচ্ছে, যারা সাংসদ মানে আইন প্রনেতা তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থাকছে না। তারা দলের পুতুল হয়ে যাচ্ছে। ৭০ অনুচ্ছেদ করার সময় একটা বিষয় বিবেচনা ছিল যে, তখন আমাদের গণতন্ত্র ‘শিশু গণতন্ত্র’ ছিল। আর শিশুতো বোঝে না কোনটা ভুল কাজ কোনটা ঠিক। সে অনেক ভুল করে বসতে পারে। শিশু গণতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে হয়। সেই জায়গা থেকে এটা করা হয়েছিল।

‘কিন্তু শিশু তো একসময় বড় হয়, সে নিজের ভালোমন্দ বুঝতে পারে। ফলে তখন আর এই জায়গাটা দরকার হয় না। ৭০ অনুচ্ছেদ না থাকলে ক্ষমতার রাজনীতিতে সাংসদরা নানাভাবে বিকৃতির শিকার হবে। তাই বিবেচনার বিষয়টা ছিলো যতদিন না গণতন্ত্র পরিপক্ক হবে বা শক্তিশালী হবে ততদিন এই ৭০ অনুচ্ছেদ চলমান রইবে।’

শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন

হাফিজুর রহমান কার্জন যোগ করে বলেন, ‘তাছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের অতীত ইতিহাস খুব ভালো ছিল না। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেও উল্লেখিত হয়েছে পাকিস্তান আমলে কিভাবে সাংসদরা বিক্রি হয়েছে।’

তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পরে অর্ধশতক পার হয়েছে। এখন এই অনুচ্ছেদ আরেকটু সংশোধন করে সাংসদদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি রাখে। পাশ্চাত্যে কনজারভেটিভ বা লেবার পার্টি সবসময় দলের হয়ে কথা বলে না। তারা কোনো বিষয়ে বিরোধিতা জানানোর মতো যুক্তি থাকলে দলের বিপক্ষে ভোট দেয়। সেই সুযোগ বাংলাদেশেও তৈরি হতে হবে।

‘দেশের ভেতরে গণতন্ত্র রক্ষা করা ও দেশের ভেতরে স্থিতিশীলতা বড় বিষয়। অনেক সময় ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হলে সাংসদদের কেনাবেচার সুযোগ বেশি তৈরি হয়। সেটা মাথায় রেখে ৭০ অনুচ্ছেদকে একেবারে অযৌক্তিক বা উপযোগিতা নেই সেটা বলা যাবে না বলেই মন্তব্য করেন এই আইন বিশেষজ্ঞ। সঙ্গে যোগ করেন, তবে এই সময়ে ৭০ অনুচ্ছেদ যেভাবে আছে সেটা কিছু সংশোধনের দাবি রাখে। সাংসদদের আরো স্বাধীনতা দেওয়া যায় কিনা সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে।’

মিজানুর রহমান খান

সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, গণপরিষদে সবচেয়ে বেশি যে আর্টিকেল নিয়ে বিতর্ক ছিল সেটা এই ৭০ অনুচ্ছেদ। এমনকি সংবিধান পাসের আগেই অক্সফোর্ডে কনস্টিটিউশন স্কলারদের নিয়ে যে আলোচনায় কামাল হোসেন বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে গেছিলেন সেখানেও এই অনুচ্ছেদ নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। এবং তখন অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিলো, এসব সাংসদরা পরবর্তীতে নির্বাচনই করতে পারবে না। সমালোচনার মুখে সেটা প্রত্যাহার করা হয়।

দলীয় শৃঙ্খলার নামে ৭০ অনুচ্ছেদ চলমান রাখা হলেও সবসময় এর সংশোধনের পক্ষেই মত এসেছে।

তার মতে, দুটো জায়গা বাদ দিয়ে এই অনুচ্ছেদে সংশোধন আনা উচিত। এক. প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনাস্থা এবং দুই. বাজেট পাসের সময়ে। এই দুই জায়গায় সবাইকেই সমানভাবে ভোটাধিকার দেওয়া উচিত। আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্র কার্যকর করার জন্যই সেটা দরকার।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, যেসব দেশে গণতন্ত্র দুর্বল শুধু সেসব দেশেই এই ধরনের বিধান দেখা যায়। এশিয়ার সাতটি দেশে এবং সারাবিশ্বের ৪০ টি দেশে এই ব্যবস্থাটা নেই। ভারত তো কোনো ধরনের আর্টিকেল ছাড়াই প্রথম ২৫ বছর চলছে বলেই জানান মিজানুর রহমান খান।