দেশ ও জাতির সামনে অনেক অনেক স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে আসছে নতুন বছর ২০১৮। কিন্তু সেসব স্বপ্ন জানালা পেরিয়ে চ্যালেঞ্জও কম থাকছে না। বরং ২০১৭ সালের কিছু কিছু চ্যালেঞ্জগুলোর রেশ থেকে যাবে ২০১৮ সালেও। বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা, দ্রব্যমূল্য, সন্ত্রাসসহ নির্বাচন কেন্দ্রিক বিষয়গুলো কম ভোগাবে না বাংলাদেশকে।
এমন বাস্তবতায় কেমন যাবে আগামী বছর? কোন কোন দিকে দিতে হবে বাড়তি নজর? সেই বিষয়ে কথা বললেন অর্থনীতিবিদ ইব্রাহীম খালেদ।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে মূল যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি হবে সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গা নিয়ে। এটি একটি বড় সমস্যা এই জন্য যে, ১০ লাখ রোহিঙ্গা থাকার কারণে অনেকগুলো সমস্যা তৈরি হয়েছে এবং হবে। তাদের আমরা জোর করে ফেরত পাঠাতে পারবো না। ফলে সমাধানটা আন্তর্জাতিকভাবেই করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে এই ইস্যুতে আমরা অনেক সহায়তা পাচ্ছি কিন্তু সেগুলো ঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।
নির্বাচনের বছর হওয়ায় নির্বাচনও হবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ইব্রাহীম খালেদ যোগ করেন, আগামী বছর নির্বাচনের বছর সুতরাং সেটা একটা দ্বন্দ্বের জায়গায় যেতেও পারে। যেহেতু আমাদের দলগুলোর মধ্যে ৭৫ থেকে বিভাজন তৈরে হয়েছে। সেটা কাটিয়ে আমরা নতুন করে দিন শুরু করতে পারবো কিনা সেই ব্যাপারে একটা ইঙ্গিত প্রদান করতে পারবে এই নির্বাচন।
আগামী বছরে সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। সমাধানের পথ বাতলাতে গিয়ে বলেন, সেসব সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আমরা সক্ষমতা অর্জন করেছি। সেটাই আমাদের রক্ষা করে চলতে হবে ও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। রোহিঙ্গার ব্যাপারে মিয়ানবার বারবার বলছে এটা দ্বিপাক্ষিক, এটা তা নয়। আন্তর্জাতিকভাবে সহযোগিতা আরো কার্যকর করে সামনে এগোতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে ব্যাংকিং সেক্টরে যে বিশাল দুর্নীতি ঘটে গেছে সেখান থেকে বেরোতে হলে টপ লেভেলের পলিটিকাল কমিটমেন্ট দরকার।
একই ধরনের চ্যালেঞ্জগুলোর কথা বলছিলেন অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ। তিনি বলেন, আসছে বছরের চ্যালেঞ্জটা হবে রোহিঙ্গা কেন্দ্রিক। যদিও সেটা সরাসরি অর্থনৈতিক নয়, কিন্তু অর্থনীতির উপর বেশ ভালো প্রভাব থাকবে এই সমস্যার। আরেকটা মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশের কারেন্স ব্যালেন্স মাইনাসে যাচ্ছে। সেটা একটা সমস্যা তৈরি করতে পারে। ২০১৭ সালে আমদানি বেশি হয়েছে। সেটা পদ্মা সেতুর কারণে। আগামী বছরে যদি রপ্তানি বাড়াতে না পারি তাহলে বৈদেশিক মুদ্রার উপরে চাপ পড়বে। তবে গত বছর তেলের দামটা নিয়ন্ত্রণে ছিলো।
দ্রব্যমূল্যের কথা টেনে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে ২০১৭ সালে। ২০১৮তে বন্যার মতো কোনো ঘটনা না ঘটলে হয়তো চালের দাম স্থিতিশীল থাকবে বলেই মনে হয়। শেয়ার বাজারে যত উপরে যাওয়ার কথা ২০১৭ সালে ততটা গেছি। তবে আরো উন্নতি করতে চাইলে নতুন কিছু স্টক নিয়ে আসতে হবে, তাহলে এই জায়গাতে পরিবর্তন আনা সম্ভব।
নির্বাচনের চ্যালেঞ্জের কথা বলতে গিয়ে আবু আহমেদ যোগ করেন, নির্বাচন যদি সবার অংশগ্রহণমূলক হয় তাহলে অর্থনীতিতে সুবাতাস আসবে আর বৃহৎ দলকে বাদ দিয়ে হয় তাহলে আন্তর্জাতিকভাবে ততটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। জনগণ হয়তো মেনে নিবে, কিন্তু সিস্টেমেটিকভাবে এগোনো যাবে না।
অর্থনীতির আরো কিছু দিক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০১৮ তে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হবে এক্সপোর্টটা ধরে রাখতে পারবো কি না, মানে গ্রোথ রেট। ২০১৭ তে গ্রোথ রেটটা ধরে রাখতে পারলে ভালো অর্জন হবে। যদিও ২০১৭তেও আমরা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। এক্সপোর্ট গ্রোথ রেটের সঙ্গেই জিডিপি জড়িত। ডলার ভার্সেস টাকা এক্সচেঞ্জ রেটটাও আমাদের বিপক্ষে যাচ্ছে। সেটাও স্থির রাখতে পারাটা একটা চ্যালেঞ্জ হবে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি যত কমানো যায় তত ভালো। সঞ্চয়পত্র বিক্রি খোলা রাখলে সরকারের দেনা বাড়ছে।