চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভের অন্যতম কারিগর শেখ মণি

ছাত্রজীবন থেকেই শেখ মণি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্র রাজনীতি করার সময়ে তিনি ছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাণের স্পন্দন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে তিনি বারংবার অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন।

৬০ এর দশকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি শুরু করেন শেখ মণি। তখন আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের কারণে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। আইয়ুব-মোনায়েম খান তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে অন্যতম বড় শত্রু বিবেচনা করতেন।

আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের ফলে রাজনীতিতে বড় ধরনের আঘাত আসে। অর্থাৎ ১৯৬০ থেকে ১৯৬৩ সাল এই তিন বছরের মধ্যে আড়াই বছরই প্রকাশ্য রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। তাই দলকে শক্তিশালী করতে গোপন রাজনীতির বিকল্প ছিল না। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তিনি গোপন রাজনীতি শুরু করেন।

শেখ ফজলুল হক মণি ছিলেন মেধাবী ও সাহসী। সেই সময়ের বক্র রাজনীতির মধ্যেও তিনি আইয়ুব খানের মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন ভাগ্নে হিসেবে নয়, ষাটের দশকের গোড়া থেকেই শেখ ফজলুল হক মণি নিজের মেধা ও অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতা বলে দেশের ছাত্র ও যুব সমাজের কাছে সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলেন।

১৯৬০ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের দুই বার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি গ্রেপ্তার হন এবং ছয় মাস কারাভোগ করেন।

উত্তাল সেই আন্দোলন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা স্মৃতি কথায় বলেন, “মনে পড়ে ১৯৬২ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। মণি ভাই এই বাড়ি থেকে নির্দেশ নিয়ে যেতেন, পরামর্শ নিতেন। ১৯৬২ সালে আব্বা গ্রেফতার হন। তখনকার কথা মনে পড়ে খুব।”

ষাটের দশকের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি আন্দোলনে শেখ মণি ভূমিকা রেখেছেন। বাংলার কুলাঙ্গার মোনায়েম খানের হাত থেকে সার্টিফিকেট না নেওয়ার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

১৯৬৪ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর আবদুল মোনায়েম খানের নিকট থেকে সনদপত্র গ্রহণে তিনি অস্বীকৃতি জানান এবং সরকারের গণবিরোধী শিক্ষানীতির প্রতিবাদে সমাবর্তন বর্জন আন্দোলন শুরু করেন।

যারা মোনায়েমের হাত থেকে উপাধিপত্র নেওয়ার জন্য সভাস্থলে হাজির হয়েছিলেন, তারা উল্টো শেখ মণির নেতৃত্বে সভাস্থল বয়কট করেন এবং মোনায়েম খানকে প্রকাশ্যে বর্জন করেন; উপাধিপত্র না নিয়েই তারা ফিরে যান। এই আন্দোলন ব্যাপক রূপ ধারণ করে। প্রবল ছাত্র বিক্ষোভে সমাবর্তন পণ্ড হয়ে যায়। ক্ষুব্ধ সরকার প্রতিশোধ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত ছাত্রকে গ্রেফতার করে। প্রায় দেড়শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে মোনায়েম খান ক্ষমতার দম্ভ দেখান।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার ডিগ্রি প্রত্যাহার করে নেয়। পরবর্তী সময়ে তিনি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে জয়লাভ করে ডিগ্রি ফিরে পান।

১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হন এবং দেড় বছর কারাভোগ করেন।

শেখ মণির প্রধান কাজ হয়ে পড়ল ছাত্রলীগকে পুনরুজ্জীবিত করা। যেহেতু রাজনীতি সংকটে, তাই শেখ মণি ছাত্রলীগকে ভিন্ন নামে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেন।

১৯৪৭ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের অসারতা উপলব্ধি করে যুক্ত বাংলার দিকে ঝুঁকেছিলেন এবং ১৯৪৮ সাল থেকে একটি পৃথক রাষ্ট্র সৃষ্টির সাধনায় ছিলেন। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কাঠামোতেই হয়তো একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ব্রতী ছিলেন। কিন্তু সিভিল ও মিলিটারির উৎপাত ও অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে সেই ১৯৬১ সালেই তিনি বাংলাকে মুক্ত করতে ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট গঠন করেন। কাজটি গোপনে শুরু করিয়েছিলেন ভাগ্নে মণিকে দিয়ে।

এই ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্টকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্টে রূপান্তরিত করেন। ১৯৬১ সালেই তিনি মনি সিংহ ও খোকা রায়ের সাহায্য চান স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টির আকাক্সক্ষায়। বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্টের গোপন কার্যক্রম ১৯৬১ সাল থেকে শেখ মণির নেতৃত্বে চলছিল। ১৯৭০ সালে তিনি চারজন যুব নেতাকে একই মঞ্চে এনে বাংলাদেশ স্বাধীন করার প্রয়াসে বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্টকে নামকরণ করেন বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স বা বিএলএফ। ১৯৭১ সালে ভারতের বুকে তার অনুসারীরা এটাকে মুজিব বাহিনী নামকরণ করেন।

১৯৬২ সালে বিএলএফের কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা আন্দোলনকে চাঙ্গা করেন এবং নিজের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণিকে তার সামগ্রিক দায়িত্ব অর্পণ করেন এবং শিক্ষা আন্দোলনের ছদ্মাবরণে স্বাধীনতার আন্দোলন চলমান রাখেন।

১৯৬৬ সালের ৭ জুন বিএলএফ ও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের যৌথ প্রয়াস ও ছাত্র-শ্রমিকদের কর্মকাণ্ডের ফলে ৬ দফা প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যায়।

শেখ মণির রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম বড় কৃতিত্ব ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ৬ দফার পক্ষে হরতাল সফল করে তোলা। ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ছয় দফার পক্ষে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন দেশব্যাপী হরতাল ডাকা হয়। জনমত আদায় ও আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসাবে ‘আমাদের বাঁচার দাবি-ছয় দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক পুস্তিকাও প্রণীত হয়। তখন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী-আব্দুর রাজ্জাক। শেখ মণি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের পথসভা ও গেইটসভা করতে বললেন এবং সমস্ত ঢাকাকে ১১টা ভাগে ভাগ করে দায়িত্ব বণ্টন করে দিলেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে মুনিরুল ইসলাম, আলী আহমেদ (চুনকা), গোলাম মূর্শীদ (এসসিএ), আনসার সাহেব, চকবাজারের রিয়াজুদ্দিন ও নাজিরা বাজারের সুলতান সাহেব, ফজলুর রহমান, নিজাম সাহেব পুরাতন ঢাকার। নতুন ঢাকার কর্মীদের পরিচালনার জন্য আনোয়ার চৌধুরী, ময়েজউদ্দিন আহমেদ, নুরুল ইসলাম। মিসেস আমেনা বেগম ও গাজী গোলাম মোস্তফাকে সবকিছু দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিলেন। ছাত্রদের ১১টা গ্রুপের সার্বিক নেতৃত্বের ভার দিলেন মিজান চৌধুরীকে। তেজগাঁও, আদমজী পোস্তগোলাসহ শ্রমিকদের তিনি সংগঠিত করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু তখন জেলে। ৭ জুন হরতাল সফল না হলে ছয় দফা ইস্যুটি মুখ থুবড়ে পড়বে। রাতদিন পরিশ্রম করেও রাজনৈতিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর সমর্থন পেলেন না শেখ মণি। শেখ মণি ১৯৭২ সালের ৭ জুন ‘ছেষট্টির সাত জুন: প্রস্তুতি পর্ব’ কলামে উল্লেখ করেছেন,“আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, শ্রমিক সংগঠনের উপর নির্ভর না করে সরাসরি শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ করাই শ্রেয়। তথাকথিত রাজনৈতিক নেতাদের দুয়ারে ধর্ণা না দিয়ে সরাসরি জনতার সাথে সংযোগ স্থাপন করাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ।” কারণ তিনি জানতেন, সাধারণ শ্রমিকরা শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য জানমাল কোরবান করতে প্রস্তুত। উল্লিখিত কলামে তিনি প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেছেন,“মানিক মামার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি বললেন, ইত্তেফাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও তিনি পিছপা হবেন না। শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য তিনি সবকিছু করবেন। তিনি আরো আশ্বাস দিলেন যে, হরতালের কর্মসূচি যাতে করে সব কাগজে ছাপা হয় তারজন্য তিনি প্রভাব বিস্তার করবেন।”

বঙ্গবন্ধু জেলে থাকলেও তার বিশ্বাস ছিল একমাত্র তাঁর মণি-ই হরতাল সফল করে তুলবেন। বঙ্গবন্ধু সেভাবেই তাকে প্রস্তুত করেছিলেন। শেখ মণি বলেছেন,“…জেলখানা থেকে বঙ্গবন্ধু জানতে চেয়েছেন হরতালের প্রস্তুতি কতদূর কী হলো সেটি সম্পর্কে। গভীর রাতে পেছনের দেওয়াল টপকিয়ে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গেলাম। মামিকে বিস্তারিতভাবে সবকিছু জানিয়ে বললাম রাতের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর কাছে খবর পৌঁছে দেওয়ার জন্য। হরতাল হবেই।” (‘ছেষট্টির সাত জুন: প্রস্তুতি পর্ব’, দূরবীণে দূরদর্শী)

বলাবাহুল্য, জাতির পিতার ছয় দফা ছিল বাংলার কৃষক, শ্রমিক, মজুর, মধ্যবিত্ত তথা গোটা বাঙালির মুক্তির সনদ। বাঙালি জাতির স্বকীয় মহিমায় আত্মপ্রকাশ আর আত্মনির্ভশীলতা অর্জনের চাবিকাঠি ‘ছয় দফা’। শোষকের হাত থেকে শোষিতের অধিকার ছিনিয়ে আনারও হাতিয়ার। ছয় দফার উপর ভিত্তি করেই আমরা আমাদের স্বাধীনতা নামক লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলাম।

ওই হরতালে পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে টঙ্গী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, শফিক, শামসুল হকসহ কমপক্ষে ১১ জন বাঙালি শহিদ হয়েছেন। ইতিহাসবিদরা বলেন, ৭ জুনের হরতাল সফল না হলে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম পিছিয়ে যেত। ৭ জুনের হরতালকে সফল করতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিকদের সংগঠিত করেছিলেন শেখ ফজলুল হক মণি। ফলে ১৯৬৮ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া হলেও শেখ মণিকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘ছয় দফা প্রস্তাব জনগণের সামনে পেশ করার পর থেকে সরকার আমার ওপর অত্যাচার চালাইয়া যাচ্ছে। …আমার ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণি ও আরও অনেকে ১৯৬৬ সাল থেকে জেলে আছে এবং সবার বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে।’ (কারাগারের রোজনামচা)

তিনি যেহেতু ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করছিলেন; সেই সঙ্গে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকদের হরতালের পক্ষে তিনিই সংগঠিত করেছিলেন। এই হরতাল সফল না হলে বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম হয়ত পিছিয়ে যেত। সচেতন ছাত্রসমাজের নেতৃত্বাধীন ভাষা আন্দোলনের পর ছয় দফা আন্দোলনই ছিল পাকিস্তানি শাসনামলে বাঙালির প্রথম রাজনৈতিক আন্দোলন, যে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন পূর্ববাংলার মেহনতি জনগণ ও শ্রমিক সমাজ।

১৯৬৬ সালে ছয়দফা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের দায়ে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয় এবং মোনায়েম খান শেখ মণিকে কারারুদ্ধ করেন। এ সময় বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা দায়ের করা হয়।

তিনি মুক্তি পান ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর। শেখ মণি তার ৩৬ বছরের ক্ষুদ্র জীবনে সাড়ে পাঁচ বছরই জেলে কাটিয়েছেন।

তিনি ছিলেন ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনমুখী কর্মসূচির অন্যতম প্রণেতা। ছয় দফার ওপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই নির্বাচন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভের অন্যতম কারিগরও বলা হয় শেখ মণিকে। নির্বাচনের ইশতেহার ও কর্মসূচিতে ছয় দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনসহ বাঙালির অধিকার বাস্তবায়নের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন তিনি।

১৯৭০ সালের নির্বাচন পাকিস্তানের ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ নির্বাচন। বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ আন্দোলনের ফসল ছিল এই নির্বাচন। এই নির্বাচন অখণ্ড পাকিস্তানের একমাত্র ও শেষ জাতীয় নির্বাচন। এটা ছিল প্রথম সরাসরি জাতীয় নির্বাচন, যাতে পাকিস্তানের দুই অংশের প্রাপ্তবয়স্করা প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পেরেছিলেন। আর একাধিক দল মুক্ত পরিবেশের এ নির্বাচনে অংশ নেয়। যে নির্বাচন জনপ্রতিনিধিদের একটি সরকার গঠনের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পেছনে অন্যতম বড় নিয়ামক ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পর দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় পাকিস্তানে গণতন্ত্র ছিল নির্বাসিত, মিলিটারি বুটের নিচে চাপা পড়া ছিল গণতান্ত্রিক চেতনা। যদিও ১৯৪৭-৫৭ পর্যন্ত নামকাওয়াস্তে এক ধরনের গণতন্ত্র ছিল। কিন্তু ততদিনে সারা দেশে একটি জাতীয় সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়নি। ক্ষমতাসীন পাঞ্জাবি আমলা ও নাক উঁচু সেনাবাহিনী একটি নির্বাচন দেয়নি। প্রকৃত একটি জাতীয় নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অদ্ভুত এক ধারা চলছিল পাকিস্তানে। যার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন দুই অংশের রাজনীতিবিদ ও সচেতন মানুষ। আর এ কারণেই আইয়ুব খানের পতনের পর জনগণের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষাকে আর অবজ্ঞা করতে পারেননি ইয়াহিয়া খান। বলা যায়, ইয়াহিয়া খান বাধ্য হন একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল বাঙালি জাতির। ১৯৫২ সালেই ভাষার প্রশ্নে রক্তদান। এরপর ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগকে ধরাশায়ী করে বাঙালিরা প্রাদেশিক সরকার গঠনের সুযোগ পেলেও সেখানে ক্ষমতার মারপ্যাঁচে বাঙালিকে ক্ষমতাহীন করা হয়েছে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের মন্ত্রিসভা দুই মাসও টিকতে পারেনি। ১৯৫৪ সালের ৩১ মে দেশদ্রোহের অভিযোগে এ মন্ত্রিসভা বাতিল করে ৯২ ক ধারা জারি করা হয়েছিল। এরপর আইয়ুব খানের টানা ১০ বছরের সামরিক শাসন। আইয়ুব খানের পতন ঘটে অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানে, যাতে পাকিস্তানের দুই অংশের নাগরিকরাই সমানভাবে অংশগ্রহণ করে। সেনাবাহিনীর প্রবল চাপে ১৯৭০ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। পরে ১৯৭০ সালের ৩১ মার্চ এলএফও (লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার) ঘোষণা করা হয়, যার ভিত্তিতে পাকিস্তানে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয় ১৯৭০ সালের ৭ অক্টোবর। পরে নির্বাচনের তারিখ দুই মাস পিছিয়ে নতুন তারিখ নির্ধারিত হয় ৭ ডিসেম্বর ১৯৭০। তবে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বিধ্বস্ত হওয়ায় উপকূলীয় নয়টি আসনে নির্বাচন হয় ১৭ জানুয়ারি ১৯৭১।

নির্বাচনের আগে এলএফও নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চললেও শেখ মুজিবুর রহমান দেখছিলেন নতুন সম্ভাবনা। তিনি জানতেন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালির অধিকারের দাবিকে দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়। আর সে কারণেই ওই নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা সামনে রেখে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন। আওয়ামী লীগ অত্যন্ত কার্যকরভাবে প্রচার করে এ নির্বাচন ছয় দফা বাস্তবায়নে এক ধরনের গণভোট। আর সে কারণেই বাঙালি জাতির উচিত এ নির্বাচনে ছয় দফার পক্ষে মত দেয়া।

১৯৭০ সালের প্রথম জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পুরো পাকিস্তানেই ছিল উৎসবের আমেজ। সরকার বেতার ও টেলিভিশনে জাতীয় নেতাদের প্রাক-নির্বাচনী ভাষণ সম্প্রচারের ব্যবস্থা করে। বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সুযোগ গ্রহণ করেন, যাতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করেন তার নির্বাচনী ইশতেহার। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের রেকর্ডকৃত ভাষণটি সম্প্রচার করা হয় ১৯৭০ সালের ২৮ অক্টোবর। এ ইশতেহার ভাষণটি ছিল ৩০ মিনিটের। ইশতেহার ভাষণটি এখন জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ইউটিউবে পাওয়া যায়। যতদূর জানা যায়, এ ভাষণের খসড়া তৈরি করেছিলেন ড. কামাল হোসেন, রেহমান সোবহান, তাজউদ্দীন আহমদ ও শেখ ফজলুল হক মণি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ইশতেহারের মূল বিষয়গুলো ছিল:

১. ভূমি ব্যবস্থার সংস্কার। ইশতেহারে প্রকৃত কৃষকের স্বার্থে গোটা ভূমি ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস করার অঙ্গীকার করেন শেখ মুজিবুর রহমান। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, পুরো পাকিস্তানের বিপুল পরিমাণ সম্পদ মাত্র ২৪টি পরিবারের হাতে জমা।

২. যমুনা সেতুর ওপর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেতু নির্মাণ। একই সঙ্গে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলী ও পাঞ্জাবে সিন্ধু নদীর পর সেতু নির্মাণ।

৩. প্রতি ইউনিয়নে একটি করে পল্লী চিকিত্সা কেন্দ্র নির্মাণ ও থানা সদরে হাসপাতাল স্থাপন করা।

৪. জাতীয় উৎপাদনের ন্যূনতম ৪ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা।

৫. কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন না করা।

৬. স্বাধীন ও জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ।

৭. ফারাক্কা বাঁধজনিত সমস্যার ন্যায়সংগত সমাধান।

৮. ছয় দফার ভিত্তিতে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন।

৯. জাতীয়করণের মাধ্যমে ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলোকে জনগণের মালিকানায় নিয়ে আসা।

১০. উপজাতীয় এলাকায় উন্নয়নের ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা।

১১. জাতীয় জীবনের সঙ্গে মোহাজেরদের একাত্ম করা।

১২. ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ। যার ফলে গ্রামীণ জনগণকে অর্থনীতিতে আলাদা করে অবদান রাখার সুযোগ তৈরি করা।

১৩. পাট ব্যবসার জাতীয়করণ।

১৪. জমিদারি প্রথার বিলুপ্তকরণ।

১৫. কৃষির আধুনিকীকরণ।

১৬. ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার।

১৭. বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করা।

১৮. গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বিদ্যুত্ উত্পাদন ও বিতরণের ব্যবস্থা করা।

১৯. স্থল ও নৌবন্দরের উন্নয়ন, সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা।

২০. শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা, শ্রম আইন সংস্কার করা।

২১. রাজবন্দিদের মুক্তি।

২২. সামরিক বাহিনীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা। পেশাদার এ বাহিনীকে জাতীয় নিরাপত্তায় নিয়োজিত রাখা ইত্যাদি।

বলাবাহুল্য, সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী শেখ মণি, সত্তরের নির্বাচনী কর্মসূচিতে অর্ন্তভুক্ত করেন, পাকিস্তানের প্রতিটি প্রদেশকে ৬ দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন, ব্যাংক-বিমা ও ভারী শিল্প, বৈদেশিক বাণিজ্য, পাট ও তুলা ব্যবসা জাতীয়করণ, পূর্ব পাকিস্তানের জায়গিরদারি, জমিদারি ও সর্দারি প্রথার উচ্ছেদ, ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির খাজনা মওকুফ, শ্রমিকদের ভারী শিল্পের শতকরা ২৫ ভাগ শেয়ার ও বাস্তুহারাদের পুনর্বাসন ইত্যাদি। (স্মরণীয়-বরণীয়, ব্যক্তিত্ব, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়-পৃ: ৪৬১)।

পুরো ইশতেহার ঘোষণার সময় প্রতিটি প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিরি উল্লেখ করেন, আগে অনেকেই উল্লেখ করেছেন, ছয় দফার কারণে বা অন্য কোনো কারণে ইসলাম বিপন্ন। এ ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতেও আহ্বান জানান শেখ মুজিবুর রহমান।

খুলনার সংবেদনশীল পড়ুয়া ছাত্রলীগ কর্মী সৈয়দ মনোয়ার আলী তার স্মৃতিভাষ্য ‘১৯৭১: অবরুদ্ধ দেশে রুদ্ধশ্বাস জীবন’ গ্রন্থে লিখেছেন, নির্বাচনী প্রচারে বঙ্গবন্ধু এসেছেন খুলনায়, উঠেছেন ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের বাসায়। ছয়-সাতজন ছাত্রলীগ কর্মী মিলে তাঁরা দেখা করতে গেছেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। সৈয়দ মনোয়ার আলী লিখেছেন, ‘মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হবে না ভেবে আমরা লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় নির্বাচন যে অর্থহীন ও বিপর্যয়ের কারণ হবে, সে বিষয়ে একটা আর্টিকেল লিখে নিয়ে এসেছিলাম। বললাম, ভাই, আপনি খুবই ব্যস্ত, সেজন্য আমরা আমাদের বক্তব্য লিখে এনেছি, আপনি সুযোগ মতো পড়ে দেখবেন।…তিনি কাগজটা হাতে নিয়ে দু-এক মিনিট চোখের সামনে ধরে রাখলেন, তারপর যত্নের সাথে আমার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন তোদের কাছে রেখে দে, নির্বাচনের পর পড়িস।’

তারপর বঙ্গবন্ধু বিস্মিত করে তাদের বলেছিলেন, ‘যা, কাজ কর। আমার শতভাগ সিট চাই। তোদের কী ধারণা-পাব না, এখনো হাতির চোখ দিয়ে নিজেদের শক্তি মাপিস!’

বঙ্গবন্ধু জেনেছিলেন, বুঝেছিলেন বাংলার মানুষকে এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালির অধিকার অর্জনের ভিত্তি নির্মাণ করেছিলেন গণতান্ত্রিক, শাসনতান্ত্রিক এবং অভূতপূর্বভাবে। ইতিহাসে যার কোনো তুলনা নেই।

যেহেতু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচন করে অবিশ্বাস্যভাবে পূর্ব পাকিস্তানের দুটি আসন ব্যতীত, একটি ময়মনসিংহে মুসলিম লীগের নূরুল আমীনের এবং অপরটি পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের, বলতে গেলে প্রায় শতভাগ আসনেই বিজয়ী হয়েছিল, তাই গণতান্ত্রিকভাবে পাকিস্তানের রাজনীতির সব সমীকরণ পাল্টে গেল রাতারাতি।

১৯৭০ সালের নির্বাচনের পটভূমি যদি বিবেচনা করি তাহলে দেখা যাবে- ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থতা, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন, ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ইত্যাদি ইস্যুগুলো আওয়ামী লীগের জয়লাভের পেছনে মুল ভূমিকা পালন করেছিল।

৩০ মিনিটের ইশতেহার ভাষণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক একজন শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত দূরদর্শী দৃষ্টিতে জনগণের সামনে একটি যথাযথ নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরেছেন। যাতে ছিল একটি আধুনিক, অগ্রগামী ও স্বানির্ভর রাষ্ট্রের রূপরেখা। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে যা ছিল অনন্য।

১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ জয়লাভের পর বাঙালি অর্জন করল আপন ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অর্জন করলেন গোটা জাতির পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক ক্ষমতা। এর অপরিসীম তাৎপর্য প্রকাশ পেল ৭ মার্চের ভাষণে, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণায় এবং ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকার গঠনে, গণতান্ত্রিক বৈধতার ভিত্তিতে পরিচালিত জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে, মুক্তির যুদ্ধে।

৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ জয়ী হলেও পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করলে দেশমাতৃকার টানে বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন শেখ মণি। একাত্তরের ২৫ মার্চে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের পর কী করতে হবে এ চিন্তায় সবাই যখন দিশেহারা, তখন প্রেরণার বাতিঘর হয়ে জাতির সামনে হাজির হয়েছিলেন শেখ মণি।

বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত স্নেহভাজন ভাগ্নে হিসেবে নয়, ষাটের দশকের গোড়া থেকেই শেখ মণি নিজ প্রতিভা, মেধা-মনন ও সাংগঠনিক ক্ষমতাবলে দেশের ছাত্র-যুব সমাজের কাছে সমুজ্জল হয়ে উঠেছিলেন। পরবর্তীতে ‘৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখে এবং মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসেবে তার যোগ্যতার নজির স্থাপন করে দেশপ্রেমের উদাহরণ তুলে ধরেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, শোষেণমুক্ত সমাজ অর্থাৎ সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা অর্থাৎ সকল ধর্মের মানুষের স্ব স্ব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের অধিকার তথা জাতীয় চার মূলনীতিকে সামনে রেখে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমাচেন, শিক্ষা সম্প্রসারণ, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তালো এবং যুবসমাজের ন্যায্য অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মণি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে দেশের সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের মধ্য থেকে স্বাধীনতা ও প্রগতিকামী যুবক ও যুব মহিলাদের ঐক্যবদ্ধ করে তাদের রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে একটি সুশৃংখল সংগঠন গড়ে তালোই ছিল যুবলীগের মাধ্যমে তার উদ্দেশ্য।

শেখ ফজলুল হক মণি ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সাংবাদিক, কলাম লেখক, ছোট গল্পকার, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, তাত্ত্বিক দার্শনিক ও ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দ্রষ্টা। শেখ মণি দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবতেন। বঙ্গবন্ধুর ভাবনাই তার মধ্যে প্রোথিত হয়েছিল। জাতির পিতার প্রধানতম রাজনৈতিক শিষ্যর প্রতি জানাই অতল শ্রদ্ধা।

তথ্যসূত্র
* দূরবীণে দূরদর্শী, ফকির আব্দুর রাজ্জাক এবং বিমল কর সম্পাদিত
* দেশ সমাজ রাজনীতি: শেখ মণির ভাবনা, ফকির আব্দুর রাজ্জাক এবং বিমল কর সম্পাদিত
* স্মরণীয় বরণীয় ব্যক্তিত্ব, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
* শেখ মণি – এম এ মুফাজ্জল
* সাংবাদিক মণি ভাই – রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ
* শেখ ফজলুল হক মণি, এক অনন্য রাজনীতির প্রতিকৃতি ঃ ফকির আব্দুর রাজ্জাক
* বাংলার বাণীর বিভিন্ন সম্পাদকীয়

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)