নির্ধারিত এবং অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে চারবার বল জালে পাঠালেও প্রতিবারই অফসাইডের কারণে তা হয়েছে বাতিল। ফলে ১২০ মিনিট গোলশূন্য থাকার পর টাইব্রেকারে হয় ম্যাচের নিষ্পত্তি। ২২টি পেনাল্টি শুটআউটের মহানাটকীয় ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে লিভারপুল।
রোববার লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে হওয়া ফাইনালে চেলসিকে ১১-১০ গোলে হারিয়ে কারাবাও কাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অলরেডরা।
টাইব্রেকারের নেয়া প্রথম ১০ কিকের সবকটিকেই গোলে পরিণত করে দুই ফাইনালিস্ট। টাইব্রেকারের খানিক আগে গোলরক্ষক এডুয়ার্ড মেন্ডির পরিবর্তে কেপা আরিজাবালাগাকে নামান চেলসি কোচ থমাস টুখেল।
সাডেন ডেথে স্কোরলাইন ছিল ১০-১০। প্রতিপক্ষের কোনো গোল প্রতিহত করতে ব্যর্থ আরিসাবালাগা দলের একাদশতম শট নিয়েছিলেন। উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচের স্নায়ুর চাপ ধরে রাখতে পারেননি। তার নেয়া শট পোস্টের উপর দিয়ে চলে গেলে উল্লাসে ভাসে সালাহ-মানেরা। ১০ বছর পর কারাবাও কাপের ট্রফি স্পর্শ করে অলরেডরা।
গত বছরের আগস্টে সুপার কাপের ফাইনালে টাইব্রেকারের আগে মেন্ডির বদলে আরিজাবালাগাকে নামানোর কৌশলে সফল ছিলেন টুখেল। আরিজাবালাগা দুইটি শট করেছিলেন প্রতিহত। ভিয়ারিয়ালকে ৬-৫ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল চেলসি। এবার টুখেলের সেই কৌশল আর যাকে লাগল না।
গোটা ম্যাচে যেমন ছিল আধিপত্য বিস্তারের লড়াই, তেমনি ছিল দুই ফুটবলারদের ভেতর অতি উত্তেজনা। চেলসির খেলোয়াড়রা ফাউল করেছে ১৪টি, লিভারপুল করেছে ১০ বার।
শতকরা ৫৫ ভাগ সময় বল দখলে রেখেছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। মোট শট নিয়েছে ২০টি, যার ভেতর ৬টি লক্ষ্য বরাবর ছিল। ব্লুদের ১১টি শটের মধ্যে লক্ষ্যে ছিল ৪টি।
১২০ মিনিট চেলসির জাল কি চমৎকারভাবে আগলে রেখেছিলেন মেন্ডি। আফ্রিকান নেশন্স কাপে মিশরকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সেনেগালকে চ্যাম্পিয়ন করায় বড় ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। ফিফার ২০২১ সালের বর্ষসেরা গোলরক্ষকের পুরস্কারের পাশাপাশি তার হাতে উঠেছে আফ্রিকান নেশন্স কাপের সেরা গোলরক্ষকের খেতাব।
অথচ টুখেল এবার তার উপর আস্থাই রাখলেন না!
লিভারপুল গোলরক্ষক কাওইমহিন কেল্লেহেরও অবশ্য কোনো অংশে কম ছিলেন না। ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে ক্রিস্টিয়ান পুলিসিকের নেয়া বাঁ পায়ের শট ঠেকিয়ে তিনি জাল অক্ষত না রাখলে শুরুতেই লিভারপুল গোল হজম করতো।
৩০ মিনিটে পরপর দুইবার মেন্ডি যেভাবে বল ঠেকিয়েছেন, তা মনে রাখার মতো। ডি বক্সের বাইরে থেকে নাবি কেইতার নেয়া শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে মেন্ডি প্রতিহত করেছিলেন। ফিরতি বল পেয়ে যান গোলমুখে থাকা সাদিও মানে। তার নেয়া শটও শুয়ে থাকা অবস্থায় অবিচল মেন্ডি অনেকটা অবিশ্বাস্যভাবে ঠেকিয়ে দেন।
নয় মিনিট পর আবারো চেলসি এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। কাই হাভার্টজের পাসে বল পেয়ে পুলিসিকের নেয়া শট ঠেকান কেল্লেহের।
বিরতির পর ৪৯ মিনিটে ব্লুদের কপাল পোড়ে। ম্যাসন মাউন্টের কিক বারে লেগে ফিরে আসে। ৫৮ মিনিটে আবারো গোলবঞ্চিত হন মাউন্ট। এবার বাধা হয়ে দাঁড়ান লিভারপুল গোলরক্ষক।
৬৭ মিনিটে গোল উৎসবে মাতে লিভারপুল। তবে সেটি স্থায়ী হয়নি। জোয়েল মাতিপ হেডে গোল করলেও ভার্জিল ফন ডাইক অফসাইডে থাকায় ভিএআরের সাহায্যে ফল বাতিল করেন রেফারি।
খেলার ৭৫ মিনিটে লুইস দিয়াজের কিক প্রতিহত করে নিজের জাত চেনাতে থাকেন মেন্ডি। ৩ মিনিট পর টিমো ওয়ার্নার হেডে গোল করলেও তা অফসাইডের কারণে খারিজ হয়। তাই লিড পায়নি চেলসি।
৮৫ মিনিটে আবারো দিয়াজের শট রুখে দেন চীনের প্রাচীর হয়ে ওঠা মেন্ডি। কয়েক সেকেন্ড পর অ্যান্ড্রু রবার্টসনের প্রচেষ্টাও তিনি নস্যাৎ করে দেন। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে ফন ডাইকের হেডও তিনি বিপদমুক্ত করেন। পঞ্চম মিনিটে রোমেলু লুকাকুর সামনে নায়ক হওয়ার সুযোগ এসেছিল। তার বাঁ পায়ের শট কেল্লেহের ঠেকালে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়।
৯৮ মিনিটে ট্রেভোহ চালোবাহর বাড়ানো বল পেয়ে লুকাকু বল জালে জড়িয়েছিলেন। তবে লুকাকু অফসাইডের ফাঁদে ধরা পড়েন। ১১০ মিনিটের মাথায় হাভার্টজ গোল করলেও আবারো অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়।
এরপর টাইব্রেকারে স্নায়ুর চাপ ধরে রাখায় জয়ের স্বাদ নিয়ে মাঠ ছেড়ে ট্রফি হাতে শিরোপা জয়ে মাতে লিভারপুল।