শততম টেস্ট খেলার প্রহর গুনছে বাংলাদেশ। ১ থেকে ৯৯টি টেস্ট পর্যন্ত টাইগারদের বড় সাফল্য বলতে ইংল্যান্ডকে হারানো। জয় আছে আরো সাতটি, সঙ্গে দুর্দান্ত কিছু ব্যক্তিগত সাফল্য। মাঝখানে রয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। সেইসব স্মৃতি নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের এই আয়োজন।
২০০০-২০০৪
প্রথম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪০০ রান করেছিল বাংলাদেশ। এরপর প্রথম চার বছরে টাইগার ব্যাটসম্যানদের ব্যাট সেভাবে আর হাসেইনি। এই সময়ে একবারও ৪০০ রান পার করা সম্ভব হয়নি।
প্রথম চার বছরে সেরা সাফল্য বলতে মুলতান টেস্টে পাকিস্তানকে বিপাকে ফেলা। প্রথম ইনিংসে ২৮১ রানে অলআউট হয় খালেদ মাহমুদের দল। জবাবে পাকিস্তান গুটিয়ে যায় ১৭৫ রানে। পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন মোহাম্মদ রফিক। চারটি অধিনায়ক খালেদ মাহমুদের। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে করতে পারে ১৫৪ রান। এতে ২৬০ রানের লিড পায় টাইগাররা। জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সেই স্বপ্ন ভেঙে দেন ইনজামামুল হক। ১৩৮ রানে অপরাজিত থেকে দলকে ১ উইকেটের জয় এনে দেন!
নয় মাস বাদে বাংলাদেশ প্রথম ‘ড্র’ করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তাও বৃষ্টির কল্যাণে।
এই চার বছরে ৩৪ টেস্টের মধ্যে ২০টিতে ইনিংস ব্যবধানে হার। ১০০’র নিচে অলআউট হওয়ার নজির আছে পাঁচবার। চারজন ব্যাটসম্যান এক হাজার রান অতিক্রম করেন। সেই সঙ্গে বোলারদের মধ্যে একজন ৫০ উইকেট নেন। শতরানের জুটি ছিল ১৫টি।
দলগত সাফল্য ধরা না দিলেও ইতিহাসে নাম লেখান অলক কাপালি। দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে হ্যাটট্রিক করেন। ২৯ আগস্ট, ২০০৩ তারিখে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে এই কীর্তি গড়েন তিনি।
২০০৫ থেকে ২০১০
এই বছরগুলোতে বাংলাদেশ উন্নতির ছায়া দেখতে শুরু করে। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়তে থাকে। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়টিও আসে। পরের ম্যাচে নাফিস ইকবাল এবং জাভেদ ওমর বেলিম দারুণ ব্যাট করে ড্র করেন। তার সুবাদে প্রথমবারের মত টেস্ট সিরিজ জয় করে টাইগাররা।
পরের ছয় বছর টেস্ট থেকে অনেকটা দূরে সরে যায় বাংলাদেশ। ২০০৭ বিশ্বকাপ সামনে রেখে পরিকল্পনা করতে থাকে বোর্ড। টি-টুয়েন্টি দুনিয়ার সঙ্গে তালমেলানোর ব্যাপার তো ছিলই। বেশি বেশি টেস্ট খেলার তাড়া আসতে থাকে সাবেকদের কাছ থেকে। কিন্তু বিসিবি খুব একটা সায় না দেয়ায় সাদা পোশাকের আঙিনা বাংলাদেশের কাছে স্বপ্ন হতে থাকে।
এর ভেতর ২০০৯ সালে ‘দুর্বল’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জেতেন মুশফিকরা। দলটির মূল খেলোয়াড়রা সিরিজ বয়কট করলে যুবদলের খেলোয়াড়দের দিয়ে কাজ সারে ক্যারিবীয়রা।
২০১১ থেকে ২০১৭
এই সময়েও টেস্টে আবার বড় একটি বিরতি দেখে বাংলাদেশ। ২০১১ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ১৩০ রানে হারতে হয়। এরপর অক্টোবরে বাংলাদেশে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম টেস্ট ড্র হলেও দ্বিতীয় টেস্টে ২২৯ রানের বড় হার দেখতে হয়। ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষেও দুই টেস্টের সিরিজে হার।
এরপর ওয়ানডেতে কয়েকটি জয় আত্মবিশ্বাস বাড়ায় টাইগারদের। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে লঙ্কানদের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি ড্র হয়। পরের বছর চট্টগ্রামে একটি। সময়ের সঙ্গে মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল এবং সাকিব আল হাসানের ডাবল সেঞ্চুরির দেখা মেলে। ব্যাটে-বলে সমানতালে আলো ছড়াতে থাকেন সাকিব। চলে যান বিশ্বসেরাদের কাতারে।
২০১৪ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পাশাপাশি ১০ উইকেট নেন সাকিব! টেস্ট ক্রিকেটের ১৪০ বছরের ইতিহাসে এমন অর্জন আছে মাত্র দুজনের। সেই দুজনও এমন, ক্রিকেট ইতিহাস যাদের নামে শ্রদ্ধাবনত হয়ে ওঠে। একজন ইয়ান বোথাম, অন্যজন ইমরান খান।
সোহাগ গাজীর রেকর্ডটাও গর্ব করার মতো। টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ২০১৩ সালে শতক করার পর হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেট দখল করেন। সোহাগের এই কীর্তি ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ১০০ উইকেট মোহাম্মদ রফিকের। সাকিব আল হাসান অবশ্য কিছুদিন আগে রফিকের এই রেকর্ড অতিক্রম করেছেন। সম্প্রতি ইংল্যান্ড সিরিজে ইতিহাসে ঢুকে পড়েন তরুণ অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। অভিষেকের পর প্রথম দুই টেস্টের চার ইনিংসে ১৯ উইকেট নিয়ে অনন্য অর্জনের খাতায় নাম লেখান এই অফস্পিনার। তার নায়কোচিত বোলিংয়ের কল্যাণেই আসে ঐতিহাসিক মুহূর্ত, ইংরেজদের হারাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
টেস্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রানের মালিক তামিম ইকবাল। তার সংগ্রহ ৩৫৪৬ রান। ৩৩৪৮ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে সাকিব। শতকের দিক থেকেও তামিম সেরা, ৮টি। ৬টি আছে মোহাম্মদ আশরাফুলের। ৪টি সাকিবের, ৫টি মুশফিকের। বোলারদের মধ্যে সবার উপরে সাকিব আল হাসান। ৪৮ ম্যাচে তার উইকেট ১৭০টি। ৩৩ ম্যাচ খেলে ১০০ উইকেটের মালিক সাবেক স্পিনার মোহাম্মদ রফিক। একবার করে দশ কিংবা তার চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন তিনজন- মেহেদী হাসান মিরাজ, সাকিব আল হাসান এবং এনামুল হক জুনিয়র।