খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের তুমুল চিৎকার ও হট্টগোলকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেছেন; বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকা দরকার।
বৃহস্পতিবার সকালে খালেদার জামিন আবেদনের শুনানিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের চিৎকার ও হট্টগোলের মধ্যে সকাল ১০টার দিগে এজলাস ছেড়ে চলে যান প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। এরপর তারা সকাল সাড়ে ১১টায় আবার এসে বিচারকাজ শুরু করেন।
সেই সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন: ‘মাই লর্ড আগের অর্ডারটা রিভিউ করুন প্লিজ। আগামী শুনানির দিন রোববার করে দিন।’
উত্তরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘অর্ডার তো হয়ে গেছে, এখন আর নতুন করে কিছু করা সম্ভব নয়।’
আদালতে থাকা বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা এসময় আবারও চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন।
তখন প্রধান বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে উদ্দেশ করে বলেন; ‘বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকা দরকার। আজ কোর্টে যে অবস্থা হল সেটা নজিরবিহীন।’
এরপর প্রধান বিচারপতি কার্যতালিকায় থাকা অন্য মামলার শুনানি শুরু করলে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা আবার চিৎকার করে বলতে থাকেন: ‘অন্য কোনো মামলা শুনানি নয়। উই ওয়ান্ট জাস্টিস। খালেদা জিয়ার জামিন চাই।’
এরপর তারা সিট থেকে সবাই দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে দিতে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এভাবেই চলেছে বিচারকাজ।
আদালতে এখনো অবস্থান করছেন খালেদা জিয়ার পক্ষে আছেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জমিরুদ্দিন সরকার, মওদুদ আহমদ, জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ অন্য আইনজীবীরা। তাদেরকে আদালত থেকে বের হতে দিচ্ছেন না বিএনপিপন্থী জুনিয়র আইনজীবীরা।
এছাড়াও আদালতে আছেন অ্যাটর্নি জেনারেল সহ আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা।
এর আগে সকালে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের চিৎকার ও হট্টগোলের মধ্যে এজলাস ছেড়ে সকাল ১০টার দিকে চলে যান প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
তার আগে সকালে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদন দিতে রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পর চিৎকার ও হট্টগোল শুরু করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
সে সময় আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করছিলেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ আগামী ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়ে জামিন শুনানির জন্য ১২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।
এরপর থেকেই তুমুল চিৎকার ও হট্টগোল করতে থাকেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরাও চিৎকার করতে থাকেন।
এসময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বলতে থাকেন; আমারা কোর্ট থেকে যাব না, কোর্ট ছাড়ব না। এভাবে প্রায় ১৫ মিনিট চিৎকার ও হট্টগোলের প্রেক্ষাপটে সকাল ১০ টায় এজলাস থেকে উঠে চলে যান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। এরপরও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালতে বসে থাকেন।
এর আগে গত ২৮ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদন চান আপিল বিভাগ।
অসুস্থতার বিষয়টি উল্লেখ করে তাকে মানবিক কারণে জামিন দিতে খালেদার আইনজীবীর আবেদনের পর ওইদিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আদালতে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।
এর আগে এই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। সে খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে গত ১৪ নভেম্বর আপিল বিভাগে আবেদন করে জামিন চান খালেদা জিয়া।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর এ মামলায় ৭ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। সে আপিলে বিচারিক আদালতের দেয়া সাজার রায় বাতিল এবং মামলা থেকে খালাস চাওয়া হয়। সেই সাথে জামিন আবেদনও করা হয়।
এর আগে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়াকে এ মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। মামলার বাকি সব আসামিকেও একই সাজা দেয়া হয় এবং ট্রাস্টের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ঘোষণা করেন আদালত।
ওই রায়ে বলা হয়, সার্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণে যা মনে হয়, প্রত্যেক আসামিই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এতে তারা সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। এ কারণে খালেদা জিয়াসহ চার আসামিকেই সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির আদেশ দেয়া হয়েছে।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এ মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে ছিলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর সাবেক এপিএস জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার এপিএস মনিরুল ইসলাম।
এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজার রায় ঘোষণার পর বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালে রয়েছেন।